২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রবাসে মারা যাচ্ছেন অনেক শ্রমিক

প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন জরুরি

-

বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীরা বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান একটু ভালো থাকার আশায়। আপনজন যাতে কিছুটা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পেতে পারেন সেই আকাক্সক্ষা থেকে তারা পরিবার, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকায় দেশে আমরা নানান উন্নয়নকাজ করি। কিন্তু যে প্রবাসী শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন তাকে ন্যূনতম প্রাপ্যটুকু দেই না। এমনকি মারা গেলে তার মৃত্যুর আসল কারণটি পর্যন্ত নিশ্চিত করার দায় আমরা বোধ করি না।
এটি সত্য, মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাওয়ার সরকারি প্রচারণা মানুষের ভাগ্য বদলায়নি। টিসিবির ট্রাকের পেছনে সুদীর্ঘ মানুষের সারি তার প্রমাণ। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর দরকার আছে। তবে আমাদের দায়িত্ব যাদের বাইরে পাঠাচ্ছি তারা যেন আধুনিককালের দাসে পরিণত না হয়। তাদের সাথে যেন কুকুর-বিড়ালের মতো আচরণ করা না হয়। কিন্তু আমরা বিদেশে মৃত শ্রমিকের জীবনের দাম শোধ করছি খুবই সামান্য মূল্যে। বিদেশে মারা যাওয়া শ্রমিকের লাশ দেশে আনার পর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড লাশ দাফনের জন্য পরিবারকে দেয় ৩৫ হাজার টাকা। আর পরে দেয়া হয় তিন লাখ টাকার আর্থিক অনুদান। ব্যাস, এতে আমাদের দায়-দায়িত্ব শেষ। দেশের একজন নাগরিক কী কারণে মারা গেল জানার দরকার মনে করি না।
বিদেশে বা দেশে শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনো পুলিশি তদন্ত হয় না। শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ সনদে যা লেখা থাকে, তা নিয়ে পরিবারের আপত্তি থাকলেও কিছু করার থাকে না। আমাদের জাতীয় পর্যায়ে এসব বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনাও হয় না।
সম্প্রতি প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু বিষয়ে গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। তাতে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে এবং করণীয় বিষয়েও বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে আছে- স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক যে মৃত্যুই হোক সংশ্লিষ্ট দেশ যাতে প্রতিটি লাশের ময়নাতদন্ত করে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও আছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করে শ্রমিকের মৃত্যু সনদের ফরম্যাট তৈরি করা, বিষয়টিকে অভিবাসন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা, নারী শ্রমিক পাঠানোর চুক্তিতে এ কথা উল্লেখ করা যে, শ্রমিকের মৃত্যুর দায় সংশ্লিষ্ট দেশের মালিককে নিতে হবে- এমন বিষয়গুলো।
আমাদের ধারণা, বাংলাদেশ এখনো এমন শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারেনি যাতে নারীদের বিদেশে শ্রমিকের কাজে পাঠানো বন্ধ করতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত এক দশকের মধ্যে এখন সর্বনিম্নে। রেমিট্যান্স প্রবাহ দিন দিন কেবল কমছে। আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনার ঠেক দিয়েও বাড়ানো যায়নি; বরং আরো কমবে বলে আভাস দিয়েছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। অথচ দেশের মোট জিডিপির ৭ শতাংশের মতো আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৬০ শতাংশেরও বেশি আসে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ থেকে। জ্বালানি খাতে সর্বকালের সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করার পরও এখন বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমছে। কর্মসংস্থানে ব্যর্থতার বড় প্রমাণ তো এটিই যে, তরুণ শ্রমিকরা বিদেশ যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি মোটেও স্বস্তির জায়গায় নেই। সুতরাং আরো বহুদিন আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে ‘কাজের বুয়া’ সরবরাহ করতেই হবে। তবে তারা যাতে খুন হয়ে না যান সেটি নিশ্চিত করা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement