২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নিউজপ্রিন্টের দাম বৃদ্ধি : সঙ্কটে সংবাদপত্র

সরকারের নীতি সহায়তা দরকার

-

সংবাদপত্রের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধিতে এই শিল্প এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এমন সময় এর দাম আকাশ ছুঁয়েছে যখন বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যুদস্ত। একই কারণে সংবাদপত্রের আয় কমে অর্ধেক হয়ে গেছে কিংবা আরো বেশি কমেছে। আগে থেকে এ শিল্প সরকারের নানা নীতিগত বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার। এ অবস্থায় এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা দুরূহ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, গত বছরের অক্টোবরের শেষে টন-প্রতি নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল ৫৩ হাজার টাকা। ২৩ নভেম্বর এর দাম হয়েছে টন-প্রতি ৯৮ হাজার টাকা। বছরের শেষে ও নতুন বছরের শুরুতে কাগজের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। টেক্সট বুক বোর্ডের বিপুল বই ছাপানো ছাড়াও শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সব শিক্ষার্থীকে নতুন বই ও কাগজ কিনতে হয়। একই সময় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ডায়েরি ছাপানো ও ক্যালেন্ডার তৈরির কাজ হয়। জানা যায়, এ অবস্থায় নিউজপ্রিন্টের দাম টন-প্রতি এক লাখ ২০ হাজারে উঠতে পারে বা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বছর শেষে কাগজের উচ্চ চাহিদা সবসময় থাকে। তবে এভাবে এর দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। এবার ডলার সঙ্কটের কারণে কাগজ আমদানির পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত কাগজের কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন না মিলাররা। আরো কথা রয়েছে- দেশে ২৬০টি পেপার মিল স্থাপিত হয়েছিল। সরকারের দুর্বল নীতির কারণে এগুলোর মধ্যে এখন মাত্র ৭৫টি উৎপাদনে রয়েছে। তাই উচ্চ চাহিদার বিপরীতে কাগজের জোগান বাড়ানো যাচ্ছে না। আর এর প্রধান শিকার হয়ে যাচ্ছে সংবাদপত্র।
ছাপার মেশিনে প্রতিদিন কাগজ ছাড়াও কালি ও প্লেট ব্যবহার হয়। এ দিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্যের দাম সীমাহীন বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় একটি পত্রিকার উৎপাদন ব্যয় গেছে অনেক বেড়ে। পত্রিকার কলেবর কমিয়ে খরচ কমানোর চেষ্টা করছে কিছু কিছু পত্রিকা। আগে থেকে অনেক পত্রিকা তার সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতনভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছিল। বেতন কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন বকেয়া পড়েছে। পত্রিকাগুলো ছাপার কাগজ কিনবে, না বেতন দেবে- এ দোটানার মধ্যে পড়েছে। করোনার ধকলের মধ্যে পড়ে সব সংবাদপ্রতিষ্ঠান ধুঁকছে। সেই দুরবস্থা তার পর থেকে খুব সামান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। এ সঙ্কটকে আরো গভীর করছে সরকারের নীতি। সংবাদপত্রের ওপর ৩০ শতাংশ করপোরেট কর, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ভ্যাট আর বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর আরোপ করে রাখা হয়েছে। এর উপর রয়েছে সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ। পত্রিকার প্রচার সংখ্যা নির্ধারণ করে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা সংস্থা। প্রচার সংখ্যার যে হিসাব তারা দিয়ে থাকে তার সাথে বাস্তবতার মিল নেই। এমন পত্রিকার প্রচার লাখের ওপর তারা দেখায় যেগুলো সামান্য কিছু কপি ছাপানো হয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে বিলি করার জন্য। আবার বিপুল প্রচার সংখ্যার পত্রিকা এ তালিকায় থাকে সবার নিচে। এর ফলে পাঠকপ্রিয় পত্রিকা উপযুক্ত বিজ্ঞাপন দর পায় না। অন্য দিকে একেবারে চলে না এমন পত্রিকা পেয়ে যাচ্ছে বাড়তি দাম। তার ওপর রয়েছে সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টনের বৈষম্য। এ অনিয়ম দূর করা সরকারের জন্য কঠিন না হলেও, বছরের পর বছর তা চলছে। এ নিয়ে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও সরকার নির্বিকার।
সংবাদপত্রের সঙ্কট নিয়ে মালিকদের সংগঠন নোয়াব নানাভাবে সরকারের নীতি সহায়তা চেয়ে আসছে। এ পর্যন্ত সরকার এ শিল্পকে সহায়তা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি, কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। সংবাদপত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই সরকারকে এমন নির্লিপ্ত অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement