২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই

কর্মপরিবেশ নিরাপদ করতে হবে

-

দেশে কল-কারখানায় প্রায়ই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে বহু শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটছে, অনেকে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। এত সব মানুষের প্রাণহানি সত্ত্বেও কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে মালিকপক্ষের গাফিলতি-অবহেলার অবসান হয়নি। বাস্তবে আমাদের দেশের মালিকপক্ষের চিন্তা শুধু মুনাফার ঘেরাটোপে বন্দী। এমন বিবেকবর্জিত অমানবিক চিন্তাকাঠামোর জন্যই কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে কোনো ধরনের গরজ নেই মালিকদের।
একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের আগস্ট মাসে নারায়ণগঞ্জের রপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিক প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় একটি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি একাধিক উপকমিটি গঠন করে কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আছে কি না, থাকলে কার্যকর কি না, অবকাঠামো ঠিক আছে কি না, অন্যান্য দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, এসব বিষয় দেখতে ১০৮টি দল গঠন করেছে।
সরকারি তথ্যমতে, সারা দেশে এখন ৪৫ হাজার শিল্প-কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ হাজার কারখানা হলো খাদ্য উৎপাদন খাতের। দ্বিতীয় সর্বাধিক তিন হাজার ৩২৬টি আছে বস্ত্র খাতে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাতের দুই হাজার ৭০৪টি কারখানা। বিডার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাচ বছরে সারা দেশে যেসব খাতের কারখানায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে, গত নভেম্বর থেকে সেগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তৈরী পোশাকসহ রফতানিমুখী শিল্পকে বাদ দিয়ে সারা দেশে ৩২ খাতের ৪৫ হাজার কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে পাচ হাজার কারখানা পরিদর্শন করা হবে। পরে ধাপে ধাপে অন্য কারখানাগুলোও পরিদর্শনের আওতায় আনা হবে। সংশ্লিষ্ট সত্র মতে, সারা দেশে শিল্প-কারখানায় কর্মপরিবেশ ঠিক আছে কি না, তা পরিদর্শন শুরু করেছে সরকার গঠিত ওই দলগুলো। ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আটটি বিভাগীয় শহরে ৮৬৩টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। বিডা বলছে, প্রতিটি দল পরিদর্শনের পর সংশ্লিষ্ট কারখানার ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরবে। প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে জাতীয় কমিটির কাছে। তারপর জাতীয় কমিটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যাপক সংস্কারকাজ করা হয়েছে। সে কারণে এবারের পরিদর্শনে পোশাক খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
তৈরী পোশাক খাত বাদ দিয়ে অন্য সব খাতের কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার গঠিত দলগুলো বিভিন্ন জেলায় কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে নানাবিধ অব্যবস্থাপনা খুজে পাচ্ছে। পরিদর্শনের কথা শুনে অনেক মালিক কারখানা বন্ধ করে চলে যাচ্ছেন। পরিদর্শনের সময় উঠে এসেছে, বেশির ভাগ কারখানার নকশার অনুমোদন নেই। কারখানা ভবনের অনুমোদিত নকশার সাথে বিদ্যমান ভবনের মিল নেই। যেনতেনভাবে ভবন তৈরি করা হয়েছে। বেশির ভাগ কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। কারখানায় আগুন লাগার পর কর্মীদের বের হওয়ার পথ রাখা হয়নি। এসব কারখানায় আগুন লাগলে কর্মীদের প্রাণহানির আশঙ্কাই বেশি। অবস্থা এত করুণ যে, অনেক কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্রও নেই। কোনো কোনো কারখানার ট্রেড লাইসেন্সও পাওয়া যায়নি।
আমাদেরও প্রত্যাশা, কারখানার কর্মপরিবেশ নিরাপদ করতে সরকার গঠিত দলগুলো শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বর্তমান কার্যক্রম জাতীয় স্বার্থে নিরপেক্ষভাবে দ্রুত শেষ করবে। এর আলোকে প্রণীত জাতীয় কমিটির তৈরি করা প্রতিবেদন এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে সরকার। তবে হতাশার কথা হলো- দেশে অতীতে বেশির ভাগ সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে সবার মতো আমরাও মনে করি, শত প্রতিকলতার মুখেও কল-কারখানাগুলোতে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনতে এ কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement