৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পোশাক শিল্প নেতার শঙ্কা

-

একটি দেশের আত্মনির্ভরশীলতা প্রধানত তার অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে। সাধারণত কোনো দেশের উৎপাদন ও ভোগ যদি ভালো পর্যায়ে থাকে, যদি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যদ্রব্য নিজেরা উৎপাদন করে, তাহলে তাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যায়। জনগণের কাছে পণ্য কেনার জন্য যথেষ্ট অর্থ এবং নিজেদের দেশের অভ্যন্তর থেকে সেসব আঞ্জাম দেয়ার সামর্থ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, একটি মাত্র পণ্য প্রধানত আমরা রফতানি করি। সেটা হচ্ছে তৈরী পোশাক। আমাদের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এ খাত থেকে। এ বাজারের জন্য আমরা বড় দাগে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি মানবাধিকার প্রশ্নে দেশটি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সম্পর্কের অবনতি হলে আমাদের পোশাক শিল্পের রফতানিতে তার প্রভাব পড়তে পারে। পোশাক শিল্পের এক নেতার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সেই আশঙ্কার কথা জানা গেছে।
বুধবার অর্থনীতিবিষয়ক সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র্যাব ও বাহিনীটির সাবেক-বর্তমান উচ্চপদস্থ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাংলাদেশে গুম খুন ও হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে বহু দিন ধরে আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা প্রতিকার চাচ্ছিলেন। বছরের পর বছর তারা এ নিয়ে দেনদরবার করে সরকারের কাছ থেকে সাড়া পাননি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো রীতিমতো প্রতি বছর পরিসংখ্যান প্রকাশ করে গেছে। এগুলো নিয়ে বর্তমান সরকার কোনো ধরনের তদন্ত করার প্রয়োজন বোধ করেনি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জোট এ নিয়ে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিবেদন দাখিল করে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ট্রেজারি বিভাগ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ফারুক হাসান ইআরএফের সংলাপে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় বাজার। আমরা কোনো বাজার হারাতে চাই না। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পোশাক শিল্প যেমন আমাদের সর্ববৃহৎ রফতানি পণ্য তেমনি যুক্তরাষ্ট্র পণ্যটির সর্ববৃহৎ আমদানিকারক। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে আমরা তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি তৈরী পোশাক রফতানি করেছি। শুরু থেকে আমাদের তৈরী পোশাকের বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমরা ওই বাজারে তাদের কাছ থেকে সহজ সুবিধা পেয়েছি। তারা আমাদের বিভিন্ন সময় প্রণোদনা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। আমাদের যেকোনো ধরনের দুর্বলতায় তাদের কাছে এর বাজার চলে যেতে পারে। আমাদের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলে সেটা পূরণ করার জন্য তৈরি রয়েছে ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী প্রবাসী। প্রবাসী আয় অর্জনের দিক দিয়েও মধ্যপ্রাচ্যের পর আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।
এ ছাড়া আমাদের তৈরী পোশাকের বাজার যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব মানবাধিকার বাস্তবায়নে এ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরে চলে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে সেটা যদি আমরা গুরুত্বের সাথে মোকাবেলা না করি তাহলে এ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণ করতে পারে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা ছিল। এসব নিষেধাজ্ঞা প্রমাণ করেছে, বিভিন্ন সময় দেশের মানুষের আনা গুম খুনের অভিযোগ আমরা সময় মতো গুরুত্ব দেইনি। এখন এর এমন এক পরিণতি যে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক সভ্য দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তৈরী পোশাক শিল্পের এ নেতার সাথে আরো অনেক ব্যবসায়ী শঙ্কিত। ওইসব দেশে যত প্রবাসী আছে তারাও কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে। আমাদের প্রয়োজন মানবাধিকার রক্ষায় যে প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিকভাবে আমরা দিয়েছি সেটা পূরণে দ্রুততার সাথে অগ্রসর হওয়া যাতে করে এ নিষেধাজ্ঞা-পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো খারাপ হয়ে না যায়। সাথে সাথে রক্ষা পায় আমাদের পোশাক শিল্পও।


আরো সংবাদ



premium cement