২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লবণ চাষের মৌসুম আসন্ন

সরকারের নজরদারি দরকার

-

লবণ মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নিত্যপণ্য। ভাতের মতো প্রতি বেলায় লবণেরও প্রয়োজন হয়। লবণ ছাড়া ভাত খাওয়ার কোনো উপকরণই তৈরি হয় না। এমনকি মিষ্টান্ন তৈরিতেও এটি লাগে। সেই লবণ অনেক সময় দুর্মূল্য হয়ে পড়ে। এ মুহূর্তে দেশে সব ধরনের পণ্যে বিশেষ করে কাঁচাবাজারে পণ্যমূল্যে আগুন জ্বলছে। পরিবহন ধর্মঘটে তা বাড়তি ইন্ধন দিচ্ছে। ফলে মধ্য ও নি¤œবিত্ত মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তারা দিশেহারা বোধ করছেন। এ পরিস্থিতিতে দেশে লবণের দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। বাড়ার লক্ষণও নেই। কিন্তু এখানে বাজার ব্যবস্থাপনার একটি বিষয় জড়িত। লবণের দাম কমে গেলে চাষিদের ক্ষতি হয়। তারা উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে না পারলে লবণ চাষ করবেন কেন? গত কয়েক বছর ধরে চাষিরা লবণের দাম পাননি। তাদের উৎপাদন খরচের চেয়েও দাম নিচে নেমে গিয়েছিল। এর কারণ হলো, বিদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে লবণ আমদানি। শিল্প-কারখানায় নানা কাজে সোডিয়াম সালফেট লাগে। সেটি আমদানি করতে হয়। কিন্তু সোডিয়াম সালফেটের পাশাপাশি অসাধু শিল্পপতিরা সোডিয়াম ক্লোরাইডও আমদানি করেন বেআইনিভাবে। সোডিয়াম ক্লোরাইডই হলো ভোজ্যলবণ।
এ কারণে বাজারে চাষিদের উৎপাদিত লবণের দাম পড়ে যায়। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ আমদানি দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এবং চাষিরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। সোডিয়াম সালফেট নামের রাসায়নিক পদার্থটি তরল আকারে আমদানির নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে সোডিয়াম সালফেট আমদানির ওপর শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে শিল্পপতিরা আর অবৈধভাবে লবণ আমদানি করতে পারবেন না। এসব পদক্ষেপের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে এবং চাষিরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। লবণ চাষে তাদের আগ্রহও বেড়েছে। আমাদের চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, এবারের মৌসুমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের প্রায় ৩০ হাজার চাষি লবণ উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১৫ নভেম্বর থেকে পরের বছরের ১৫ মে পর্যন্ত লবণ চাষের মৌসুম।
প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় হয় ২৪৭ থেকে ২৫০ টাকা। এ মুহূর্তে মাঠপর্যায়ে একজন চাষি যে দাম পাচ্ছেন তা কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। নয়া দিগন্তের খবরে একজন চাষির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ওই চাষি প্রতি মণ লবণের দাম পেয়েছেন ধোলাই খরচসহ ২৭০-২৮০ টাকা। এক মণ লবণ উৎপাদন করে চাষির হাতে যদি মাত্র ২০-৩০ টাকা আসে তাহলে শেষ পর্যন্ত লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলার অবস্থা হয় কি না ভেবে দেখার বিষয়।
খবরে জানা যায়, এরই মধ্যে দেশে গত বছর উৎপাদিত প্রায় আড়াই লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে। এর আগের বছরও মজুদ থেকে গিয়েছিল সাড়ে তিন লাখ টনের মতো। আর অবৈধভাবে আমদানি করা আনুমানিক আট থেকে ৯ লাখ টন লবণ তো ছিলই। এবার যদি মোট চাহিদার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদিত হয় তাহলে তা আবারো দাম কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তবে অবৈধ আমদানি যদি সত্যিই রোধ করা যায় তাহলে দরপতন ঘটবে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে সরকারে নজরদারি অব্যাহত রাখা জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement