২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাসযোগ্যতায় পেছনের সারিতে ঢাকা

মহাপ্রকল্প কোনো কল্যাণে আসেনি

-

রাজধানী ঢাকা অতীতে কেমন ছিল কিংবা ভবিষ্যতে কেমন হবে এর চেয়ে প্রতিদিন কিভাবে এ শহরের মানুষকে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের মোহ দেখানো হচ্ছে। এজন্য চালানো হচ্ছে মহাকর্মযজ্ঞ। অবকাঠামো উন্নয়নের মহাকার্যক্রমে বিগত এক দশকে শহরবাসীর দিশেহারা অবস্থা। এর ফলে রাস্তায় চলাচলে যে বিপুল দুর্ভোগ মানুষকে পোহাতে হচ্ছিল সেটা থেকে তারা রেহাই পেল কেবল করোনা আগমনের পর, যখন জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শহর ছেড়ে চলে গেল। এখন বৃহৎ প্রকল্পগুলো চালু হওয়ার মুলা মানুষের সামনে ঝুলছে। এগুলো চালু হলে শহরের চলাচল সহজ হয়ে যাওয়ার রঙিন স্বপ্ন রয়েছে। সত্য কথা হলো, এগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে মানুষ টানা বছরের পর বছর দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
ঢাকার বাসযোগ্যতা তুলনামূলক কোন অবস্থায় রয়েছে সেটা বোঝা যায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে ‘বিশ্ব বসবাসযোগ্যতা সূচক-২০২১’ নামে ১৪০ শহরের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ মার্চ মাসব্যাপী সময়ে তারা তথ্য সংগ্রহ করে। শহরের বসবাসযোগ্যতা পরিমাপ করার জন্য স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো- এই পাঁচটি বিষয়ে বিবেচনা করা হয়। পাঁচটি সূচকের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও অবকাঠমো এ দুটো সূচকে ঢাকা আগের মান ধরে রেখেছে। বাকি তিনটি সূচকে আগের মান হারিয়েছে। ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শেষের দিক থেকে চতুর্থ অর্থাৎ প্রকৃত অবস্থান ১৩৭। আমাদের ঢাকা এগিয়ে আছে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক, নাইজেরিয়ার লাগোস ও পাপুয়ানিউগিনির পোর্ট মোরেসবি হতে।
সূচকটি করোনা মহামারীর মধ্যে তৈরি করা। এতে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবায় গতবারের ২৯ দশমিক দুই পয়েন্ট থেকে কমে নম্বর প্রায় অর্ধেক ১৬ দশমিক ৭ হয়ে গেছে। সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিষয়ে গতবারের ৪০ দশমিক ৪ থেকে কমে ৩০ দশমিক ৮ হয়েছে। শিক্ষায় ৪১ দশমিক ৭ থেকে কমে ৩৩ দশমিক ৩ হয়েছে। ঠিক এ ধরনের মার্কস পরিমাপের বিষয়টি আমাদের সেভাবে বুঝে নাও আসতে পারে। তবে সাদা চোখে আমরা দেখি, করোনার সময় মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা অনেক কঠিন হয়েছে। করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগীরাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাননি। অন্য দিকে ঢাকায় মানুষের চিত্তবিনোদনের সুযোগ এমনিতেই সীমিত। করোনার মধ্যে সেটা আরো সঙ্কুচিত হয়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা যাচ্ছে শিক্ষায়। আমরা করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার একমাত্র সমাধান হিসেবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছি। এতে করে প্রাক-প্রাইমারি থেকে একেবারে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত ছাত্র শিক্ষক সবারই ত্রাহি অবস্থা। বাসাবাড়িতে বছরের বেশি সময় সবাই যেন বন্দী হয়ে গেছেন। অনেকের নানা মানসিক সমস্যাও তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন ঘরবন্দী অবস্থায় থেকে।
গত এক দশকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা খুব কমই ছিল। সরকার ঢাকার উন্নয়ন নিয়ে বড় বড় পরিকল্পনাও নিয়েছে। একটি বসবাস উপযোগী শহর গড়ার জন্য পুরো শহরকে ঢেলে সাজানোর জন্য ডেটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি যোগাযোগ সমস্যা সমাধানে অনেক বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্য হলো, আমরা বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর ধারে-কাছেও যেতে পারিনি। সূচকটির অবকাঠামো বিষয়ে আমাদের নম্বর গত বছরের ২৬ দশমিক ৮ এবারো রয়েছে। বাস্তবে ভারী বৃষ্টিপাতে এখনো প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। অন্য দিকে করোনা পরিস্থিতির পর শহরের আগের অবস্থানে ফিরে গেলে যানজট কোন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায় তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধি হওয়া প্রয়োজন সমস্যা কোথায়। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকার উন্নয়নে সরকারও সক্রিয়। তার পরেও কেন আমরা সবার পেছনে পড়ে থাকবো?


আরো সংবাদ



premium cement