২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ

প্রান্তজনের কষ্ট লাঘব করুন

-

২০২০ সালের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রান্তিক গোষ্ঠী করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টিকে থাকার তাগিদে তারা ব্যয়সঙ্কোচন নীতি অব্যাহত রেখেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, তাদের খাবার গ্রহণ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে হয়েছে। মহামারীকালে এসব পরিবারের লোকজন প্রথমে প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়েছে, তারপর কমিয়েছে আমিষ খাওয়ার পরিমাণ। এই দুর্যোগে তাদের বাড়তি ব্যয় ও ঋণ পরিশোধে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা দরকার হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সাহায্য করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
করোনাকালে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাজুক চিত্র পাওয়া যায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের একটি জরিপে। গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটি ওই জরিপ প্রকাশ করে। জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর প্রায় ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ অতিমারীর ফলে আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল; যার ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশই পুনরুদ্ধার পায়নি। এসব পরিবার ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ থেকে বের হতে তাদের এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের মার্চের চেয়ে এবার ফেব্রুয়ারিতে মানুষের আয় কমেছে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। বিপরীতে ব্যয় কমেছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। আর সঞ্চয় কমেছে ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। মহামারীর প্রভাবে ৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ পরিবার খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে চরের ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, হাওরের ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, উপকূলের ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, বস্তির ৭৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, দলিত ৬৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, আদিবাসী ৮৯ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ, অভিবাসী ৭৮ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ রয়েছেন।
স্বাস্থ্য এবং সামাজিকের তুলনায় করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব জনমানসে গভীরভাবে পড়েছে। আয় হ্রাস এবং ব্যয় থেকে সমাজে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষজন পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি। এর মধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তারা আর্থিকভাবে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র পরিবার ঋণের জালে আটকে পড়েছে। তারা সঞ্চয় হারাচ্ছে। প্রথাগতভাবে বাংলাদেশে যারা বিপন্ন মানুষ, করোনা তাদের জীবনে বয়ে এনেছে ভয়াবহ আর্থিক দুর্যোগ। যারা বিপন্ন ছিলেন না, তাদের অনেকে এই ধাক্কাতে অসহায়ত্বের পর্যায়ে চলে গেছেন। প্রান্তজনের আর্থিক নিরাপত্তায় আসন্ন জাতীয় বাজেটে, সুস্পষ্ট আর্থিক বরাদ্দ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে এবং এর বাইরেও করতে হবে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের সব দরিদ্রকে আর্থিক নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে।
স্মরণযোগ্য যে, বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলায় শুধু ছোট ছোট প্রণোদনা নয়, দুই থেকে তিন বছরের জাতীয় সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিতে হবে। পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি নতুন ‘সামাজিক সংহতি তহবিল’ গঠন করতে হবে। এটি গঠন করা এখন সময়ের দাবি। এ তহবিলের অনুদান কোথা থেকে আসছে, কোথায় ব্যয় হচ্ছে; সবাইকে জানতে দিতে হবে। সব তথ্য উন্মুক্ত থাকবে। এটি পরিচালনায় স্থানীয় সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরো শক্তিশালীভাবে যুক্ত করতে হবে। কিন্তু এ কথা না বললেই নয়, আমাদের দেশে সরকারি প্রশাসনের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থার ঘাটতি অস্বীকার করার নয়। এ বিষয়ে সরকারের হয় সচেতনতার অভাব আছে; কিংবা সচেতনভাবে তা আড়াল করা হয়। সরকারের এই অস্বীকার করার মানসিকতা না বদলালে মানুষের দুঃখ-কষ্ট আরো দীর্ঘায়িত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় সব পক্ষকে একীভূত করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোনোর বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement