২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তিন শ’ খাল ভরাট হয়ে গেছে

কৃষিকে বিপর্যয়মুক্ত করুন

-

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার প্রায় আড়াই শ’ গ্রামে শ’তিনেক খাল ভরাট হয়ে গেছে। এতে কৃষিকাজে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ সেচের পানির অভাব তীব্র হয়ে উঠেছে। নয়া দিগন্তের সংবাদদাতার পাঠানো খবরে এ কথা জানা গেছে। সাথে ছাপানো ছবিটিতে দেখা যায়, কলাপাড়া শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খাল পরিণত হয়েছে আবর্জনা ভর্তি ভাগাড়ে। অতএব, এলাকার পরিবেশ দূষণ কত চরমে, তা সহজেই বোঝা যায়।
প্রায় দেড় যুগ যাবৎ ফ্রি স্টাইলে খাল দখল ও ভরাটের তাণ্ডবে কৃষিকাজের পাশাপাশি মিঠা পানির সঙ্কটের উল্লেখ করে আলোচ্য প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রচণ্ড খরায় খাল-বিল-নদী-নালা শুকিয়ে যায় এবং জনজীবনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কারণ ঘটে। এ অবস্থায় অনেক এলাকাতে রবিশস্য মোটেও আবাদ করা যাচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে আমন ধানের চাষাবাদ পর্যন্ত সমস্যায় পড়ছে। পানি নিষ্কাশন করা যায় না বলে কৃষিকাজ কঠিন হয়ে পড়ে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, বহু খাল এখন জবরদখলদারের কবলে। আস্ত খাল ভরাট করে সেখানে গজিয়ে উঠছে ঘরবাড়ি, দোকান, মাছের ঘের প্রভৃতি। কোথাও কোথাও বাঁধ দিয়ে খালের বিভিন্ন অংশকে পরিণত করা হয়েছে পুকুরে। এমন প্রেক্ষাপটে দুটি পৌর অঞ্চলে এবং ১২টি ইউনিয়নে কৃষিকাজ হচ্ছে বিপর্যস্ত। এখন শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে সেচ সঙ্কট আর বর্ষার দিনে জলাবদ্ধতা। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কয়েক কোটি টাকার সবজি ও ফসল। সরকারের যতই পরিবর্তন হোক, দখলবাজির পরিবর্তন হয় না। অব্যাহত দখলের পরিণামে প্রশস্ত খাল হয়ে গেছে সরু নর্দমা। তার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষ্ক্রিয়। অপর দিকে, নদ-নদীতে নৌ পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ দখল-দূষণ-ভরাটে এগুলো অত্যধিক সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বহু মেহনতি মানুষ এখন বেকার। এলাকার ব্যবসাবাণিজ্যে দেখা যাচ্ছে অচলাবস্থা। ভূগর্ভের পানির স্তর উদ্বেগজনক মাত্রায় নেমে গেছে। খাল-বিল ছাড়াও অনেক নদী শুকিয়ে গিয়ে হাহাকার সৃষ্টি করেছে। এসব নদ-নদীর পাড়ে গভীর নলকূপ বসিয়েও যথেষ্ট পানি পাওয়া যায় না। পানি সঙ্কটের দৃষ্টান্ত রূপ উল্লেখ করা হয়েছে, মহিপুর ইউনিয়নে একটি খাল চৈত্রেই শুকিয়ে গেছে। ফলে এলাকায় রবিশস্য আর চাষ করা যায় না। বর্তমানে সব শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে ও বিবর্ণ হয়ে গেছে। গবাদিপশুর জন্য পানি পাওয়াও কঠিন। প্রধানত ভরাট হয়ে যাওয়ায়, নদী-নালা ও খাল-বিল শুকাতে শুরু করে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই।
অথচ নিকট অতীতেও এ জনপদের বাসিন্দারা খাল দিয়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করত। নৌকার ছিল ব্যাপক ব্যবহার। নৌকায় খরচ হতো কম আর এটা ছিল সহজলভ্য। বর্তমানে এলাকার বড় বড় নদীও শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে জীবিকাসঙ্কটের সম্মুখীন মাঝি ও জেলেরা। কৃষিজীবীসহ লাখ লাখ মানুষের দুর্গতির কথা বলাই বাহুল্য। এখন এলাকাবাসীকে বেশি ব্যয় করে সড়কপথে পণ্য আনানেয়া করতে হয়। এতে বাজারে পণ্যের দাম থাকে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলাপাড়ার চিংড়িয়া খাল পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা মোচনের একমাত্র পথ। অথচ এটা এখন আবর্জনায় ভাগাড়তুল্য। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সুযোগ পেয়ে খালটি দখল করে নিচ্ছেন। কোনো কোনো ভূমিদস্যু ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে খালকে নিজেদের বলে দাবি করছেন। এমনকি অনেকে খালের জায়গা নিজের নামে রেকর্ডভুক্ত করে নিয়েছেন। কৃষকরা জানান, বালি পড়ে ভরে গেলে পুনঃখননকৃত খালের পানি দিয়ে চলতি মৌসুমে বোরো ধান ও তরমুজের চাষ করা যেত। উপজেলার কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ‘দখলকৃত খাল উদ্ধার প্রক্রিয়া চলছে। ভরাটকৃত খাল খনন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’
খনন, দূষণমুক্তকরণ, দখলদারদের বিতাড়নসহ সর্ববিধ উপায়ে খালগুলো উদ্ধার করে কৃষিকে বিপর্যস্ত দশা থেকে মুক্ত করাই সময়ের দাবি।


আরো সংবাদ



premium cement