০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি

স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হতে হবে

-

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হারে ফের দ্রুত ঊর্ধ্বগতি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, গত ১০ মার্চ থেকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরে দৈনিক সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে সন্দেহযুক্ত ভাইরাস বহনকারীদের পরীক্ষাও বাড়িয়েছে। কিছু দিন আগ পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার পরীক্ষা করা হতো। কয়েক দিন ধরে ২৫ থেকে ২৭ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখে গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘যে হারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আলটিমেটলি কুলাবে না’।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। ২০২০ সালের জুন থেকে আগস্ট, এই তিন মাস করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। মাঝে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময় সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত জুন-জুলাইয়ের আলামত দেখা যাচ্ছে। গত ১০ মার্চ থেকে দিনে সহস্রাধিক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর পর থেকে দৈনিক শনাক্ত, শনাক্তের হার ও মৃত্যু প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষার চাপও বাড়ছে। তিন মাসের বেশি সময় পরে গত ১৮ মার্চ দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার আবার ১০ শতাংশ ছাড়ায়। গত শুক্রবার রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অবস্থা এমন হয়েছে, করোনার জন্য নির্ধারিত রাজধানীর ৯টি সরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এখন ‘ঠাঁই নাই’ অবস্থা। শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। তিন সপ্তাহ আগে এসব হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার ৩৫ শতাংশই ফাঁকা ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৭০ শতাংশ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে, দেশের হাসপাতালগুলোতে গত শুক্রবার প্রায় ৯৪ শতাংশ আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল। কোভিড শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ শয্যাতেও রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণ শয্যার ৭৭ শতাংশে রোগী ভর্তি ছিল। করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২২ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি পাঁচটি হাসপাতালকে ফের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় এসব হাসপাতালকে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে করোনা রোগীর সংখ্যা কমে আসায় অন্য রোগীদের সেবা চালু করা হয়েছিল।
করোনা একটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ। ফলে এই ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর একটি উপায় হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে করোনা আমলে না নেয়ার মানসিকতা তীব্র হওয়ায় বাড়ছে কোভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণ, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাসকে পাত্তা না দেয়ার মানসিকতাই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে চলাচল করতে প্ররোচিত করছে গণমানুষকে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে; করোনা আক্রান্তের হার ফের হু হু করে বাড়ছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিকাকার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং কঠোরতার সাথে সবাইকে মানতে বাধ্য করতে হবে। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরার মাধ্যমেই সবাই অধিকতর নিরাপদ থাকতে পারি। কিছু মানুষের জন্য দেশের সবাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে দেয়া যায় না। এটি মেনে নেয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের উচিত যারা করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা। একই সাথে, এর টিকা কার্যক্রম গতিশীল করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement