২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্কুল শিক্ষক আছেন, শিক্ষার্থী নেই

‘সবার জন্য শিক্ষা’!

-

সব সম্ভবের বাংলাদেশ। এ দেশটিতে সড়ক থাকলে সেতু নেই, আবার সেতু থাকলেও হয়তো সড়ক থাকে না। তদুপরি কোথাও কোথাও সড়কের সমান্তরালে সেতু তৈরি করার অবিশ্বাস্য ঘটনাও ঘটেছে। তেমনি কোথাওবা ছাত্রছাত্রী থাকলেও শিক্ষক বড়জোর একজন আর স্কুল ঘর হয়তো নেই। অন্য দিকে শিক্ষার্থীবিহীন শিক্ষালয় আর চারজন শিক্ষকের কথা জানা গেল এবার। এটা পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার চলমান ঘটনা।
এ প্রসঙ্গে একটি দৈনিক পত্রিকা লিখেছে, বিদ্যালয়ে নেই ছাত্রছাত্রী। নেই লাইব্রেরি। বেঞ্চ-টেবিল-চেয়ার কিংবা খেলার মাঠও নেই। আছে নামমাত্র একটি টিনশেড ঘর। সেটিকে দেখিয়েই বেতনভাতাসহ সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন চারজন শিক্ষক।’ এ চিত্র পিরোজপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ‘জালিয়াতি’ করে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ পরিচালনা কমিটির স্বয়ং সভাপতির। এ দিকে প্রধান শিক্ষিকার সূত্রে জানা যায়, স্কুলের জমিদাতা ও সভাপতির সাথে দ্বন্দ্বের কারণ হলো, শিক্ষকদের বকেয়া বাবদ প্রাপ্ত টাকা নিয়ে মতভেদ। প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য, স্কুলের জন্য চেয়ার-টেবিল বানানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সূত্রে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মকর্তা এ ব্যাপারে জানেন।
জানা যায়, ২৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির নিজস্ব জমি না থাকায় এক ব্যক্তির বাড়ির পাশের চার কাঠা পরিমাণ স্থানে নামমাত্র ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ২০০৭ সালের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতির দরুন এর শিক্ষাদান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে ২০১৪ সালে সরকারি করা হয় স্কুলটি। এবার স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজশে স্কুলের দায়িত্বশীলদের অগোচরে এবং ‘প্রতারণা’মূলকভাবে চারজনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের সাথে স্কুল পরিচালনা কমিটির শুরু হলো সঙ্ঘাত। পাশের একটি স্থানে নতুন করে একই নামে আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ দিকে কমিটি বনাম শিক্ষক দ্বন্দ্বের বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয় দু’টি। নবপ্রতিষ্ঠিত টিনশেড বিদ্যালয়ের ছয়টি ক্লাসে ৩৬ জন ছাত্রছাত্রী থাকার দাবি করা হলেও আসলে পাঁচজনও নেই বলে স্থানীয় লোকজন উল্লেখ করেছেন। দু’বছর ধরে ক্লাস ছাড়াই ‘শিক্ষক’রা বেতন পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অভিযোগটি লিখিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে তদন্ত করে।’
এটা বাংলাদেশে একেবারে নতুন কিংবা অবিশ্বাস্য কোনো নজির নয়। খোঁজ নিলে এমন ঘটনার আরো সন্ধান পাওয়া যাবে। দীর্ঘকাল ধরে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও দলীয়করণ প্রভৃতি চলে আসছে। তার পরিণামে এ-জাতীয় অঘটন ঘটছে। এতে কিছু লোকের সঙ্কীর্ণ স্বার্থসিদ্ধি সম্ভব হলেও জাতির ভবিষ্যৎ নড়বড়ে হয়ে যায়। ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ হিসেবে অভিহিত শিক্ষকরা সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও নীতিবানÑ এক কথায় ‘আদর্শ’ হওয়া উচিত। স্কুলকে বলা হয় ‘সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র’। অন্যায় ও দুর্নীতি কখনো মানুষকে প্রকৃত অর্থে সভ্য করতে পারে না। সর্বোপরি, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ স্লোগানের মতো ‘সবার জন্য শিক্ষা’র স্লোগান অতীত থেকে দীর্ঘ দিন এ দেশে শোনা গেলেও এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি আজো। এর প্রধান কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্ববোধের ঘাটতি। অসৎ লোকের কখনো দায়িত্ববোধ থাকে না। তাই এ দেশে সুষ্ঠু পরিকল্পনা, নিষ্ঠা ও সমন্বয় নেই শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এ অবস্থায় অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটলেও জাতির কাঠামো গড়ে তোলা যায়নি।
আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে আলোচ্য স্কুলটির বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল