গত ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে বৃহত্তর খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ এবং সংশ্লিষ্ট অতি বর্ষণ-জলোচ্ছ্বাস-ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এবার একটি জাতীয় দৈনিক সচিত্র প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ খুলনার কয়রার মতো কোনো কোনো জনপদে ‘আমফান’ ঝড়ের পর আড়াই মাসেও মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এলাকার শত শত পরিবার আজো আশ্রয়কেন্দ্রে উদ্বাস্তুর মানবেতর জীবনে নানান দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
কিছু দিন আগের ঝড়বৃষ্টিতে বিশেষত কয়রা অঞ্চলের জনগণের বিপর্যস্ত জীবন এবং নানাবিধ কষ্ট ও দুর্ভোগের চিত্র আলোচ্য প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। সেখানে ‘আমফান’ ঝড়ে বাঁধ ভেঙে জনপদ প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল রোজার মাসের শেষদিকে। তখন কোথাও কোথাও মানুষকে এক হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছিল।
কপোতাক্ষ বিধৌত কয়রা উপজেলার দুই পাশে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অংশ। উপকূলীয় এই উপজেলাটি জেলা সদর খুলনা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে করোনা মহামারীর তাণ্ডব খুব বেশি না হলেও গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে চার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা। এর আগে ২০০৭ সালে ‘সিডর’, ২০০৯ সালে ‘আইলা’র আঘাতে বিপন্ন ও বিধ্বস্ত হয়েছিল কয়রার মতো অরণ্যবর্তী ও উপকূলীয় জনপদ। দেশের প্রায় সব এলাকার মতো কয়রাতেও জনজীবিকার বড় অবলম্বন কৃষি। তবে ‘আমফান’ নামের ঘূর্ণিঝড়ে কৃষি উৎপাদন এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যে, আজো এর ধকল সইতে হচ্ছে। কয়রা সদরের প্রায় সব বাড়িই ঝড়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে। এখনো এসব বাড়ির বড় বড় গাছপালা ও ফলদ বৃক্ষ বিবর্ণ হয়ে মারা যাচ্ছে। তদুপরি, পুকুর ও নিচু এলাকায় জমে থাকা কালচে পানি বিষম দুর্গন্ধময়। বিলের কয়েক হাজার বিঘা জমিতে ধান চাষের উপায় নেই। অথচ দেশে আমন ধানের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। কয়রা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঝড়ে বাঁধ ভেঙে দেড় লাখ বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৮ হাজার। তিন হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতির পাশাপাশি চার হাজার হেক্টর মাছের ঘের পানিতে ডুবে যায়। কয়রা উপজেলার অনেক এলাকায় বেশির ভাগ মানুষই সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু এখন ‘বন বন্ধ’, তাই তাদের আয়রোজগার বন্ধ। মাছের প্রজনন বাড়াতে জুলাই-আগস্ট মাসে সুন্দরবনে মাছ ধরার অনুমতি দেয়া হয় না।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়রার কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে ঠাসাঠাসি করে বাস করছেন। যেমন, হরিণখোলা প্রাইমারি স্কুলের তেতলা ভবনে এমন অবস্থা চোখে পড়ে। সেখানে আশ্রয় নেয়া এক কলেজশিক্ষার্থী জানালেন, তাদের পরিবারের ছিল বাড়িঘর ছাড়াও পাঁচ বিঘা ধানী জমি এবং তিন বিঘা মাছের ঘের। কিন্তু আমফান ঝড়ে কপোতাক্ষ নদ এ সবকিছু গ্রাস করে নিয়েছে। এ ঝড়ের সময়ে ঘর থেকে ধান কিংবা কোনো আসবাবপত্র আনা যায়নি। এখন অন্যের সাহায্য নিয়ে তাদের চলতে হচ্ছে। এই আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০টি পরিবারের ২০০ সদস্য আজো আশ্রিত জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। মূল নদীর ভাঙন রোধ না করায় তাদের বাড়িঘরে এখনো জোয়ার-ভাটার পানি খেলা করে। উপজেলা চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, ‘আজো অনেকে ঘরে ফিরতে পারেননি।’ এ দিকে, বাঁধের ওপর রয়েছে আড়াই শতাধিক পরিবার।
আমরা আশা করি, বিনা সুদে ও সহজ শর্তের ঋণ প্রদান, পুকুরের লোনা পানি বের করে দিয়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা, বিশেষত নারীদের জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা এবং আসন্ন ভাদ্র মাসের মধ্যে সব বাঁধ মেরামত করে দুর্গত এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের উদ্যোগ নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা