২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চরম দৈন্যের মুখোমুখি তারা

বেসরকারি শিক্ষকদের কথা ভাবুন

-

বছর ঘুরে আবার আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির সাথে লাখো মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে। পশুপালন, এনিম্যাল ফার্মিং, পশুর চামড়া রফতানিসহ ঈদ-অর্থনীতি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো সবারই জানা। এটাও জানা যে, এ মুহূর্তে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশও এক ভয়াবহ মহামারী রোগের মোকাবেলা করছে। করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক সব প্রক্রিয়া লণ্ডভণ্ড। আনুষ্ঠানিক খাত যেমন সরকারি প্রতিষ্ঠান বা গার্মেন্ট বা অন্য শিল্প-কারখানায় যারা কাজ করেন, তাদের চাকরি ও বেতনভাতা পাওয়ার কিছুটা হলেও নিশ্চয়তা আছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে নিয়োগপত্রবিহীন অনিশ্চিত চাকরিতে যারা নিয়োজিত তাদের তিন-চার মাস ধরে কোনো আয়-রোজগার নেই।
এ ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষক, বিশেষ করে নন-এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শিক্ষকদের কথা সবার আগে মনে আসে। তদের অবস্থা সব সময়ই করুণ। করোনাকালের দুঃসময় বিবেচনায় নিয়ে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পে প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। শ্রমিকরা যাতে বেতনভাতা পান তা নিশ্চিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরেই একটা মনোযোগ ছিল। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের ব্যাপারে কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়ার দরকার মনে করেননি। গত কয়েকটি মাস তাদের কিভাবে কাটছে সে খবর রাখেনি কেউ।
এবার ঈদ আসার আগেই গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা যেন পরিশোধ করা হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু শিক্ষকদের পক্ষে কথা বলার যেন কেউ নেই। পত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মহাসঙ্কটে রয়েছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মূলত ছাত্রছাত্রীদের মাসিক বেতন ও টিউশন ফির ওপর নির্ভরশীল। গত মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সরকারি প্রণোদনা তো নেই-ই, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও তারা গত তিন মাস বেতন নিতে পারেননি। সারা দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষকদের বেতনভাতা এখন বন্ধ। রাজধানী ও আশপাশের এলাকার অনেক স্কুল ভাড়ায় নেয়া বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো কবে আবার খুলবে তাও কেউ বলতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা চরম আর্থিক দৈন্যদশায় পড়েছেন।
একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে রয়েছে প্রায় ৪০০ ছাত্রছাত্রী এবং ১৯ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্কুল ভবনের ভাড়া বাবদ দিতে হয় ৬৫ হাজার টাকা। করোনাভাইরাসের এ পরিস্থিতির মধ্যে গত তিন মাসের ভাড়া বকেয়া পড়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাননি। সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাসা ভাড়া দিতে না পেরে কয়েকজন শিক্ষক বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।
একই অবস্থা সারা দেশেই। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি বড় অংশের বেতন নেই। এরা নন-এমপিও। বিনা বেতনে চাকরি করেন। স্বাভাবিক অবস্থায় স্কুল-কলেজের বাইরে অফটাইমে তারা টিউশনি ইত্যাদি করে কোনোমতে সংসার চালান। এখন অস্বাভাবিক সময়। করোনা মহামারীর অসময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব এমপিওবিহীন শিক্ষক-কর্মচারী মহা সঙ্কটে আছেন। দু’বেলা দু’মুঠো আহারের সংস্থান করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। গত বছরের শেষ দিকে প্রায় তিন হাজারের মতো প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাস্তবায়নের পর্যায়ে যায়নি। সরকারের করোনাকালীন প্রণোদনায় বেসরকারি শিক্ষকরা অন্তর্ভুক্ত নন। নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এই দুঃসময়ে কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সাম্প্রতিক সময়ে এমপিওভুক্ত যেসব শিক্ষক পেনশনে গেছেন তাদের বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় আছে। যারা এখনো কল্যাণ ট্রাস্ট কিংবা পেনশন সুবিধার টাকা হাতে পাননি, তাদের টাকাগুলো এই দুর্দিনে দিতে পারলে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement