২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কয়েকটি রোগ নিয়ে উদ্বেগ

জটিল হতে পারে পরিস্থিতি

-

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় এবং বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় উদ্বেগ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা। বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি আরো বেড়েছে। বাংলাদেশে গত বছর মহামারী আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছিল। ১২৯ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। তবে বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩০০। এ দিকে গত সাত বছরের মধ্যে এবার প্রথম তিন মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি, যা খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরকেই ভাবিয়ে তুলেছে। কয়েক দিন আগে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন বাড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি হিসাবে, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই তিন মাসেই দেশে ২৭১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৭৩। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর এই তিন মাসে কেবল ২০১৭ সালে মোট আক্রান্ত ছিলেন ১১৮ জন, বাকি বছরগুলোতে ছিল ১০০ জনের কম। গত চার বছরের মধ্যে এবারই ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটেছে সর্বোচ্চ। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই হিসাব করা হয়। সে অনুসারে নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ২০১৬-১৭ সালে আক্রান্ত ১৬ হাজার ৪৯০ জন ও মৃত্যু ৯ জন, ২০১৭-১৮ সালে আক্রান্ত ১৮ হাজার ৬৮৭ ও মৃত্যু ১৯ জন, ২০১৮-১৯ সালে আক্রান্ত ২০ হাজার ৪৪৬ ও মৃত্যু সাতজন এবং গত বছরের নভেম্বর থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হন এক লাখ ১১ হাজার ৭৩৭ জন, মারা যান ২২ জন।
এমনিতেই করোনা নিয়ে দেশে ভয়াবহ অবস্থা, এর মধ্যে যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বা মশার উৎস ধ্বংসে সঠিকভাবে কাজ করা না যায়; তাহলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি কাটবে না। এর সাথে মৌসুমি ফ্লু তো আছেই। করোনা, ডেঙ্গু আর ফ্লু যদি একসাথে জেঁকে বসে, তবে পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে উঠবে। তাই সময় থাকতেই সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার কোনো বিকল্প খোলা নেই। ফলে দেশে বিশেষভাবে তিনটি ঝুঁকির দিকে সমভাবে নজর দিতে হবে। এখন দেশে সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার মূল সময় শুরু হয়ে গেছে। করোনার মধ্যে ডেঙ্গু আর ফ্লু জটিলতার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেহেতু মৌসুুমি ফ্লুতে শ্বাসকষ্ট থাকে এবং করোনায়ও শ্বাসকষ্ট থাকে; তাই অনেকেই শ্বাসকষ্ট হলে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এ ক্ষেত্রে নজর বেশি রাখতে হবে। সবাইকেই থাকতে হবে সতর্ক।
করোনা, ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ আলাদা করতে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, চিকিৎসাকর্মীরাই জটিলতায় পড়ে গেছেন। অনেক চিকিৎসাকর্মী জ্বরের রোগী দেখলেই করোনার ভয়ে সেবা দিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে এই তিনটি বিষয়ে ভালো করে পার্থক্য বোঝা যায়Ñ এমন প্রচারাভিযান চালানো উচিত। আর স্বাস্থ্যকর্মীদের আরো বেশি করে বুঝিয়ে দেয়া উচিত; যাতে তারা দ্রুত কে কোনো উপসর্গে আক্রান্ত তা প্রাথমিক পর্যায়েই ধরতে পারেন। নয়তো জ্বর শুনলেই যে আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে সেটি কাটবে না। এতে রোগীর হয়রানি ও বিপদের ঝুঁকি আরো বাড়বে।
করোনা শনাক্ত করা এবং রোগী ব্যবস্থাপনায় দেশে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু ও ফ্লু ব্যবস্থাপনা অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। অথচ ডেঙ্গু মোকাবেলায় এখন জরুরি হচ্ছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জোরালোভাবে এডিস মশার উৎস ধ্বংস করা। তা না করতে পারলে গত বছরের চেয়েও জটিলতা বাড়বে। কারণ, করোনার তাণ্ডবে ঢাকার বেশির ভাগ মানুষই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। তারা ঘরবন্দী দিন কাটাচ্ছেন। ফলে মশায় কামড়ানোর ঝুঁকি বেড়েছে। আর দীর্ঘ ছুটিতে বন্ধ থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে যেন এডিস মশার উৎপত্তি না হয়; সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সাথে চিকিৎসক ও নার্সদের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া, ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন-হালনাগাদ করা এবং ডেঙ্গু প্রশিক্ষণ মডিউল বিতরণ, সচেতনতাবিষয়ক প্রচারাভিযান, জেলাপর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট সরবরাহ এবং ডেঙ্গু কর্নার চালু করা উচিত। একই সাথে সিটি করপোরেশন ও পৌর মেয়রদের নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক কার্যক্রম চালু করতে হবে। তবেই আশা করা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তা না হলে দেশের জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

সকল