৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা আতঙ্কে

অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

-

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের দেশেও মানুষজন আতঙ্কগ্রস্ত। ৮ মার্চ দেশে আইইডিসিআর প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগীর ঘোষণা দেয়। সেই থেকে সারা দেশে করোনা আতঙ্ক ছড়াতে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, করোনা আক্রান্ত সন্দেহে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফনেও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও করোনা আতঙ্কে অনেকসময় অন্য রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতেও অনীহা প্রকাশ করছেন। করোনার কারণে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আতঙ্কের কারণে বেশ কিছু দিন ধরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন না ডাক্তাররা। তারা ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। এতে করে অন্য সব রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাধারণ ঠাণ্ডা-সর্দি, জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্টের অনেক রোগীকে সেবা দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের কারণে জ্বর বা শ্বাসকষ্ট অনুভব হওয়া রোগীও ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বেশির ভাগ চিকিৎসক সর্দি-কাশি-জ্বর ও গলাব্যথা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেবেন না বলেও তাদের চেম্বারে লিখে রেখেছেন। ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকরা নির্দয় আচরণ করছেন। অনেক রোগী এক সপ্তাহ ধরে ঘুরেও সেবা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
শুধু চিকিৎসকেরাই এমন আচরণ করছেন না, জ্বর থাকলেই ফিরিয়ে দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোও। সরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসকরা ঠাণ্ডা-সর্দি-জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের স্পর্শ পর্যন্ত করছেন না। কাউকে কাউকে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর দেখিয়ে বিদায় করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে এমন ধরনের অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী অনেকে। রাজধানীসহ জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। ঢাকার অনেক ডাক্তারের চেম্বারে সিরিয়াল দেয়ার পরও ডাক্তাররা আসছেন না। তাই ডাক্তার না দেখিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। তবে যারা নগরের বাইরে থেকে এসেছিলেন তারা পড়েছিলেন সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায়।
অনেক চিকিৎসক বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে ২৭ জানুয়ারি দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সংক্রামক রোগীর জন্য পৃথক ব্যবস্থা বা আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। অথচ নির্দেশনার পর দেড় মাস পার হলেও অনেক হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট চালু হয়নি। এ কারণে সন্দেহভাজন রোগীকে সেবা দিতে চিকিৎসক, নার্স এবং ওয়ার্ডবয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। করোনাভাইরাস সন্দেহভাজন রোগীদের সেবাদানে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা সরঞ্জাম যেমন, পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, অ্যাপ্রন, বিশেষ গাউন, সার্জিক্যাল মাস্ক, চশমা ও জীবাণুমুক্তকরণ রাসায়নিক উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে, রোগীদের জন্য মানসম্মত কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন অবকাঠামো না থাকায় সংক্রমণ ঝুঁকি রয়েছে। ঠাণ্ডা-কাশি ও শ্বাসকষ্ট করোনার উপসর্গও হতে পারে। তাই চিকিৎসকরা রোগীর সেবা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। তাদের দাবি, ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সবার আগে ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করলে ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা প্রকাশের কোনো কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে দুই লাখ পিপিই বেসরকারি হাসপাতালে দেয়া হলে সেবা দেয়া সম্ভব। এ ছাড়া সব পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীর ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা উচিত।
সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, চিকিৎসাসেবা পাওয়া সবার একটি মানবিক অধিকার। কোনো অবস্থাতেই করোনার দোহাই দিয়ে অন্য সব রোগের চিকিৎসা বন্ধ থাকতে পারে না। এটি কোনো অজুহাতেই বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নেই। তবে এ কথাও ঠিক, চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম দেয়ারও বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর ডাক্তাররা যাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালু রাখেন সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement