০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি

ইরানি জাতির ঐক্যই রক্ষাকবচ

-

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। পারস্য উপসাগরে বিমানবাহী রণতরীর বহর এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমারু বিমান বি-৫২ মোতায়েন করেছেন এবং খুব শিগগিরই সেখানে ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা মোতায়েন করতে যাচ্ছেন। তার লক্ষ্য এবার ইরান। এটা হঠাৎ করে নয়, খুব ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতি সৃষ্টির দিকে এগিয়েছেন তিনি।
আগে ইরানকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পাশ্চাত্য শক্তি দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে, যদিও ইরান কতটা সক্ষমতা অর্জন করেছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ তারা কখনোই দিতে পারেনি। আসলে ইরানের বহুলালোচিত বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে মুসলিম বিশ্বের পক্ষে এই দেশটির একটি জোরালো শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা শুরুতেই রুখে দেয়া হচ্ছে। আর এ জন্য গল্পের সেই বলদর্পী বাঘের মতো আচরণ করছে, যেটি ঝরনার ভাটিতে অবস্থানকারী ছাগশিশুকে পানি ঘোলা করার অজুহাতে ঘাড় মটকে খায়।
ইরান ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় জাতির সাথে পরমাণু চুক্তি করে সেই চুক্তি যথাযথ পরিপালন করে এসেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাও বারবার বলেছে, ইরান চুক্তির শর্ত অনুসরণ করছে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময় বলেছেন, ‘ইরান চুক্তি মেনে চলছে না।’ কিভাবে ইরান শর্ত ভঙ্গ করল তা কিন্তু তিনি বলেননি। গত বছর ছয় জাতির ওই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এখন যা বলা হচ্ছে, তা পুরোই হাস্যকর। ইরান নাকি ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য হুমকি’। ইসরাইলের একজন মন্ত্রীকে দিয়ে বলানো হয়েছে, দেশটি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে ইসরাইলে হামলা চালানোর চক্রান্ত করছে। প্রমাণ কী? না, প্রমাণ আবার কী, ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্র বলছেÑ এটাই তো ‘যথেষ্ট’।
ট্রাম্পের মনোভাব একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকেই ইঙ্গিত করে। তিনি ইরানের নেতাদের তার কাছে নতি স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের নাকি ফোন করে কথা বলতে হবে ট্রাম্পের সাথে। যেন এক মহাপরাক্রমশালী সম্রাট তার করদরাজ্যের রাজাকে বলছেন, ‘সশরীরে সম্রাটের দরবারে হাজির হয়ে কুর্নিশ করে আনুগত্য প্রকাশ করো।’ যাতে নতি স্বীকারে বাধ্য হয় সে জন্য তিনি ইরান ‘একবিন্দু তেলও যাতে রফতানি করতে না পারে’ সে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
আমাদের ধারণা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে মুসলিম স্বার্থের পক্ষে কথা বলার মতো কোনো শক্তি যেন না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়াও আরেকটি লক্ষ্য সম্প্রতি যোগ হয়েছে বলে মনে হয়। সম্প্রতি ইসরাইলের সাথে একটি সুদূরপ্রসারী চুক্তি সম্পাদন করেছেন ট্রাম্প। ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’তে সে হিসেবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘একটি মাত্র রাষ্ট্র’ ইসরাইলের অস্তিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আর গাজা ও পশ্চিম তীরের একাংশ নিয়ে একটি ফিলিস্তিনি করদরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, যেটি ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর আওতাধীন থাকবে এবং এ জন্য ইসরাইলকে ট্যাক্স দেবে। অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন দেশের স্বপ্ন চিরতরে নস্যাৎ করে দেয়া হবে।
আল-কুদস মুক্তি ও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে সোচ্চার ইরান এই চুক্তির বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেটি ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, সবাই খুব ভালো করে জানেন। সুতরাং যেকোনো উপায়ে হোক; ইরানের মাথা ছেঁটে দিতে হবে; যেমনটি করা হয়েছে ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায়। ইউরোপের মিত্ররা ইরানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরই বেশি ঘনিষ্ঠ। সুতরাং ইরানের প্রকৃত বিপদে তারা কার্যকরভাবে সামনে এগিয়ে আসবে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানকে একাই এগিয়ে যেতে হবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি নিজের দেশবাসীর প্রতি বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। ইরানি জাতি যদি সত্যিই ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে তাহলেই কেবল তারা ট্রাম্পের হাতে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement