১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


অর্থনীতিবিদ সম্মেলন

টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই গণতন্ত্র ও সুশাসন

-

গত রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো অর্থনীতিবিদদের সম্মেলন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা বক্তব্য পেশ করেছেন।
অর্থনীতিবিদদের এই সম্মেলনে বক্তারা অর্থনীতির ফিলহাল অবস্থা বা চারিত্র নিয়ে যত না কথা বলেছেন; তার চেয়ে বেশি বলেছেন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। তারা দেশের চলমান রাজনীতির বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কোন কোন বিষয় অপরিহার্য, কোন ধরনের রাজনীতি অনুসরণযোগ্য, সেই পথনির্দেশ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, সেটি হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব সীমাহীন।
সম্মেলনে বক্তারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো গণতন্ত্র। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা। বলেছেন, সুশাসন না থাকলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এম আকবর আলি খান বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া সুশাসন হবে না। আর সুশাসন না হলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমানে উত্তরাধিকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সত্যিকারের দল করতে চাইলে দলগুলোকে গণতান্ত্রিক হতে হবে। দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত বা নানা মতের আলাপ-আলোচনা থাকতে হবে। কিন্তু সেটি নেই। আছে শুধু হালুয়া-রুটির ভাগবাটোয়ারা।
ড. আকবর আলি খান আরো বলেন, সবার আগে দরকার গণতন্ত্র। গণতন্ত্র থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে উন্নয়ন হবে।
দেশের বর্তমান উন্নয়নের ধারাকে প্রবাসী, পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিক এবং কৃষকের অবদান হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসন প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশে যে গণতন্ত্র আছে, তাতে নানা ত্রুটি আছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে পরিবর্তন দরকার। তৃতীয় কোনো গণতান্ত্রিক দলের আগমন হলে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তগুলো অর্থনীতিবিদেরা যথাযথভাবেই চিহ্নিত করেছেন বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা যদি তাদের বক্তব্যের সাথে মিলিয়ে বিদ্যমান বাস্তব চিত্র দেখার চেষ্টা করি তাহলে দেখতে পাবো, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র কার্যকর নয়। একটি দলের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত এবং যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদও কার্যত একদলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত। সর্বব্যাপ্ত দলীয়করণের মাধ্যমে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় লেজুড়ে পরিণত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের উচ্চতর মানের প্রসঙ্গ তো চিন্তার বাইরে, প্রাথমিক যেসব অধিকার মানুষের থাকার কথা যেমন বাকস্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাস নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই কাজের বা চাকরির সুযোগ পাওয়ার স্বাধীনতা ইত্যাদি কোনো কিছুই বর্তমান বাংলাদেশে কার্যকর নেই।
এ অবস্থায় সুশাসন থাকার কথা নয় এবং নেইও। অর্থনীতিতেও সুশাসনের কোনো অস্তিত্ব নেই। ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণ ও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের কারণে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক ব্যাংকের অনুমোদন দিয়ে কতগুলো দুস্থ ব্যাংকের জন্ম দেয়া হয়েছে, যা পুরো ব্যাংক খাতের ওপর জনগণের আস্থা বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্প খাতে ঋণদানের সক্ষমতা হারিয়েছে ব্যাংকগুলো। গ্রামীণ শিল্প খাতের অবস্থা নাজুক।
এমন এক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের প্রতিটি উচ্চারণ এবং সুপারিশ সরকারের জন্য যথার্থ দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকার কতটা আন্তরিকতার সাথে এসব সুপারিশ গ্রহণ করতে পারবে এবং দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে অর্থনীতি তথা গোটা দেশের স্বার্থে কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেটিই দেখার বিষয়। আমরা কেবল আশা করতে পারি যে, সরকার এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে মনোযোগী হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাইসির মৃত্যু হলে কে হবেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মিরসরাইয়ে ফের মিললো অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, পরে ধ্বংস প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুর মারধর, মানববন্ধন সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে কম্বোডিয়ায় দু’টি চীনা যুদ্ধজাহাজ, উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন হাতিয়ায় হরিণের গোশত জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড আশুগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অটোরিকশা চালকের মৃত্যু রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার দ্রুত চাপে পড়বে : প্রত্যাশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা মহাদেবপুরে বাসচাপায় মাদরাসাছাত্র নিহত কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি শান্ত হলেও উদ্বেগজনক সারা দেশে টানা ৩ দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস

সকল