২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্যাস সংকটে বিপর্যয়, আবারো দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত

গ্যাস সংকটে বিপর্যয়, আবারো দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত - ছবি : সংগৃহীত

গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে শিল্প খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা৷ বাসা-বাড়িতেও দিনের বেলায় মিলছে না গ্যাস৷ এমন পরিস্থিতিতে আবারো গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে৷

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷ জানা গেছে, চাহিদার চেয়ে সরবরাহের পরিমাণ প্রায় ৪৩ শতাংশ কমে গেছে৷ আগামী দুই সপ্তাহে তা আরো বাড়তে পারে৷ এরপর ঘাটতি কিছুটা কমার পূর্বাভাস থাকলেও চাহিদার এক চতুর্থাংশের জোগান দেয়া শিগগিরই সম্ভব হবে না৷ পরিস্থিতি সামলাতে কাতার এবং ওমান থেকে ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিমাণ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার৷ তবে তা খুব সহসাই সম্ভব হবে না৷ যার কারণে এই সংকট দ্রুত কমার সম্ভাবনা নেই৷

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আজকেই আমি বিদেশী ক্রেতাদের নিয়ে ফ্যাক্টরিতে গিয়ে দেখি ডায়িং বন্ধ৷ তখন সংশ্লিষ্টরা আমাকে জানাল, গ্যাসের সংকটের কারণে ডায়িং বন্ধ হয়ে গেছে৷ এখন এই পরিস্থিতিতে সঠিক সময়ে বিদেশে কিভাবে পণ্য পাঠানো যাবে? অথচ এখন আমাদের অর্ডারও বেশি৷ আমি সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছি৷ অন্যদের সমস্যাগুলো জেনে খুব শিগগিরই পেট্রোবাংলা বা তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বসব৷’

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত বুধবার তার ফেসবুক পেইজে একটা পোস্টে বলেছেন, ‘‘কারিগরি কারণে ১২ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস গ্যাস অন্তর্গত এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করতে পারে৷ এজন্য তিতাস কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করছে৷’’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার এক তৃতীয়াংশে নেমে গেছে৷ ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না শিল্প, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসহ শহর-গ্রামের নাগরিকরা৷ উৎপাদনের চাকা ধীর ও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ পরিবহণ খাতে রেশনিং করে সিএনজি সরবরাহ করায় বেড়ে গেছে যাতায়াতের খরচ৷ হ্রাস পেয়েছে কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সার উৎপাদনও৷

গ্যাস সংকটের কারণে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, নিটিং কারখানাগুলোর সংকট চরম আকার নিয়েছে৷ ঠিক সময়ে পণ্য দিতে না পারার ঝুঁকিতে থাকা রফতানিকারকরা ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা করছেন৷ তারা বলছেন, গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধান দরকার৷ ঘাটতি দ্রুত মেটানো না গেলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে দৈনিক ৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে৷ অথচ পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস৷ গত দুই-তিন বছর ধরে দৈনিক ৪১০-৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার ৩১০ থেকে ৩৩০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছিল৷ গত ৯ জানুয়ারি ২৫৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়৷ গত ১৮ নভেম্বর সামিটের এলএনজি টার্মিনালের মুরিং ছিড়ে যায়৷ এতে টার্মিনালটিতে কোন এলএনজিবাহী কার্গো ভিড়তে পারছে না৷ এতে দৈনিক প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে৷ এতে শিল্পের পাশাপাশি রাজধানীর বহু এলাকায় বাসাবাড়িতে দিনের অধিকাংশ সময়ে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না৷ কোথাও পাওয়া গেলেও গ্যাসের চাপ থাকছে কম৷

শিল্প-কারখানায় গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)৷ সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, গ্যাস সংকট এখন তীব্রতর হয়েছে৷ এতে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না৷ অথচ কয়েক দফা গ্যাসের দামও বাড়িয়েছে সরকার৷

এদিকে বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বাড়ানোর সাথে সাথে দামও বাড়াতে চায়৷ গ্যাসের দাম সমন্বয় করার জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব দিয়েছে তারা৷ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'তারা আমাদের কাছে সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল৷ কিন্তু আইনগতভাবে আমাদের পক্ষে সমন্বয়ের সুযোগ নেই৷ হয় দাম বাড়াতে হবে, নতুবা কমাতে হবে৷ আমরা এটা পারি৷ যে কারণে তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আইনগতভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে৷ তাদের আবেদন আসলে আমরা গণশুনানিসহ যে পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার সেগুলো নেয়া হবে৷ আর একথাও তো সত্যি সারা বিশ্বেই গ্যাসের দাম বাড়ছে৷ ফলে এগুলোও তো আমাদের ভাবতে হবে৷'

এদিকে দুই এক দিনের মধ্যেই বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির আবেদন জমা দিবে বলে জানা গেছে৷

জ্বালানি খাতের শীর্ষ সংস্থা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেছেন, দেশের গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং এলএনজি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ঘাটতি বেড়েছে৷ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সবধরণের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কয়েকটি গ্যাস কূপের ওয়ার্কওভার (সংস্কার) শেষ হওয়ার পথে৷ সেগুলোতে উৎপাদন শুরু ও বাড়লে সংকট কমবে৷ সামিটের এলএনজি ফের চালু হলেও সরবরাহ বাড়বে৷ এক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

সকল