০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঘাটতি পূরণ

১৯ হাজার কোটি চাহিদার বিপরীতে ২০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব

১৯ হাজার কোটি চাহিদার বিপরীতে ২০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব - সংগৃহীত

দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় মাত্র ২০০ কোটি টাকা দিতে চায়। এ খাতে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে রাখা আছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, জনগণের করের টাকায় প্রতিবছর এই ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য অর্থ দেয়া হয়। কিন্তু তার পরও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে জনতা ও বেসিক ব্যাংকের অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এই ব্যাংকগুলোকে অর্থ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংকের সরকারি শেয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য ২০০ কোটি টাকা দেয়া যেতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়ে একটি চাহিদাপত্র দেয়া হয়। তাতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি সাত হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা জনতা ব্যাংক চেয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের দরকার চার হাজার কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক চেয়েছে ৭৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণেও প্রয়োজন আরো এক কোটি ১২ লাখ টাকা। 

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজেটে মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো চেয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা কখনোই দেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে কী পরিমাণ অর্থ চলতি অর্থবছরে দেয়া হবে তার একটি খসড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে তৈরি করেছে। এ খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেয়ার কথা ৮৪৯ কোটি টাকা। জনতা ১০০ কোটি টাকা, বেসিক ৫০ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পাবে ৫০০ কোটি টাকা। এ টাকা দেয়া-না-দেয়ার ইচ্ছা সম্পূর্ণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি এ ব্যাংকগুলোকে কোনো অর্থ দিতে আমরা একেবারেই রাজি নই। কারণ অতীতে এ ব্যাংকগুলোকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যে কারণে অর্থ দেয়া হয়েছিল তা কোনো কাজে আসেনি। তাই এবার আমরা এখাতে কোনো অর্থ দিতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মাত্র দুটি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওপর থেকে কোনো নির্দেশনা যদি না আসে তবে এ অর্থ চলতি সপ্তাহেই ছাড় করা হতে পারে। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত চারটি অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংককে। এ ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সোনালী ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ৩০০৩ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণীকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালীকে ৩১০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement