০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


টিকা নিতে আমেরিকা থেকে লোকজন বাংলাদেশে আসছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আমেরিকা থেকে লোকজন বাংলাদেশে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মাহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউড অ্যান্ড হাসপাতালে টিকা নেয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা শুনে তাজ্জব হবেন আমেরিকার কিছু লোকজন বাংলাদেশে এসেছে টিকা নিতে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এখানে টিকা নিতে আসলেন কেন? তিনি বললেন, ওখানে কত মাস পর পাব সেটা বলা যায় না। এই ফাঁকে আমি দেশেও আসলাম, ভ্যাকসিনও নিলাম।’

টিকা নেয়ার পর তিনি জানালেন, এটা খুব সহজ, খামোখা আপনারা চিন্তায় থাকেন। টিকা নেয়ার পর কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। দেখেন আমি গল্প করে যাচ্ছি। খামোখা আপনারা চিন্তায় থাকেন, খুব সহজ। আমি টেরই পাইনি। সহজ, একেবারে টেরই পেলাম না। আমি মানসিকভাবেও প্রস্তুত ছিলাম যে, এটা নিলে অসুবিধে হবে না।’

করোনা টিকা নেয়ার সহজ প্রক্রিয়া বোঝাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমিতো টিকা নিতে অভ্যস্ত। কিছুদিন আগে নাইজার যাওয়ার কথা ছিল, তারা ইয়োলো নামে কি টিকা দিয়েছে, এর থেকে মনে হলো এই টিকা আরো সহজ।’

অনেক উন্নত দেশ এখনও টিকা পায়নি উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি দেশে টিকা আছে। উন্নত দেশেও এখনো অনেকে টিকা পায়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার জন্য আমরা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী চান, প্রত্যেকে যেন টিকা পায়। আমরা এজন্য সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে চাই।’

দেশের প্রতিটি মানুষ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট এবং একে অপরকে সাহায্য করার ওপর গুরুত্ব তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একইসাথে তিনি সারাদেশে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রাখায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ টিকাদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

এ সময় সবাইকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ করোনা নির্মূলে যত পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দেন মোমেন।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে কূটনীতিকদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। শুরুর দিনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইম্বামীসহ মোট ৩০ জন কূটনীতিক টিকা নেন। এই ৩০ জনের মধ্যে বিদেশি কূটনীতিক ছিলেন ২১ জন।

এরপর দ্বিতীয় ধাপে আজ টিকা নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথম ধাপে না নেওয়ার কারণ হিসেবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন জানান, এটা চলমান প্রক্রিয়া। ওইদিন দেইনি কারণ তখন আমি করোনা থেকে উঠে এসেছি। আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দিয়েছে। আমার একটা ইচ্ছে ছিল যারা আমাকে নির্বাচিত করেছে সেই নাগরিকরা প্রথম ভ্যাকসিন নিবে।

কূটনীতিকদের টিকা নেওয়া শুরুর পর আটদিনের মাথায় আজ দ্বিতীয় ধাপে টিকা নিচ্ছেন ৩৫ কূটনীতিক। এদের মধ্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসনও রয়েছেন। এ সাতদিন বন্ধ থাকলেও আগামী সপ্তাহ থেকে এই প্রক্রিয়া চলমান হবে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘পরবর্তী সপ্তাহ থেকে এটা রেগুলার হবে। এরমাঝে নেয়নি, মাঝখানে গ্যাপ ছিল। হয়তো ঘটা করে হবে না, তাদের যখন দরকার হবে তখনই আসবে।’

দেশে বিদেশি মিশন ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছেন বহু বিদেশি নাগরিক। তাদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, এখানে টিকা দেওয়া হবে। তোমরা তোমাদের ডকুমেন্ট নিয়ে চলে আসবে। আর রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ার যেসব নাগরিক রয়েছে, রাশিয়া তাদের প্রায় তিন হাজার জনকে টিকা দিচ্ছে। এটা তাদের টিকা তারা দিচ্ছে।’

বিশ্বের যে দেশগুলোতে বাংলাদেশি মিশন নেই সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকদের টিকা নেওয়ার প্রক্রিয়া জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কূটনীতিক ছাড়া যারা রয়েছেন, তাদেরও কিভাবে ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে একোমোডেট করতে পারি এটার জন্য কাজ করছি।’

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন না পেয়ে বাংলাদেশে অনেক মানুষ মানুষ মারা যাবে- মর্মে আল জাজিরাসহ বিশ্বের কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আল জাজিরা ও নেত্র বলেছে বাংলাদেশের ৫০ থেকে এক কোটি লোক মারা যাবে। তারা অক্সফোর্ডের বরাত দিয়ে বলেছে, সেটার সঙ্গে কোনো মিল আছে? এখন পর্যন্ত আট হাজার প্লাস লোক মারা গেছে। এগুলো সব বানোয়াট, ওরা ঘরে বসে বসে চিন্তা করে। দেশ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নাই। আর এদের মূল কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশকে অসুবিধায় ফেলার জন্য এরা ষড়যন্ত্র করে, সরকারের বদনাম করে।’


আরো সংবাদ



premium cement