২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দাগ রেখে যাই

-

১৬.
আমাদের বিভিন্ন জাতের ফসল বিভিন্ন উঁচুজমি, নিচুজমি, কুমারনদীর কোলচরী,
বিভিন্ন নামের দোপ বা দোয়াব, বিল ও সমতল ভূমিতে উৎপাদিত হতো।
নিজগ্রামের দোয়াল নামীয় দোপ, চরের জমি, চৈতার দোপ, কালীর দোপ বা কাইল্যার দোপ, ডাঙ্গির নামো, কাটাওদের জমিন বা কাটা হ্রদের জমি, ঢোনের জমিন, কারিকর মহল্লার শিঙ্গীর দোপের জমিন, ময়েনদিয়া চকের জমিন, পরমেশ্বর্দী গ্রামের বিলের জমিনসহ আরো অনেক এলাকাভিত্তিক নামীয় জমিনে আমাদের জমিন আছে। এসব জমিনের বেশির ভাগ জমি বিভিন্ন লোকদের আধি বা বর্গা চাষের জন্য হাওলা করা হতো। নিজেদের চাষে রাখা হতো মাত্র পঞ্চাশ একরের মতো জমিন। এসব জমিনের চাষের ফসল, আধি জমিনের ফসল উৎপাদন ও ফসল তোলার কাজে আলাদা লোক নির্দিষ্ট করা হতো। এসব কামলাদের স্থানীয় ভাষায় দাওয়াল বলা হতো।
দাওয়াল কামলারা অন্য কামলা থেকে আলাদা মর্যাদার ছিলেন। এরা কর্মে দক্ষ, শক্তিশালী, সৎ, ন্যায়বান, দামি ও চৌকস প্রকৃতির। আমাদের এলাকায় ধান পাট নিড়ানির সময়, বাছ পাট কাটার সময়, ধান কাটার সময় জমিতে কৃষকেরা কড়চা ও দোহাঁ পরিবেশন করত। এতে তাদের কর্মস্পৃহা বেড়ে যেত, কাজের একঘেয়েমি কেটে জড়তা দূর হয়ে যেত। আমি পড়াশোনার অবসরে আমাদের কৃষানদের ফসলকাটার দৃশ্য ও এ সব গান শুনতে সেখানে যেতাম।
আমি তাদের গানের মর্মার্থ না বুঝলেও মর্মমূলে বালক চিত্তের উন্নাসিকতা সৃষ্টি হত। কড়চা হলো ছোট্ট ছোট্ট পদ্য বা খণ্ড খণ্ড প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত জীবনাচরণ। বৈঞ্চব সাহিত্যে অনেক কড়চা রয়েছে। মধ্য যুগের গোবিন্দদাসের কড়চা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। আমাদের এলাকায় ধুয়া গান অনেকটা দোহাঁ কবিতা বা দোহাঁ গানের মতো। দোহাঁ হলো মধ্যযুগে অপভ্রংশ ও হিন্দি ভাষায় প্রচলিত দুই চরণের ভাব কবিতা। কবীর হিন্দিতে দোহাঁর সার্থক স্রষ্টা। কবীরের কয়েকটি দোহাঁ : মো কো কাহা ঢুণ্ঢে রে বান্দে / ম্যায় তো তেরে পাস / না মন্দির পে না মসজিদ পে / না কোয়ি অনন্ত নিবাস মে / য্যায় সে তিল মে তেল হোয়ে / য্যায় সে চকমক মে আগ / তেরা সাই তুঝমে হ্যায় / তু জাগ সাকে তো জাগ।
অর্থাৎ কবিরের এই শিক্ষা যে ঈশ্বর বা আল্লাহ কোন মন্দির বা মসজিদে থাকে না। কোন ধামে থাকে না। যেমন তিলে তেল থাকে, চকমকিতে আগুন থাকে তেমনি মানুষের মধ্যে আল্লাহ বা ঈশ্বর বসবাস করেন। [চলবে]


আরো সংবাদ



premium cement