১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


একরাত অভিমান

-

কমলা রঙের শাড়ি ছিল পরনে, আঁচলটা কাঁধ বেয়ে কোমরের কাছে এনে বাঁধা। কেমন একটা জাঁদরেল ভাব মুখটায় আঁকা, চলার গতিতে স্পষ্ট তাড়াহুড়ো, নির্বাক অধর। কোথাও যাবার আয়োজনে ব্যস্ত নিশিতা। পোঁটলাপুটলি তৈরি, বড়সড় স্যুটকেস শুধু তার নিজস্ব কাপড়চোপড়, কসমেটিক- কয়েকটা নৈমিত্তিক টুকিটাকিতে পূর্ণ।
তার স্বামী নুহাশ, দরজার পাশটায় টেবিল যে ছিল এক ঘুণ ধরা, তার উপর বসে। চোখ জলে ছলছল, মুখে হাসি টানা। বউয়ের প্রস্তুতি দেখে আড়চোখে নিরীক্ষণ। যেন এই চলে যাওয়াতে তার নেই কোনো ভ্রƒক্ষেপ। স্বামী-স্ত্রীতে সামান্য বিবাদ, কথাকাটাকাটি তাই এই বিদায়ের আয়োজন এসেছে ঘনিয়ে।
তিন বছরের সংসার, ছেলেমেয়ে নেইÑ পিছুটানমুক্ত। এত বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটুও লাগেনি সময়। নিশিতা বাপের বাড়িতে নেবে ঠাঁই, স্বামী যাক জাহান্নামে।
বাইরে বিকেল, মেঘগুলো সোনালি আবির মাখা। আকাশের চিলগুলো একটাও নেই আকাশে। বেরিয়ে যাবে নিশিতা, নুহাশের মৌনতাÑ ইজি চেয়ারে বসে গালে হাত ঠেসা, জানালার ফাঁক দিয়ে উদাসীন দৃষ্টি দিগন্তের খোলামাঠে।
ছিল একগোছা চাবি নিশিতার আঁচলে বাঁধা। চাবির গোছা রাখতে গিয়ে ওয়্যারড্রবের ছাদে চোখে তার পড়ল; একটা ছবি কাচ দিয়ে মোড়ানো। বিয়ের প্রথম বছর সেই যে গিয়েছিল হানিমুনে, সেখানেই তোলা। নুহাশ আর নিশিতা একত্রে ঠেস দিয়ে বসা গাছের শেকড়ে, হাতে হাত ধরা। মনে তার পড়ল কিছু স্মৃতি ভাসা ভাসাÑ বিদায়ের বেলা ছবিটার পাশে দাঁড়িয়েই।
নুহাশের মন চাইছিল বলবে নিশিতাকেÑ ‘অন্তত আজ রাতটা থেকে যাও’Ñ তবু বলা হলো না। চরম অভিমান, বউয়ের কাছে যাবে হেরে এমনটা হয় কেমনে...!
যাওয়ার বেলায় নিশিতার মনে বারবার খেলা করে একটা বিষয়। একবার, শুধু একবার বলতো যদি নুহাশ ‘যেয়ো না গো’Ñ রাগে কিংবা অভিমানে, তবু যাত্রা এখানেই হতো ভঙ্গ। দেখলো নিশিতা পিছু ফিরে ফিরেÑ নাবোধক ইশারা... তাও পেল না বেচারী স্বামীর কাছ থেকে, তাই চলে গেল ভারী স্যুটকেস পিছু পিছু টেনে।
সন্ধ্যার খানিক বাদে গেল সে পৌঁছে বাবা-মায়ের বাসায়। নিশিতার অনাকাক্সিক্ষত আগমনে পিতা-মাতা শঙ্কিতÑ ‘কিরে... নুহাশকে দেখছি না যে, রাগ করে এলি বুঝি?’ নিশিতা দিলো না জবাব কোনোÑ শুধু রইলো মুখ গোমরা করে।
রাতে খাবার টেবিলে বারবার গিরো গেল এঁটে নিশিতার গলায়, খাওয়া হলো না। মনে পড়ে নুহাশের স্মৃতিÑ কেন এই অভিমান।
এ দিকে নুহাশ কেমনে করবে আহার নিশিতাকে ফেলেÑ এ কথা ভেবে ছাদে বিচরণ করল একাকী অন্ধকারে, খিদে গেল মিটে হাওয়া চিবিয়ে।
বিছানায় শুয়ে ঘুম এলো না চোখের পাতায়Ñ পাশের বালিশ খালি পড়ে আছে, স্ত্রী নেই ঘরে। কী একটা বেদনা যেন কুঁকড়ে ধরল নুহাশকে সহসা ডিমলাইটের সবুজাভ অল্প আলোতে। সদ্য জবাই করা মোরগের মতো ছটফট করে বারবার রাখল হাত খালি বিছানায়Ñ নিশিতা যেখানে ঘুমায় নীরবে। এ দিকে নিশিতা ঘুমায়নি কোনো রাত স্বামীকে জড়িয়ে না ধরে বুকে। পতির সোহাগ তার ঘুমের মহৌষুধ। এ পাশ-ও পাশ করল সে; বইয়ের পাতা যেমন ওল্টে বাতাসে, আঘাতপ্রাপ্তের মতো শ্বাসরুদ্ধ অস্থির।
মধ্যরাতে নুহাশ বসে টেলিফোন সেটটার সামনে কয়েকটা চাপ বাটনেÑ নিশিতাদের বাসার নাম্বার। রিং দিতে গিয়ে রেখে দিলো কী জানি কী ভেবে। বউয়ের কাছে যাবে হেরে এমনটা হয় কেমনে...!
‘একটা কলও তো দিলো না নুহাশ’Ñ ভাবে নিশিতা ক্ষণে ক্ষণে ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিভিয়ে। মোবাইল মনিটরে নাম্বার টুকে কল তবু দিলো নাÑ এত রাতে নুহাশকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। দু’জনের রাত কেটে গেল অসহ্য অনিদ্রায়।
খুব প্রভাতে সেজেগুজে প্রস্তুত নিশিতা। মা বললÑ ‘নাশতাটা খেয়ে যা, রাতে ভালো খাসনি।’
কে শুনে কার কথা, যেন নুহাশকেই বেশি প্রয়োজন নাশতার চেয়ে। এমন সময় কলিং বেলটা সুর করে বেজে উঠল, দরজা খুলতেই মৌনমুখে নুহাশ ঘরে ঢুকল।
‘এ কী বাবা তুমি, এত প্রভাতে...!’ Ñবিস্মিত শ্বশুর মশাই, বিড়বিড় করে বলল নুহাশÑ ‘বউয়ের কাছে হেরে যাওয়া, এ তো আর পরাজয় নয়।’

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাণীনগরে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেফতার ৪ যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ, প্রাণে বাঁচলেন ৭ ক্রুসহ ১৯১ যাত্রী ভূরুঙ্গামারীতে ভটভটিতে উঠতে গিয়ে শিশু নিহত প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী দুমকীতে হত্যা মামলার আসামি বাবা-ছেলে গ্রেফতার ১২ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি : যেখানে আপত্তি ইসরাইলের পথশিশুদের জন্য ছায়াতলের স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত মিরসরাইয়ে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী নিহত মালয়েশিয়ায় বিএমইটি কার্ডের নামে ফাঁদ! সতর্ক করল দূতাবাস ভোলায় বার্জের সাথে মাছ ধরার ট্রলারের ধাক্কা, জেলে নিহত সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগে দালাল চক্র, ৪৮টি বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সকল