২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমাদের এক জীবন

-

আমাদের পাশাপাশি থাকা চরণচিহ্নগুলো মুছে যাচ্ছে অতি দ্রুত। কালো মেঘ যেভাবে মুছে যায় সূর্যের রাগে; ঠিক সে রকম। আমরা অনেক দৌড়ে পেরিয়েছি কত পথঘাট কত গ্রাম।
বাইসাইকেলে লেগে থাকা আমাদের কৈশোর।
কনকনে ঠাণ্ডায় ভাপা পিঠার ধোঁয়া মাখা শৈশব, পুকুরভরা পানা আর কলমি ফুলে আটকানো মন
সবই ছিল জীবন্ত।
আমরা লুকোচুরি খেলতামÑ সারি সারি পাটখড়ির টিলায় অথবা ভাঙা রসুই ঘরের কোণায়। তখন আকাশ নীল থাকত, কখনো বা কালো মেঘ।
আমরা পৌষের মেলা ঘুরে বেড়াতাম বেলুন হাতে, কিংবা বাহারি পুতুল ও মাটির খেলনা। নাগরদোলায় দুলতে থাকত আমাদের নিষ্পাপ একটা জীবন। যে জীবন রঙিন ঘুড়ি।
ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে ছোট নদী পার হওয়া ছিল আমাদের বৈকালিক গুরুত্বপূর্ণ কার্য। ওই পাড়ে নির্মল আনন্দ অথবা কোনো লোভনীয় খাদ্যশস্য বিয়োগের সুপ্ত বাসনা।
আঁকাবাঁকা সাপ সম খেতের আইল ধরে বিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার সময়টা আমাদের বেশ প্রিয় ছিল।
ছুটি শেষে আসার পথেÑ দু’জনের নজরবন্দীতে তৃতীয় জনের শসা অথবা গাজর চুরির মহোৎসব।
সেচকলে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে গলাধঃকরণ করে বাড়ির পানে যাত্রা।
আমাদের কোনো চিন্তা ছিল না।
ছিল না ক্যারিয়ার, উপার্জন, ক্ষমতা কিংবা ভবিষ্যৎ সাংসারিক ভাবনা। আমরা ছিলাম মুক্ত পাখি।
যাদের আকাশে ডানা মেলার নেই মানা।
অতি দ্রুত আমাদের এক জীবনের সমাপ্তি ঘটে। আমরা এখন যে জীবনে বাস করছি তা কেবল বেঁচে থাকা।
‘বেঁচে থাকা’র সব প্রান্তে গিয়েই আমরা আমাদের সেই হারিয়ে ফেলা শৈশবের ‘এক জীবন’ হাতড়ে বেড়াই।
কখনো পাবো না জেনেও আমরা সে জীবন প্রতিদিন রঙতুলি দিয়ে স্মৃতির দেয়ালে এঁকে যাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement