২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সত্যের সাক্ষী ছয় শিশু

-

আল্লøাহ তায়ালা পৃথিবীর একমাত্র মালিক। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, চিরঞ্জীব ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সব সৃষ্টির তিনিই একমাত্র পরিচালক। তার ইচ্ছা ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই হয় না। তিনি ধনীকে গরিব, গরিবকে ধনী, রাজাকে ফকির এবং ফকিরকে রাজা করেন। তিনি মাঝে মধ্যে কিছু অলৌকিক কাজ করে বান্দার কাছে স্বীয় ক্ষমতার নিদর্শন প্রকাশ করেন। এর মধ্যে একটি নিদর্শন হলো- দোলনায় থেকে শিশুর কথা বলা। কতজন দোলনার শিশু কথা বলেছেন, এ প্রসঙ্গে মতভেদ রয়েছে। হজরত দাহহাক বলেন, দোলনায় কথা বলেছেন ছয় শিশু ।
১. হজরত ঈসা আ: শিশু অবস্থায় কথা বলেছেন। যেমন আল্লøাহ তায়ালা সূরা মারইয়ামে উল্লেখ করেছেন- ‘অতঃপর মারইয়াম হজরত ঈসা আ:-কে নিয়ে স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলো। (গোত্রের লোকেরা শিশুসন্তান সম্পর্কে মারইয়ামকে জিজ্ঞেস করলে মারইয়াম বলল, শিশুকে জিজ্ঞেস করো) তারা বলল, আমরা কিরূপে তার সাথে কথা বলব, সে দোলনার শিশু মাত্র? তখন ঈসা আ: বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আল্লøাহর বান্দা। তিনি আমাকে গ্রন্থ প্রদান করেছেন ও নবী করেছেন।’ হজরত ঈসা আ: শিশু অবস্থায় স্বীয় মায়ের সতীত্বের সাক্ষ্য দিয়েছেন। (সূরা মরিয়ম)
২. মহানবী সা: বলেছেন, এক মহিলা নিজের শিশুপুত্রকে দুধপান করাচ্ছিল। ঘটনাক্রমে তার সামনে দিয়ে একজন সুপুরুষ উন্নতমানের পোশাকে পরিপাটি হয়ে ঘোড়ায় চড়ে চলে গেল। মহিলাটি তখন দোয়া করল, হে আল্লøাহ! এ সওয়ারি লোকটির মতো আমার পুত্রকে করে দিন। শিশুটি তৎক্ষণাত দুধ ছেড়ে দিয়ে বলে উঠল, ‘হে আল্লøাহ! আমাকে তার মতো করিও না।’ অতঃপর সে আবার দুধের দিকে ফিরে গেল। কিছুক্ষণ পর অন্য দিক থেকে একটি মহিলাকে কিছু লোক টেনে নিয়ে যাচ্ছিল আর কিছু লোক তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করছিল। শিশুটির মা বলল, ‘হে আল্লøাহ! আমার সন্তানকে এর মতো করো না। শিশুটি বলল, ‘হে আল্লøাহ! আমাকে তার মতোই করো।’ মা তার শিশুটিকে বারণ করলে শিশুটি বলল, ‘মা, আরোহী লোকটি অত্যাচারী, আর মহিলাটি সতী-সাধ্বী! মানুষ অন্যায়ভাবে তাকে ব্যভিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করছে, সে মজলুম। আমি জালেম হতে চাই না, মজলুম হতে চাই।’
৩. মহানবী সা: বলেছেন, জাহেলি যুগে জুরাইজ নামে একজন বড় আবেদ ছিল। সে সদা ইবাদতে মগ্ন থাকত। একদা তার মা তার সাথে দেখা করার জন্য খানকায় এলো। মা জুরাইজ জুরাইজ বলে ডাকাডাকি করতে লাগলেন। জুরাইজ তখন সালাতে রত ছিল। সে চিন্তা করল- আমি মায়ের ডাকে সাড়া দেবো, নাকি আল্লøাহর ইবাদতে মত্ত থাকব? পরে সে সালাতেই মশগুল রইল, মায়ের ডাকে সাড়া দিলো না। মা মন খারাপ করে চলে গেল। এরূপ ঘটনা আরো দু’দিন ঘটল। তৃতীয় দিন মা ফিরে যাওয়ার সময় বলল, হে আল্লøাহ! কেনো ব্যভিচারিণীর মুখ না দেখিয়ে জুরাইজকে মৃত্যু দেবেন না। মায়ের দোয়া কবুল হয়ে যায়। ঘটনাক্রমে একজন দাসী এক রাখালের সাথে ব্যভিচার করার ফলে একটি সন্তানা প্রসব করল। মানুষ দাসীকে বলল, তোমার এই শিশুর পিতা কে? দাসী তখন জুরাইজের নাম বলল। সাথে সাথে লোকেরা জুরাইজকে খানকা থেকে বের করে দিলো এবং তার খানকা ভেঙে চুরমার করে দিলো। জুরাইজ তখন অজুু করে দুই রাকাত সালাত পড়ল। অতঃপর শিশুটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে শিশু, তোমার পিতা কে? শিশুটি বলল, অমুক রাখাল। অতঃপর দুধের শিশু সত্যের সাক্ষ্য দেয়। আর শিশুর কথায় জুরাইজ শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করে।
৪. আজিজে মিসরের স্ত্রী জুলায়খা হজরত ইউসুফ আ:-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর সান্নিধ্য লাভ না করতে পেরে যখন উল্টা হজরত ইউসুফ আ:-এর প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগ দিলো, তখন হজরত ইউসুফ আ: একজন শিশুকে সাক্ষী মানলেন। এ শিশুটি সাক্ষ্য দেয় যে, যদি ইউসুফ আ:-এর জামার সামনের দিক দিয়ে ছিঁড়া হয় তাহলে ইউসুফ আ: দোষী, আর যদি পেছনের দিক দিয়ে ছিঁড়া হয়, তাহলে জুলায়খা দোষী। এ ভাবে শিশুটি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিলো এবং ইউসুফ আ: নির্দোষ প্রমাণিত হলেন।
৫. ফিরাউন একজন শিশুকে আগুনে নিক্ষেপ করে পরে তার মাকে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করলে মা চিন্তিত হয়ে পড়ে। তখন শিশুটি তার মাকে বলল, মা আমি শান্তিতে আছি, আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, আগুনকে ভয় করবেন না। শহীদী মৃত্যু যে কত শান্তির, শিশুটি তার সাক্ষ্য দিলো।
৬. কারুন হজরত মূসা আ:-এর বিরুদ্ধে একজন ব্যভিচারিণীকে ব্যভিচারের অভিযোগ দিতে বাধ্য করলে ব্যভিচারিণীর শিশুসন্তানটি সাক্ষ্য দান করে যে, আমার পিতা হলো অমুক রাখাল। আল্লøাহ তায়ালা এভাবেই সত্যকে উদ্ভাসিত করেন।
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement