৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নাম-সুখ্যাতি কামনা করা

-

বর্তমান সমাজের প্রতিটি মানুষই যে যেদিকে এগোচ্ছে, সে নিজেকে সেদিকের অনুসরণীয় ব্যক্তি হিসেবে পেশ করতে চায়। লোকমুখে শুনতে চায় নিজের নাম, নিজের প্রশংসা। আকাক্সক্ষা করে সুখ্যাতির।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড়, লেখক, সাংবাদিকসহ প্রত্যেকেই চায় তার নিজ পদে সবার সেরা হতে। এই চাহিদাটি যোগ্য-অযোগ্য সবারই হয়। সবারই আশা-আকাক্সক্ষা এটি। এমনকি অনেকে তো রাতারাতি তারকা হতে চায়। যোগ্যদের বেলায় এই আকাক্সক্ষা তো ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা হলো অযোগ্যদের নিয়ে। যতটুকু না ডাক্তার; বরং এর দ্বিগুণ টাইটেল দিয়ে তৈরি করে নিজের ভিজিটিং কার্ড। সবার একই অবস্থা। সে কী হয়েছে সে নিজেও ভাবতে পারে না। লেখকদের কথা বলাই বাহুল্য। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সর্বনাশ করছে ফেসবুক। ফেসবুকে নিজের আইডি, পেজ ও গ্রুপে ফ্রেন্ড-ফলোয়ার বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কত জনকেই কত কিছু করতে দেখি। একমাত্র এর কারণেই সেলিব্রেটি, ফ্যান্টাসি গ্রাস করে আছে আমাদের। কাজের চেয়ে আলোচনা-খ্যাতি বেশি। এর দ্বারা নষ্ট হচ্ছে আমাদের নিষ্ঠা ও নিবেদন। মনে বড্ড শখ আমাকে ‘ফেমাস’ হতে হবে। সমাজের সবারই যশোপ্রীতি। পছন্দ করে নিজের গুণকীর্তন।
যশোপ্রীতি অর্থাৎÑ মানুষের কাছে নিজের সম্মান ও প্রশাংসার আকাক্সক্ষা শরিয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। আল্লাহ তায়ালা পরকালের নিয়ামত লাভকে যশোপ্রীতি বর্জনের ওপর নির্ভরশীল ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লøাহ তায়ালা বলেন, ‘এই পরকাল আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না।’ (সূরা কাসাস-৮৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে, হজরত ইবরাহিম আ: বলেন, (হে আল্লাহ!) ‘আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী করো’। (সূরা আশ-শুআরা-৮৪)
হজরত ইবরাহিম আ:-এর এই দোয়া বাহ্যত যশোপ্রীতির অন্তর্ভুক্ত মনে হয়। কেননা, তিনি আলোচ্য আয়াতে দোয়া করেছেন যে, পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে আমার প্রশংসা ও গুণকীর্তন হোক। কিন্তু আয়াতের ভাষার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, এই দোয়ার আসল উদ্দেশ্য যশোপ্রীতি নয়, বরং আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা যে, আমাকে এমন সৎকর্মের তৌফিক দিন, যা আমার আখিরাতের সম্বল হবে। যা দেখে অন্যদের মনে অনুপ্রেরণা জাগবে ও সৎকাজে মানুষ আমার অনুসরণ করবে।
সার কথা, এই দোয়ার দ্বারা কোনো যশোপ্রীতি উদ্দেশ্য নয়। কুরআনুল কারিমে ও হাদিস শরিফে যে যশোপ্রীতি নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয় বলা হয়েছে, তার অর্থ পার্থিব জগতে প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা ও এর দ্বারা মুনাফা অর্জন করা।
লালসায় চরিত্র নষ্ট হয়, উদগ্র বাসনায় মানুষ ব্যক্তিত্ব হারায়। তখন সৃষ্টির সেরা ইনসান নর্দমার নোঙরা কীটের চেয়েও জঘন্য হয়। আরবিতে একে ‘রিয়া’ বলা হয়।
‘রিয়া’ মূলত ইখলাস ও একনিষ্ঠতার বিপরীত। তাই রিয়াকারীর ইবাদত কবুল হয় না, তার সব আমল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। রিয়া বা আত্মপ্রচার তথা যশ ও জৌলুস কামনা নফসের গোলামি করার শামিল। রিয়া বা খ্যাতির বাসনা দুনিয়ার আসক্তি বাড়িয়ে দেয়, আখিরাত থেকে বিমুখ করে। ফলে প্রতিক্ষণে ও সব সময় আখিরাত চিন্তার পরিবর্তে দুনিয়ার চিন্তা মাথায় কিলবিল করতে থাকে। সদাসর্বদা দুনিয়া নিয়েই বিভোর থাকে, তার অন্তরে আল্লাহর জন্য প্রেম সৃষ্টি হয় না। রিয়াকারী তার সৎকর্মের ফল দুনিয়াতে পেলেও পেতে পারে; কিন্তু আখিরাত বা পরকালে তারা জান্নাতের খুশবুও পাবে না। (হাদিস)
ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসায়ি রহ. হজরত কাব বিন মালেক-এর বর্ণনা নকল করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে যদি একটি বকরির পালে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তা এত পরিমাণ ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যে ক্ষতি মানুষকে তাদের দু’টি স্বভাব করে থাকে। ১. ধন সম্পদের প্রতি অতি ভালোবাসা ও ২. নিজের সুনাম সুখ্যাতির আশা-আকাক্সক্ষা।

হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, নিজের সুনাম-সুখ্যাতির আশা-আকাক্সক্ষা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। এ সব বর্ণনায় ওই সমস্ত যশোপ্রীতি উদ্দেশ্য যা কেবল দুনিয়াবি স্বার্থেই মানুষ কামনা করে থাকে। এমনকি কখনো এর দ্বারা গুনাহও হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যদি তা না হয়, তাহলে এরূপ যশোপ্রীতি নিন্দনীয় নয়। কেননা, স্বয়ং নবী করিম সা: এই দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে আমার চোখে ছোট করে দাও, আর অন্যদের চোখে বড় করে দাও’। এখানে লোকদের চোখে বড় বানানোর উদ্দেশ্য হলো, এর থেকে লোকেরা দ্বীনী বিষয়ে আমার অনুসরণ করবে। ইবনে আরাবি বলেন, আলোচ্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, যে সৎকর্মের কারণে মানুষের মধ্যে প্রশংসা হয় সে সৎকর্ম অন্বেষণ করা জায়েজ।
ইমাম গাজালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, দুনিয়াতে সম্মান ও যশোপ্রীতি তিনটি শর্তে বৈধÑ
১. নিজেকে বড় অন্যকে ছোট এবং হেয় করা যদি উদ্দেশ্য না হয় বরং পরকালীন উপকার লক্ষ্য হয় যে, মানুষ তার ভক্ত হয়ে সৎকর্মে তার অনুসরণ করবে।
২. মিথ্যা গুণকীর্তন লক্ষ্য না হওয়া চাই। অর্থাৎ, যে গুণাবলি নিজের মাঝে নেই তার ভিত্তিতে মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা কামনা করা।
৩. সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করার জন্য যদি গুনাহ অথবা ধর্মের ব্যাপারে শৈথিল্য অবলম্বন করতে না হয়।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল-মারকাজুল ইসলামী কেরানীগঞ্জ, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
আমরা নিজের দেশেই অদৃশ্য : ভারতের মুসলিমরা যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৪ রাজনীতির মাঠে যেভাবে খেলছেন ইউসুফ পাঠান মার্কিন রণতরীতে হাউছিদের হামলা ধরপাকড়ের মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে ৩ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা নিহত ফিলিপাইনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি, বাড়তে পারে আরো শিখ নেতা পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিলেন ‘র অফিসার’ : ওয়াশিংটন পোস্ট দিল্লিকে উড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে কেকেআর করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার বাইডেনকে পিছনে ফেলে দিলেন ট্রাম্প

সকল