২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রশ্নোত্তর

-

ফাবিহা বুশরা : অনেকে ক্রিকেটকে জুয়া খেলার সাথে তুলনা করেন। কিন্তু এখানে তো প্রতিযোগীদের থেকে কোনো অর্থ আদায় করা হয় না। শুধু প্রতি ম্যাচে খেলে তারা অর্থ উপার্জন করে এবং বিজয়ী দলকে আলাদা পুরস্কার দেয়া হয়। আর খেলায় জিততে তো তাদের অনেক অনুশীলন, পরিশ্রম ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। একজন ক্রিকেটার যদি কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চলেন, তারপরও কি তার জন্য প্রফেশনাল হিসেবে ক্রিকেট খেলা হারাম হবে?
মাওলানা লিয়াকত আলী : ক্রিকেট একটি অতি পরিচিত খেলায় পরিণত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। ইসলাম ঢালাওভাবে খেলাধুলা বা বিনোদনের অনুমতি দেয়নি, আবার সব রকমের খেলাধুলা বা বিনোদনকে নিষিদ্ধও করেনি। বিষয়টি একটু স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় খেলাধুলা পাঁচ প্রকার। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক প্রকারের বিধান ভিন্ন।
এক. এমন কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যে খেলাগুলো মৌলিকভাবেই হারাম। যেমন- জুয়া, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই ইত্যাদি। কারণ এই খেলাগুলোতে বিনোদনের নামে প্রাণীকে কষ্ট দেয়া হয়। এক পক্ষের সম্পদ নষ্ট হয়, যা বৈধ হতে পারে না। এমন খেলার আয়োজন করা, খেলা ও খেলা দেখা সবই নিষেধ।
দুই. এমন কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম ছিল না কিন্তু খেলার মধ্যে এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো হারাম। যেমন- ফুটবল। খেলাটি আসলে হারাম ছিল না, কিন্তু খেলার একটি নিয়ম সেটাকে হারাম করে দিয়েছে। এই খেলা হয় হাফপ্যান্ট পরে। আর প্রত্যেক পুরুষের জন্য নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত অন্য পুরুষকে দেখানো হারাম। অন্যের জন্য দেখাও হারাম। খেলায় হাঁটুর উপরাংশ খোলা থাকায় এই খেলাটি হারাম। আর যদি নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে খেলা যায়, তাহলে নীতিগতভাবে হারাম হবে না।
তিন. কিছু খেলা এমন, যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম ছিল না, হারাম শর্ত সংযুক্ত করায় হারাম হয়েছে। যেমন- যেকোনো খেলায় যদি বাজি ধরা হয়, তাহলে সেটা হারাম হয়ে যাবে। বাজি ধরার খেলার আয়োজন করা, খেলা ও খেলা দেখা সবই নিষেধ। বাজির টাকা লেনদেনও নিষেধ।
চার. যেসব খেলাধুলা উপরোল্লিখিত তিন পর্যায়ের নয়, সেসব খেলাধুলা কিছু শর্তে বৈধ হবে। শর্তের মধ্যে রয়েছে- খেলায় ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষতিকর কিছু থাকতে পারবে না। খেলাটি খেলোয়াড় বা দর্শকদের ইসলামের আবশ্যকীয় বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হবে না, যেমন- নামাজ, রোজা ইত্যাদি। যদি খেলা করা বা দেখার কারণে নামাজ, রোজা ইত্যাদি আদায়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, তাহলে সে খেলা বৈধ হবে না।
পাঁচ. কিছু খেলা আছে সুন্নত। যেমন তীর নিক্ষেপ, ঘোড়দৌড়, পর্দা রক্ষা করে স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা। রাসূলুল্লাহ সা:-এর যুগে তীর ছিল অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র। যুদ্ধের ট্রেনিংস্বরূপ আল্লাহর রাসূল সা:-এর উপস্থিতিতে সাহাবায়ে কেরাম রা:-এর মধ্যে ঘোড়দৌড় ও তীর নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা হয়েছে। তাই যুদ্ধের ট্রেনিংসংক্রান্ত খেলা বা প্রতিযোগিতা সুন্নতি খেলার তালিকায় গণ্য হবে। অতএব পেশাদার বা চাকরিরত সৈনিকদের জন্য যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা সুন্নত, বরং ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াজিব সাব্যস্ত হবে। তেমনি শরিয়তের বিধান মেনে স্ত্রীর সাথে বিনোদনমূলক খেলাধুলা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সা: আম্মাজান আয়েশা রা:-এর সাথে দৌড় খেলায় অংশ নিয়েছেন। তেমনি হাবশিদের খেলা উপভোগ করেছেন।
মোট কথা, যেসব খেলায় ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের ক্ষতি কিংবা ইসলামের আবশ্যকীয় বিধান লঙ্ঘন না হয় সেসব খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সহযোগিতা করা, সাপোর্ট করা জায়েজ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে যেন মূল্যবান সময় অপচয় না হয়। কেননা, প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। অসার ও অপ্রয়োজনে এই মূল্যবান সম্পদের অপচয় রোধ করা বাঞ্ছনীয়। তবে সেসব খেলায় যদি শরীরচর্চার উপদান থাকে, তাহলে সময় অপচয় বলে বিবেচিত হবে না।
এখান থেকে স্পষ্ট হয়, ক্রিকেট খেলায় ক্ষতিকর উপাদান বা অনুষঙ্গ না থাকলে এটিকে হারাম বলার সুযোগ নেই। তবে খেলাধুলা ও বিনোদনকে পরিমিত রাখা প্রয়োজন। এটিকে পেশা বানানো ইসলামের মূল স্পিরিটের পরিপন্থী। তাছাড়া আধুনিকতার নামে খেলাধুলাকে শরীরচর্চা ও বিনোদনে সীমিত রাখা হয়নি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সংস্কৃতি বিস্তারের মাধ্যম বানানো হয়েছে, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। এ জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের বৈধতার পক্ষে আল্লাহর রাসূল সা:-এর অনুমোদন ও সমর্থনকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করার সময় ওই সময়কার প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্যের সাথে আধুনিক যুগের বিশ্বপরিস্থিতি ও খেলাধুলার উদ্দেশ্য-লক্ষ্য তুলনামূলক বিচার করা ও বিবেচনায় নেয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন ইসলামী স্কলারগণ।


আরো সংবাদ



premium cement