১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


জান্নাতি হুর এক অনন্য সৃষ্টি

-

আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছেন। তাতে বসবাস করবে তাঁর প্রিয় নেককার বান্দারা। তারা সেখানে নিজেদের মুমিন স্ত্রীদের পাবে। সাথে আরো পাবে আল্লাহ তায়ালার এক অনুপম সৃষ্টি, কল্পনাতীত রূপ ও গুণের অধিকারী ডাগর নয়না রমণী। কুরআন-হাদিসে যাদেরকে ‘হুর’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এসব হুর সর্বদা জান্নাতিদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। হুর এটি আরবি শব্দ, যার অর্থ শুভ্র বর্ণের নারী। এরা হবে ঈর্ষণীয় রূপ-লাবণ্যে সেরা। সৃষ্টির পর থেকে যুগ যুগ ধরে এসব হুর তাদের নিজ নিজ স্বামীর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে তারা শুধু জান্নাতেই তাদের প্রতীক্ষিত স্বামীর সাক্ষাৎ পাবে। তবে এখন থেকেই তারা তাদের হৃদয়ে পৃথিবীবাসী স্বামীর জন্য অভাবনীয় ভালোবাসা লালন করছে। প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীর কোনো নারী যখন তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন তার জন্য নির্ধারিত হুর বলে, (হে হতভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তো তোমার কাছে কয়েক দিনের মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন (তিরমিজি-১১৭৪)।
আল্লাহ তায়ালা হুরদের জান্নাতেই সৃষ্টি করেছেন। তারা প্রস্রাব-পায়খানা করে না। হয় না তাদের ঋতুস্রাব। তারা সবাই হবে সমবয়সী ও চিরকুমারী। তেমনি যেসব নারীরা দুনিয়া থেকে জান্নাতে যাবে, তারাও একই বয়সী হবে। তারা হবে স্বামী-সোহাগিনী ও আবেদনময়ী।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জান্নাতি রমণীদের বিশেষ রূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। সোহাগিনী , সমবয়সী’ (সূরা ওয়াকিয়াহ-৩৫-৩৭)।
আল্লাহ পাক অনুপম হুরদের সৌন্দর্যের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘তাদের জন্য সেখানে থাকবে নত আয়তলোচনা হুরগণ। যেন তারা সুরক্ষিত ডিম’ (সূরা সাফফাত-৪৮-৪৯)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব জান্নাতে থাকবে আনতনয়না হুরগণ, যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ বা জিন। সুতরাং (হে জিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের রবের কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে। যেন তারা পদ্মরাগ ও প্রবাল। হুরগণ থাকবে তাঁবুতে আবদ্ধ’ (সূরা রাহমান-৫৬, ৫৭, ৫৮, ৭২)। অর্থাৎ তাদের মন-প্রাণ এবং দৃষ্টি তাদের স্বামীদের কাছে আবদ্ধ থাকবে, ফলে নিজ স্বামীদের ছাড়া অন্য কাউকে তারা কামনা করবে না। প্রতিনিয়ত তাদের রূপ-লাবণ্য বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে, যেখানে তারা প্রতি শুক্রবারে পরস্পর সাক্ষাৎ করবে। তখন উত্তরের বাতাস প্রবাহিত হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল ও কাপড়ে আলোড়িত করবে। এতে তাদের সৌন্দর্য ও রূপ-লাবণ্য আরো বেড়ে যাবে । তারা রূপ-লাবণ্যে সমৃদ্ধাবস্থায় স্ত্রীদের কাছে ফিরবে। তখন তাদের স্ত্রীরা বলবে, আল্লাহর কসম, আমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহর শপথ, আমাদের প্রস্থানের পর তোমাদের সৌন্দর্যও বহুগুণে বেড়ে গেছে’ (সহিহ মুসলিম-৭০৩৮)।
প্রিয় নবী সা: আরো বলেন, ‘জান্নাতি রমণীরা ৭০টি কাপড় পরিহিত থাকবে, সেগুলো ভেদ করে ও তাদের পায়ের গোছার শুভ্রতা এবং অস্থি-মজ্জা দেখা যাবে। কারণ, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যেন তারা পদ্মরাগ ও প্রবাল । আর পদ্মরাগ এমন স্বচ্ছ পাথর যার ভেতর কোনো সুতা প্রবেশ করালে তা বাইরে থেকে দেখা যায়’ (তিরমিজি-২৫৩২)।
জান্নাতে হুরদের অনুষ্ঠান হবে। এতে তারা এমন সুমধুর কণ্ঠে গান গাইবে, যা কোনো সৃষ্টিজীব কখনো শোনেনি। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতে আয়াতলোচনা হুরদের সমবেত হওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। তারা সেখানে এমন সুরেলা আওয়াজে গান গাইবে, যে আওয়াজ কোনো মাখলুক ইতঃপূর্বে কখনো শুনেনি। তারা এই বলে গান গাইবেÑ আমরা তো চিরঙ্গিনী, আমাদের ধ্বংস নেই। আমরা তো আনন্দ-উল্লাসের জন্যই, দুঃখ-কষ্ট নেই আমাদের। আমরা চির সন্তুষ্ট, আমরা কখনো অসন্তুষ্ট হবো না। তারা কতই না সৌভাগ্যবান যাদের জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যারা’ (তিরমিজি-২৫৬৪)। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ , কুমিল্লা


আরো সংবাদ



premium cement