২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গাজীপুর সিটি নির্বাচন

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ইসি-প্রশাসন-প্রার্থী ঐক্যমত

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেয়রপ্রার্থীসহ সর্বস্তরের জনগন। (ইনসেটে) বক্তব্যরত সিইসি কেএম নূরুল হুদা। ছবি - নয়া দিগন্ত।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ঐক্যমত হয়েছেন সকল প্রার্থী, আইনশৃংখলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার বিকেলে জেলা শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এমন কথা ব্যক্ত করেন প্রার্থী, আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।

এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সমর্থকদের এ সহনশীলতা বজায় থাকলে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে তাতে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। নির্বাচনের তফাসিল ঘোষণার পর ৮০ দিনেও গাজীপুরে নির্বাচনী কোন সহিংসতা এমনকি কেউ কারো সাথে খারাপ ব্যবহার পর্যন্ত করেনি। এই যে একের প্রতি অপরের সহনশীল আচরণ এটি নির্বাচনের ক্ষেত্র ও পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য যে উপাখ্যান এর প্রতি আমি শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, প্রার্থীদের এজেন্টরা নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে ফলাফল নিয়ে তারা যেন কেন্দ্র ত্যাগ করেন। এজেন্টরা নির্বাচনের শুরু থেকে নির্বাচনের ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকবেন। কেউ কখনো কেন্দ্রের বাইরে ভোট গণনা করতে পারবে না। ভোট গণনা হবে কেন্দ্রে, ভোটের ফলাফল দেয়া হবে কেন্দ্রে। এর ব্যতিক্রম হবে না।

তিনি বলেন আমি আশা করি এখন পর্যন্ত আপনারা যে পরিবশে সৃষ্টি করেছেন এখন পর্যন্ত সকল প্রার্থীই বলেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন চান, সকলেই চেয়েছেন সন্ত্রাস মুক্ত নির্বাচন চান। সেই দিকে যদি আপনাদের প্রত্যাশা সঠিক থাকে এবং আকাঙ্খা যদি সঠিক থাকে সে নির্বাচনতো কখনো খারাপ নির্বাচন হতে পারেনা। সুষ্ঠু ভোটের জন্য তিনি সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি মেয়র প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা একই নগরীর বাসিন্দা, সামাজিক ভাবে একে অপরের সঙ্গে বন্ধন আছে, আত্মীয়তা আছে সেটা আপনা অস্বীকার করতে পারেন না। নির্বাচনের পরে আবার আপনারা একভাবে থাকবেন। সেই একটা পরিবেশ যেমন ছিল সেই পরিবেশ বজায় রেখে একজন মাত্র মেয়র হবেন। যাকে জনগণ ভোট দিবেন তিনিই মেয়র হবেন। এরকম একটা মনোভাব বজায় রেখে আপনারা নির্বাচনের প্রচারণা চালাবেন। নির্বাচনে কাজ করবেন। আপনাদের কাছে আমার সেই আশাবাদ রইল।

তিনি বলেন পোলিং এজেন্ট একজন প্রার্থীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি সেই পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন। যদি সেই পোলিং এজেন্ট তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তিনি প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এজেন্ট দেয়ার আহবান জানান। নির্বাচন কমিশন এজেন্টদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছে। নির্বাচনের আচরণবিধি কেবল প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্য নয়। এ আচরণবিধি আমার জন্য, আমার কর্মকর্তাদের জন্য, রিটার্নিং অফিসারদের জন্য, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের জন্য এবং সকলের জন্য।

সিইসি বলেন, যদি আমাদের কোন কর্মকর্তা অন্যায় করে থাকে, নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের যদি কোন রকম পক্ষপাতিত্ব করে থাকে, নির্বাচনের ব্যাপারে যদি কারো কোন অতি উৎসাহ দেখেন পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখেন তাহলে তা আমাকে জানাবেন। এতে তার বিরুদ্ধে আইনগত যে ব্যবস্থা আছে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারো ছাড় নেই এখানে। আর সে অভিযোগ যেন সঠিক হয় এবং এর যথার্থতা থাকে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডলের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো: রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কেএম আলী আজম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোয়াজ্জেম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর-রশীদ প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতীতে গাজীপুরে কোন নির্বাচনে কারচুপি হয়নি। তাই গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও কোন কারচুপি হবে তা মনে করি না। নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সহনশীল মনোভাব বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার নামে বহিরাগতরা এসে কোন অজুহাত সৃষ্টি করে যেন সরকার ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে তা দেখতে হবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কারণে প্রার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ পরেও যে নির্বাচন হচ্ছে তা যেন উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সে ব্যাপারে সবার ভূমিকা রাখতে হবে।

বিএনপি মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তার বক্তব্যে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। টাকার দাপটের সামনে আমরা হাপিয়ে উঠেছি। নির্বাচন আচরণবিধি লংঘন করা হচ্ছে। অথচ অভিযোগ করেও আমরা কোন প্রতিকার পাইনি। এ ব্যাপারে আমি প্রমাণ দিতে পারি। নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করে ইতিহাস সৃষ্টি করুন যাতে জাতি আপনাদের মনে রাখে।

ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বৃষ্টিপাতের ফলে নির্বাচন কেন্দ্রর পরিবেশ কেমন তার আপডেট আমাদের জানাতে হবে, ভোটারদের জানাতে হবে। তারা যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।


সভায় গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির তার বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনী তফশীল ঘোষণার পর ৮০ দিন পার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে হলুদ কার্ড দেখাতে হয় নাই, লাল কার্ডও দেখাতে হয়নি এবং কোন ধরনের কার্ড দেখাতে হয়নি। কারণ নির্বাচণকে কেন্দ্র করে এখানে কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। কেউ কোনো আচরনবিধি লঙ্ঘন করেন নাই, ছোটখাট যে ঘটনা ঘটেছে সে ক্ষেত্রে আমরা জরিমানা করেছি, সেই জরিমানার পরিমান হলো ৫ লাখ টাকা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেজন্য আমি সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি। এছাড়াও স্থানীয় মসজিদ, এতিমখানা ও মন্দিরসহ ইত্যাদি উপাসনালয়ে যে মাইকগুলো রয়েছে সেগুলো কোন প্রার্থী ব্যবহার করতে পারবেন না এবং কোনো গুজবে এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কেউ সেগুলো ব্যবহার করেন তাহলে ওই প্রার্থী বা সংশ্লিষ্ট এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আপনাদের আশ^স্ত করতে চাই লেবেল প্লেইং ফিল্ড বলতে যা বুঝায় এ নির্বাচনে সেটি নিশ্চিত করা হবে। সেই নিশ্চয়তার নমুনা হিসেবে আমি বলছি ৫৭ টি যে কেন্দ্র আছে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ১জন করে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্টে থাকবেন, ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন এবং নির্বাচন কমিশনের ১৯জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার অবজার্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আনসার থাকবেন ৭ হাজার, পুলিশ ৬ হাজার, র‌্যাব থাকবে ৬’শ, বিজিবি থাকবে ৭’শ। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১৫ হাজার সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। গোটা বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করছে তখন এত পরিমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল না। থ্রি নট থ্রি ছাড়া আর কিছু ছিল না। এখন আমাদের কাছে আধুনিক অস্ত্র পর্যন্ত আছে। এত প্রস্তুতি থাকা স্বত্ত্বেও আমরা একটি ভাল নির্বাচন দিতে পারব না এটা ঠিক নয়। নিঃসন্দেহে আমরা তা পারব। আমি আপনাদের সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটের দিন পুলিশের ৩১টি মোবাইল টীম ৯টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে। ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ প্রয়োজনীয় লোকবল মাঠে কাজ করবে।

বিজিবির প্রতিনিধি কর্ণেল মোয়োজ্জেম হোসেন বলেন, ৩০ থেকে ৩৫টি টীম বিজিবির টীম মাঠে কাজ করবে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল্লাহ আলম মামুন বলেন, নির্বাচন সংক্রন্ত কোনো প্রকার গুজব ছড়ালে সে রেহাই পাবে না। নির্বাচনের পর বিজয় মিছিল করা যাবে না।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম বলেন, নির্বাচনে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ব্যায় আইনশৃঙ্খলার কাজে ব্যায় করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছরে আমাদেরকে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিবেশের আচরন পরিবতর্কন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, মানি ও মাসল পাওয়ারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন যারা ব্যাহত করতে চায় তাদের প্রতিহত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রেখে নির্বাচনে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই মতবিনিময় সভায় প্রায় সকল প্রার্থীই উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement
বরিশালে ২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের মারধর পাংশায় সজনে পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু কক্সবাজারে পুলিশের অভিযানে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা জব্দ প্রবীণ সাংবাদিক জিয়াউল হক আর নেই নোয়াখালীতে ফের নতুন গ্যাস কূপের সন্ধান, খনন উদ্বোধন বরিশালে তীব্র তাপদাহে ৩ স্কুলছাত্রী অসুস্থ বগুড়ায় জব মেলায় চাকরি পেলেন বেকার প্রকৌশলীরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার নীলনকশা থামছে না : রিজভী তাজউদ্দীন মেডিক্যাল দুদকের অভিযান : নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য মিলেছে পূর্ব কালুরঘাটে বেইলিব্রিজে টেম্পু চাপায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত কুবি শিক্ষকদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মী শনাক্ত

সকল