৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


লিবিয়া নিয়ে বিশ্বনেতাদের চুক্তি কার্যকর হবে কি?

-

লিবিয়া সঙ্ঘাতের সূচনা ২০১১ সালে আরব বসন্তের মধ্য দিয়ে। এ সময় লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। কয়েক বছরের সঙ্ঘাতের পর জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী ফায়াজ আল সেরাজ। রাজধানী ত্রিপোলিভিত্তিক তার জাতীয় ঐক্যের সরকারের লক্ষ্য ছিল দেশকে এক করা।
কিন্তু সবাই এতে সম্মত হয়নি বরং একসময়কার গাদ্দাফির সহযোগী জেনারেল খলিফা হাফতার নিজেই ক্ষমতা চান। তিনি তবরুক ও বেনগাজি শহরকে কেন্দ্র করে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা এলএনএ গঠন করেন। তার দাবি, একমাত্র তিনিই নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ইসলামপন্থী সন্ত্রাসকে দূর করতে পারেন।
এই লক্ষ্যে তার বাহিনী গত বছরের এপ্রিল থেকে ত্রিপোলি অভিমুখে এগোতে থাকে এবং ডিসেম্বরে গুরুত্বপূর্ণ শহর সিরত দখল করে নেয় হাফতার বাহিনী। এ ছাড়া বিভিন্ন শহরভিত্তিক মিলিশিয়ারা একে অন্যের সাথে লডাই করছে, যাদের মধ্যে ইসলামিক স্টেটের একটি অংশও রয়েছে।
মিসর, জর্দান, ফ্রান্স, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব বলছে, তারা ওই অঞ্চলে ইসলামপন্থীদের থামাতে চায়। তারা জেনারেল হাফতারকে নানা সহায়তা দিচ্ছে। ওই অঞ্চলে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টারত রাশিয়াও শেষ পর্যন্ত হাফতারের সাথে নিজেকে জড়িয়েছে। অন্য দিকে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, তুরস্ক কাতারসহ বেশ কয়েকটি দেশ প্রধানমন্ত্রী সেরাজের সমর্থনে রয়েছে।
লিবিয়ায় যুদ্ধের মাত্রা দিন দিন বাড়তে শুরু করলে আন্তর্জাতিকভাবে তা থামানোর চেষ্টা চলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জানুয়ারি তুরস্ক ও রাশিয়ার যৌথ আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় লিবিয়ায় যুদ্ধরত জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত সরকার ও বিরোধী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনী। পরে রাশিয়ায় উভয়পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় বসলে কোনো ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াই মস্কো ছাড়েন জেনারেল হাফতার।
সর্বশেষ লিবিয়া যুদ্ধে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে ও দেশের যুদ্ধরত দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের দিকে নিয়ে আসতে পৃথিবীর ১৬টি দেশ এবং কয়েকটি সংস্থা একটি যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। জার্মানির উদ্যোগে বার্লিনে গত রোববার অনুষ্ঠিত লিবিয়া সম্মেলনে শান্তির কথা মাথায় রেখেই জরুরি সিদ্ধান্তে পৌঁছান বিশ্বনেতারা।
আলোচনায় অংশ নেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, আলজেরিয়া, চীন এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধিসহ জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও আরব লীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
ত্রিপোলিভিত্তিক জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত লিবিয়ার জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফায়াজ আল সেরাজ এবং বেনগাজিভিত্তিক বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
লিবিয়া যুদ্ধ থেকে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থার প্রতি পুরনো অভিযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এই দেশগুলো অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সাহায্য করে বিবদমান পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ জারি রাখে। বার্লিনে লিবিয়া সম্মেলনে এ বিষয়টিকে সামনে রেখেই দীর্ঘ আলোচনা হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় বিদেশী সেনা মোতায়েনের বিরুদ্ধে থাকা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো বলেন, এ ধরনের হস্তক্ষেপ কেবল সঙ্ঘাতকে বাড়িয়ে তুলবে। রাজধানী ত্রিপোলিতে সিরিয়ান ও বিদেশী যোদ্ধাদের আগমন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ম্যাক্রো বলেন, এটি অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত।
শেষ পর্যন্ত জার্মান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেল প্রস্তাব করেন, কোনোভাবেই যাতে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে সাহায্য করা না হয়।
অস্ত্র ভারসাম্য নীতি কিংবা অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ এর আগেও বহুবার বিভিন্ন সম্মেলনে আলোচিত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ একাধিকবার এ সব বিষয়ে প্রস্তাব পাস করেছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন সব সময় ঘটেনি। কারণ অস্ত্র অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। কয়েক গুণ বেড়েছে অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর মুনাফা। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির সম্মেলনে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হলো, বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
লিবিয়ার বিবদমান দুইপক্ষকেও ডাকা হয়েছিল সম্মেলনে। তারা এসেও ছিলেন। কিন্তু মুখোমুখি আলোচনায় বসতে রাজি হননি। মার্কেল জানিয়েছেন, আলাদা আলাদা করে দুই পক্ষের সাথেই তাদের আলোচনা হয়েছে। শান্তি স্থাপনে তারা সহমত পোষণ করেছেন। যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই যে সমাধান সূত্রে পৌঁছতে হবে, সে কথা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে দুই পক্ষকেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসঙ্ঘ দু’টি সংস্থাই লিবিয়া সম্মেলন ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে করেছে। লিবিয়া সঙ্কট মেটানোর জন্য জার্মানি এবং জাতিসঙ্ঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, ইইউ তাকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।
যদিও এসব প্রয়াস শুধুই কাগজে লিখা। বাস্তবে বিশ্বনেতারা তা কর্যকরে কতটুকু এগিয়ে আসবেন তার ওপর নির্ভর করবে লিবিয়ার জনগণের ভবিষ্যৎ। লিবিয়ার শান্তি কতদূর তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ট্রেনে বন্ধুর ব্যাগ তুলে দিতে গিয়ে প্রাণ গেল কিশোরের গাজা উপকূলে বন্দর নির্মাণের ছবি প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র মানুষের প্রতিকার চাওয়ার কোনো জায়গা নেই : রিজভী রেলের ভাড়া না বাড়ানোর আহ্বান জাতীয় কমিটির ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহার বড়াইগ্রামে পুকুরে বিষ দিয়ে ১০ লাখ টাকার মাছ নিধন পেরুতে বাস খাদে পড়ে নিহত ২৫ ‘৭ জানুয়ারি নৌকার প্রার্থীকে জেতানোর জন্য আমরা অনেক অপকর্ম করেছি’ যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি দোয়ারাবাজারে নিখোঁজের ২ দিন পর ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার খালিস্তানিদের পাশে থাকার বার্তা ট্রুডোর, উদ্বেগ ভারতের

সকল