চুরি করতে এসে যে কেউই পুলিশকে এড়িয়ে যাবেন, এটাই সাধারণত হয়ে থাকে। কিন্তু বরিশালে এক ব্যক্তি দোকানে চুরি করতে এসে নিজেই পুলিশকে ফোন দিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নে এআর খান বাজার-সংলগ্ন এলাকায়।
ওই ঘটনার পর স্থানীয় মানুষজনের কাছে তা ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে ।
বরিশালের বন্দর থানায় ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন এসআই শহীদুল ইসলাম। ঘড়িতে তখন ভোর ৫টার একটু বেশি হবে। হঠাৎ জরুরি নম্বর ৯৯৯ থেকে তার সরকারি নম্বরে একটি ফোন এলো।
শহীদুল ইসলাম বলেন ‘ওপাশ থেকে আমাকে জানানো হল সম্মানিত একজন নাগরিক বড় বিপদে পড়েছে। বিপদ থেকে বাঁচতে তিনি পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন। তার সাথে একটু কথা বলেন। এই ভাষাতেই বলা হয়েছে। তখনো কি ধরনের সমস্যায় তিনি পড়েছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি।’
ফোনে সংযোগ দেয়া হলে ওপাশ থেকে একজন বলেন, তিনি একটি দোকানের ভেতরে আটকে পড়েছেন অনেকক্ষণ হলো বের হতে পারছেন না। তাকে যেন বের হতে সাহায্য করে পুলিশ।
‘আমি তার কাছে জানতে চাইলাম কোন এলাকায় সেই দোকান। কিন্তু তিনি বিস্তারিত জানাতে পারছিল না। জায়গাটা সম্পর্কে ভাসাভাসা বলতে পারছিল। তখন আমি বললাম আশপাশে কেউ আছে? থাকলে তাদের কাউকে ফোনটা দিতে। কিন্তু তিনি সেটা করলেন না।
‘তখন তিনি বাধ্য হয়ে জানালো আসলে তিনি দোকানে চুরি করতে এসেছিল। আশপাশের মানুষজন টের পেয়ে গেছে। বেশ মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে। এখন তিনি বের হলে তাকে ধোলাই দেয়া হবে এই ভয়ে পুলিশে ফোন দিয়েছি।’
এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু গণপিটুনিতে তার প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে, সে কারণে তিনি বাঁচতে জরুরি নম্বরে কল দেন।
শহীদুল ইসলাম বলেন, পেশাগত কারণে বিপদে পড়া মানুষকে সাহায্য তিনি বহুবার করেছেন। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা তার কোনো দিন হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ঘটনা জানতে পেরে তিনি অবাক হয়েছেন এবং সেটা নিয়ে হাসিও পেয়েছে তার। ফোন রেখে তিনি ওই এলাকায় যে টহল দল ছিল তাদেরকে বিষয়টা জানান। তারা এলাকাটি খুঁজে বের করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা। চরকাউয়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বুধবার ভোররাতে তালা ভেঙে ঢুকেছিলেন একটি মুদি দোকানে।
দোকানের মালিক ঝন্টু হাওলাদার বলেন, ‘আমি দোকানের পাশেই থাকি। একটু খুটখুট শব্দ পেলাম দোকানের ভেতর থেকে। যখন বুঝলাম যে দোকানে কেউ ঢুকেছে, টের পেয়ে গিয়ে দেখি বাইরে তালা ভাঙা। তখন বাইরে থেকে আর একটা তালা লাগিয়ে দিলাম। আর চোরও ভেতর থেকে আটকে দিল। যাতে আমরা ঢুকতে না পারি। এরপরই মনে হয় সে পুলিশে খবর দিয়েছে। পরে দেখি পুলিশ আসছে। লোকটাকে নিয়ে গেল থানায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘দোকানের মালপত্র নিয়েছিল অল্প কিন্তু টাকাগুলো সব নিয়ে নিয়েছিল। তবে তিনি এই বিষয়ে কোনো মামলা করেননি। টাকা এবং মালপত্র হারাননি তাতেই তিনি খুশি। কারণ মামলা করলে ঝামেলায় পড়তে হবে। একা দোকান চালাই। দোকান ফেলে বারবার থানায় যেতে হবে। এটা আমার জন্য লোকসান।’
বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আসাদুজ্জামান বলেন, এর আগে তার বিরুদ্ধে চুরি ও মাদকের মামলা ছিল। আমরা ওই মামলায় তাকে আদালতে পাঠিয়েছি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা