২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শুটিংয়ের নামে আসছে অবৈধ অস্ত্র

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত খেলা শুটিং। - প্রতীকী ছবি

দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত খেলা শুটিং। এ ইভেন্ট থেকে শুটাররা দেশের জন্য বয়ে এনেছে অনেক সুনাম ও বহু পুরস্কার। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের নামে দেশের মাটিতে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি আমদানি করা হচ্ছে। যার হিসাব না থাকায় সেগুলো কোনো অপরাধী চক্রের হাতে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন এবং এমনটি হয়ে থাকলে সেটি দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থায় চরম হুমকি আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুটিং ফেডারেশনের নানা অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এমন কথা উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে রিপোর্টের কপি ফেডারেশনের সভাপতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ফেডারেশনের নানা অনিয়ম দুর্নীতির পাশাপাশি উঠে এসেছে শুটিংয়ের নামে অবৈধ উপায়ে অস্ত্র ও গুলি আমদানির বিষয়। এসব অস্ত্র ও গুলি কাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে, ক্রেতারা সেগুলো কোন কাজে ব্যবহার করছে, সেটা নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। যার কারণে ফেডারেশনের কোনো কাজই সঠিকভাবে হচ্ছিল না। নানা অনিয়মের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সরকারের যুগ্ম সচিব হোসনে আরা বেগম, পুলিশের প্রথম মহিলা ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর ও ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ ছিলেন কমিটিতে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমা দেন তারা। যাতে বলা হয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ছাড়া এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেডারেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন মহাসচিব অপু।

সব থেকে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে অবৈধভাবে অস্ত্র ও গুলি আমদানি। গঠনতন্ত্র বহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে কাগজপত্রবিহীন অস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে। জাতীয় শ্যুটাররা বিদেশ থেকে দেশের ফেরার পথে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের সাথে নতুন অস্ত্র ক্রয় করে আনেন। এসব অস্ত্র শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয় এবং পরে এসব অস্ত্র অন্যের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

গত বছরের ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত ১৩ তম সাউথ এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণকারী শুটাররা ওয়ালথার কোম্পানির এলজি ৪০০ মডেলের কেবিএ ৫৭৯৯, কেবিএ ২৭৩২, কেবিএ ২২৩৪ ও কেবিএ ৮৫৯১ সিরিয়ালের চারটি এয়ার রাইফেল দিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া গত বছর অনুষ্ঠিত সুজুকি নবম ন্যাশনাল এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণে শ্যুটাররা ওয়ালথার কোম্পানির এলজি ৪০০ মডেলের কেবিএ ২২৪৫, কেবিএ ৩০০০, কেবিএ ২২৩৪ ও কেবিএ ২২৬৯ সিরিয়ালের চারটি এয়ার রাইফেল দিয়ে অংশগ্রহণ করে যা ফেডারেশন থেকে আমদানি করা হয়নি। এসব এয়ার রাইফেলের তথ্য শুটিং ফেডারেশনের নথিতে নেই। এসব অস্ত্র আনার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি।

এ ছাড়া শুটিং ফেডারেশনের অস্ত্রের গুদামের রেজিস্ট্রার বই ও অস্ত্র-গুলি তল্লাশি করে ব্যাপক অনিয়ম পায় তদন্ত কমিটি। রেজিস্ট্রার বইয়ে এক হাজার ১২৮টি লাপুয়া সুপার গুলি রহস্যজনকভাবে অতিরিক্ত হিসাব দেখানো হয়েছে। গুদামের স্টক রেজিস্ট্রার বইয়ে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ ১২ বোরের ৪০টি গুলি বিক্রি দেখানো হয়েছে। এসব গুলি বিক্রির কোনো রসিদ স্টক রেজিস্ট্রার বইয়ে লিপিবদ্ধ নেই।

২০১৭ সালের রেজিস্ট্রার বই অনুযায়ী আর সিও স্পেশাল ৩৩ গ্রাম ওজনের ২০টি ও আর সিও স্পেশাল ৪২ গ্রাম ওজনের ৭৫টি গুলির হিসাব নেই। কমিটি গুদামের স্টক রেজিস্ট্রার বইয়ে অস্ত্র ও গুলির হিসাবে নয়-ছয় করা হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে করেছে।

সব থেকে ভয়ঙ্কর ব্যাপার অস্ত্র ও গুলির হিসাব। যা জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সাথে জড়িত। দেশের যত অবৈধ কাজ আছে তার উৎসই অস্ত্র ও গুলি। এগুলো যদি বেহাত হয়ে যায় বা মানুষের হাতে অবৈধ পথে আসে তা দেশ বা রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়ে শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়েছি। রিপোর্টটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র ও গুলির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি মন্ত্রণালয় রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু নয়া দিগন্তকে বলেন, এটা তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। যে তদন্ত কমিটির কথা বলা হচ্ছে ওই কমিটি গঠনই সঠিক ছিল না। তা ছাড়া কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। ওই প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা থাকলে মন্ত্রণালয় সেটি গ্রহণ করত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে কোনো অস্ত্র বা গুলি অনিয়মের সাথে আনা-নেয়া হয়নি সেখানে তা বেহাত হওয়া বা অন্যের হাতে চলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রতিটি অস্ত্র ও গুলির হিসাব ফেডারেশনে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement