ফরিদপুরে ভুল অপারেশনে কেটে ফেলা হলো গৃহবধূর মলদ্বারের নাড়ি
- ফরিদপুর সংবাদদাতা
- ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক গৃহবধূকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে এপেন্ডিক্স অপারেশনের সময় ভুল করে মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসুস্থ ওই গৃহবধূ বর্তমানে বিএসএমএমসি হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা সুবিধাজনক নয়।
এ ঘটনার পর হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূর স্বামী রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার নিমতলার বাসিন্দা ইটভাটার দিনমজুর মো: আব্দুল মান্নান ব্যাপারী।
অভিযোগে তিনি বলেন, তার স্ত্রী হাসনা বেগম (৩৩) পেটে ব্যথাজনিত অসুস্থতার কারণে গত ২২ ডিসেম্বর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গাইনি চিকিৎসকের কাছে গেলে তাকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডা: উৎপল নাগের কাছে রেফার করা হয়। ডা: উৎপল নাগ তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এপেন্ডিক্স হয়েছে বলে জানান এবং দ্রুত অপারেশন না করলে রোগী বাঁচানো যাবে না বলে মত দেন।
মান্নান ব্যাপারী অভিযোগ করেন, ডা: নাগ তাদের বলেন, বিএসএমএমসি হাসপাতালে অপারেশন করাতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে এবং এই সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। এরপর ওই ডাক্তার তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে তাদের শহরের রথখোলায় পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের কাছে অবস্থিত পিয়ারলেস হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং একটু পরেই তিনি ওই হাসপাতালে যাবেন বলে জানান। অসুস্থ ওই মহিলার পিতা হাশেম মল্লিক বলেন, ডা: উৎপল নাগের কথা মতো এরপর তার মেয়ে হাসনাকে পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেয়ার পর তিনটি পরীক্ষা করা হয় ২৬ শ’ টাকায়। সে দিন সন্ধ্যায় তার অপারেশন করা হবে বলে জানান ডাক্তার।
তিনি জানান, সবমিলিয়ে ২৬ হাজার টাকা খরচে হাসনা বেগমের এপেন্ডিক্স অপারেশন করা হয়। অপারেশনের চার দিন পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার সময় হাসনা বেগমের অপারেশনের সেলাই কেটে ড্রেসিং করার সময় মল দ্বার দিয়ে মল বের হতে থাকে। বিষয়টি ডা: উৎপল নাগকে জানানোর পর তিনি আবারো অপারেশন করার কথা বলেন এবং সে জন্য আরো এক লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। এরপর অসুস্থাবস্থায় হাসনা বেগমকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, ডা: উৎপল নাগ আমাদের সাথে প্রতারণা করে টাকার নেশায় আমার স্ত্রীকে সরকারি হাসপাতাল থেকে ভুল বুঝিয়ে তার প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে যান এবং অদক্ষ ডাক্তার অথবা নার্স দিয়ে এপেন্ডিক্স অপারেশন করার সময় ভুল করে মলনালী কেটে ফেলেছেন। হাসনা বেগম ও মান্নান ব্যাপারী দম্পতির তিনটি মেয়ে রয়েছে। দরিদ্র এই পরিবার চিকিৎসা ব্যয় জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। এ ছাড়া মাসাধিককাল স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকায় মান্নান ব্যাপারীও কর্মহীন। তারা জানান, এখন কিভাবে অসুস্থ হাসনা বেগমের চিকিৎসা চালাবেন তা বুঝতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে ডা: উৎপল নাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএসএমএমসি হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে হাসনা বেগমকে অপারেশনের পরামর্শ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। একই সাথে অসুস্থ হাসনা বেগমকে পুনরায় অপারেশন করাতে এক লাখ টাকা দাবির অভিযোগও অস্বীকার করেন। ডা: উৎপল নাগ বলেন, ওই রোগীর এপেন্ডিক্স পেকে গিয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা তার হাত দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা কী কারণে এসব অভিযোগ করছে তা বুঝতে পারছেন না তিনি। বিএসএমএমসি হাসপাতালের পরিচালক মো: সাইফুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই রোগীর খোঁজখবর নিয়েছি। তার চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হবে না। তিনি বলেন, সার্জারি ডা: উৎপল নাগের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা