২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজস্ব আয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের

হোল্ডিং ট্যাক্স-ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায়ে জোর
-

করোনা মহামারীর কারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় কমে গেছে। এ কারণে রাজস্ব আয় বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা দু’টি। তবে জনরোষ সৃষ্টি করতে পারে এমন উদ্যোগ না নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন মেয়ররা। হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে ক্ষেত্র বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দ্ইু সিটি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৯টি নতুন খাত বের করেছে রাজস্ব আয়ের জন্য। উত্তর সিটিও হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে এর পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
গত মার্চ থেকে দেশে করোনার বিস্তার ঘটেছে। এর পর থেকেই দীর্ঘদিন থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমও চলেছে সীমিত আকারে। এ কারণে অনেকে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেডলাইসেন্স ফি দেননি। এতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় কমে গেছে। গত অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৯৭২ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মাত্র ৫১২ কোটি টাকা আয় করতে পেরেছে। একইভাবে উত্তর সিটি করপোরেশন ১১০৬ কোটি টাকার জায়গায় মাত্র ৬৪২ কোটি টাকা আয় করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছু খুলতে শুরু করেছে। মানুষের চলাচলও বেড়েছে। এ কারণে নতুন করে আয়ের আশা দেখছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চলতি অর্থবছরে ছয় হাজার ১১৯ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে, যা গত বছরের বাস্তবায়িত ২৫৮৫ কোটি টাকার বাজেটের প্রায় আড়াই গুণ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডিএসসিসি মোট ২৯টি ক্ষেত্র থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তবে এ বছর ১৯টি খাত বাড়িয়ে ৪৮টি খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীতে কয়েক লাখ রিকশা চলাচল করলেও দীর্ঘদিন থেকে নতুন রিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ ছিল। এ বছর নতুন করে রিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি। এ খাত থেকে ২৪ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নগরীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাড়ি বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এটি নিয়ন্ত্রণ করে আসত। অনেক এলাকায় একাধিক সংস্থা বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে টাকা আদায় করত। যার কোনো অংশ সিটি করপোরেশন পেত না। এ বছর থেকে ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মাসে এক লাখ টাকা করে বছরে ১২ লাখ টাকা আদায়ের টার্গেট নিয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে ডিএসসিসি। এ ছাড়া ইমরাত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য এতদিন সিটি করপোরেশন কোনো কর পেত না। রাজউক এ টাকা আদায় করে থাকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এ বছর থেকে ইমারত নির্মাণের টাকার অংশ পাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ছাড়া নগরীতে পণ্য আমদানির ওপর কর, নগর হতে পণ্য রফতানির কর, টোল জাতীয় কর, পেশা বা বৃত্তির ওপর কর, বিয়ে, তালাক থেকে কর, পশুর ওপর কর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ট্রেনিং সেন্টারের ওপর কর, বাজার ইজারা, প্রাইভেট হাসপাতালের ওপর কর, হোটেলে অবস্থানকারীর ওপর কর, ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানে রাস্তা ব্যবহারের ফিসহ নতুন ১৯টি ক্ষেত্র থেকে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএসসিসি। এ ব্যাপারে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াবো না, তবে ক্ষেত্র বাড়ানো হয়েছে। এতদিন অনেক ক্ষেত্র ছিল যেখান থেকে সিটি করপোরেশন ট্যাক্স পেত না, সেসব স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থান থেকে এখন থেকে ট্যাক্স আদায় করবে ডিএসসিসি। তিনি বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় মাত্র দুই লাখ ১৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। অথচ আমরা জরিপ করে দেখেছি প্রায় তিন লাখ প্রতিষ্ঠানের কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ রাজস্ব আয় করা হবে। এ ছাড়া নগরীতে ইমরাত নির্মাণ সংক্রান্ত ঝামেলা পোহাতে হয় সিটি করপোরেশনকে। অথচ এ ব্যাপারে এতদিন কোনো ট্যাক্স পায়নি ডিএসসিসি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকেও কোনো টাকা পেত না ডিএসসিসি। এবার সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপর দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। গত বছর ১১০৬ কোটি টাকার জায়গায় মাত্র ৬৪২ কোটি টাকা আয় করতে সক্ষম হয় ডিএনসিসি। মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মূলত হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজার সালামি, ট্রেড লাইসেন্স ফি ও সম্পত্তি হস্তান্তর খাতে আয় কমে যাওয়ায় মোট রাজস্ব আয় কমে গেছে। এ কারণে রাজস্ব আয় বাড়াতে ডিএনসিসি নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত বছরের ট্যাক্স আদায়েও ১৫ ভাগ ছাড় দিয়েছে ডিএনসিসি। আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। এ জন্য আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য আমরা চিরুনি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমরা এ অভিযান পরিচালনা করব। অনেক বাড়ি হয়তো ১০ তলা কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন দোতলা পর্যন্ত। হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়বে না, তবে হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিধি বাড়ানো হবে।


আরো সংবাদ



premium cement