কাশ্মিরের সুপরিচিত মানবাধিকার কর্মী খুররম পারভেজকে সোমবার কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে গ্রেফতার করেছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ।
খুররম পারভেজ দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসছেন।
তার সংস্থা জম্মু কাশ্মির কোয়ালিশন অব সিভিল সার্ভিস সোসাইটি (জেকেসিসিএস) ভারতশাসিত কাশ্মির উপত্যকায় ভারতীয় প্রশাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু ঘটনা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই গ্রেফতার এমন সময় হলো যখন ভারতশাসিত কাশ্মিরে দু’জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
খুররম পারভেজের স্ত্রী সামিনা বিবিসিকে জানান, সোমবার সকালে এনআইএ তাদের বাড়িতে অভিযান শুরু করে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তল্লাশি চালায়।
তল্লাশি শেষ করার পর এনআইএ সদস্যরা পারভেজকে তাদের সাথে নিয়ে যায় এবং সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে, জানান পারভেজের স্ত্রী।
পারভেজের স্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, এনআইএ সদস্যরা তার স্বামীর ল্যাপটপ এবং দু'টি মোবাইল ফোনও নিয়ে যায়।
কী অভিযোগ খুররম পারভেজের বিরুদ্ধে?
খুররম পারভেজের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধ আইনের অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার পরিবারের কাছে দেয়া গ্রেফতারি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ভারতীয় পেনাল কোডের ধারা ১২০বি (ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে), এবং ধারা ১২১ (সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা)-এর অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ইউএপিএ-এর ধারা ১৭ (সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য অর্থ সংগ্রহ), ধারা ১৮বি (সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকা) ও ধারা ৩৮ (সন্ত্রাসী সংগঠনে জড়িত থাকা)-এর অধীনে মামলা করা হবে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ধারা ৪০ (সন্ত্রাসী সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ)-এর অধীনে একটি মামলা করা হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরেও পারভেজের বাসা এবং অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিল এনআইএ।
২০১৬ সালে কাশ্মিরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা বুরহান ওয়ানি মারা যাওয়ার পর সেখানে সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করার সময়ও গ্রেফতার হয়েছিলেন খুররম পারভেজ।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়ার সময় দিল্লি বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে।
সে সময় দুই মাসের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন পারভেজ।
পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার চাপের মুখে ৭৬ দিন পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সোচ্চার
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটির (জেকেসিসিএস) সমন্বয়ক খুররম পারভেজ। গত তিন দশকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।
সেসব প্রতিবেদনে জেকেসিসিএস মানবাধিকার লঙ্ঘন, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন, গুম, হত্যা এবং কাশ্মিরের মানুষের ওপর চালানো ধর-পাকড়ের বিবিধ অভিযোগের বিষয়গুলো তুলে এনেছে।
জেকেসিসিএসের সমন্বয়কের পাশাপাশি জোরপূর্বক গুমবিরোধী সংস্থা এশিয়ান ফেডারেশন এগেইন্সট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), ফিলিপাইন্স-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্বরত রয়েছেন।
২০০৬ সালে রিবক হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পান পারভেজ। অহিংস পন্থা অবলম্বন করে মানবাধিকারের জন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৩০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের এই খেতাব দেয়া হয়।
২০০৪ সালে উত্তর কাশ্মিরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় খুররম পারভেজকে বহন করা গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়, যে দুর্ঘটনায় পারভেজ একটি পা হারান।
খুররম পারভেজ গ্রেফতারে প্রতিক্রিয়া
খুররম পারভেজ গ্রেফতারের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বহু মানবাধিকার সংস্থা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পক্ষ পারভেজের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাকে ‘মানবাধিকার কর্মীদের শাস্তি দেয়া ও মুখ বন্ধ করার’ প্রয়াস হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
কাশ্মিরের রাজনৈতিক দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) মুখপাত্র সুহালি বুখারি বিবিসি’র সাথে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন যে কাশ্মিরে কেউ মুখ খুললেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
‘কেউ কিছু প্রকাশ করতে চাইলে বা মানবাধিকার নিয়ে কোনো কথা বললে তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। পারভেজের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাটিও সেই ধারার বাইরে নয়।’
তবে খুররম পারভেজের গ্রেফতারের সমর্থন জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মিরের ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
দলটির মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুর নিউজ চ্যানেল আজতাকের এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, ‘মানবাধিকারের নামে এই সংস্থাগুলো সবসময় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অর্থায়নের কাজ করেছে। খুররম পারভেজকে এনআই যেভাবে গ্রেফতার করেছে, এর মানে তারা (এনআইএ) তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে। সময়মতো নিশ্চয়ই সব সত্য জানা যাবে।’
‘খুররম সন্ত্রাসী নন’
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ম্যারি ললোর খুররম পারভেজের গ্রেফতারের খবর টুইট করে মন্তব্য করেছেন যে ‘খুররম সন্ত্রাসী নন।’
ম্যারি ললোর টুইটারে লিখেছেন, ‘খুররম পারভেজকে কাশ্মিরে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ভারতের কর্তৃপক্ষ তাকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে অভিযুক্ত করতে পারে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তিনি সন্ত্রাসী না। তিনি মানবাধিকার রক্ষক।’
জেনেভাভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইন্সট টর্চারও খুররমের গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা