১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


প্রিমিয়াম আবায়া হিজাবের জন্য মহিলাদের পছন্দের শীর্ষে মডেস্ট কালেকশনের প্রোডাক্ট

প্রিমিয়াম আবায়া হিজাবের জন্য মহিলাদের পছন্দের শীর্ষে মডেস্ট কালেকশনের প্রোডাক্ট - ছবি : সংগৃহীত

২০১৫ সালে ফেসবুকে Modest Collection নামে একটি অনলাইন পেজ খুলে মডেস্ট ওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করেন ফারিজা বিনতে বুলবুল। তিনি প্রথম অবস্থায় মাত্র ৩টি বোরকা দিয়ে শুরু করেন, কিন্তু ৩টি ২৪ ঘণ্টার ভেতরেই বিক্রি হয়ে যায়। এরপর ২০১৯-এর দিকে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ার শপিং মলে একটা আউটলেট খোলা হয়। আর মূলত অনলাইন কেন্দ্রিক ইসলামিক ক্লদিং ব্র্যান্ড মডেস্ট কালেকশন।

প্রতিষ্ঠানের সফলতা পেলেন কিভাবে?
এই বিষয়টা নিয়ে তিনি ফেসবুক ফলোয়ারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই সময়ে আমি ফেসবুকে লেখালিখি করতাম এবং বেশ কিছু মানুষ আমার পোস্ট ফলো করতেন এবং আমার ফলোয়াররা আমাকে বিশ্বাস করতেন তাই তারাই আমার প্রথম দিকের কাস্টমার হয়ে গেলেন তাছাড়া আরেকটি বিষয় হলো আমি নিজে যেহেতু বোরকা পরি আমি নিজেই যখন এর ইউজার তাই আমি খুব এ্যাটাচড আমার প্রডাক্ট এর ব্যাপারে। আমরা শুরু থেকে এখন অবধি প্রডাক্ট ইমপ্রুভমেন্ট নিয়েই কাজ করে গেছি, যাচ্ছি।প্রডাক্ট কোয়ালিটিটাই আমাদের ক্রমশ সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

তাছাড়া বড় বড় ব্র্যান্ড গুলো তখনো অনলাইনে আসেনি তাই মার্কেট এতটা কম্পিটিটিভ ছিল না। ওই সময় খুবই লিমিটেড কিছু ফেসবুক পেইজের ওয়েবসাইট ছিল। কি মনে করে আমি ওই সময় থেকেই ওয়েবসাইট চালু করি জানি না, কিন্তু সেটা করা খুবই ভাল সিদ্ধান্ত ছিল, কারণ এখন আমাদের ওয়েবসাইট (https://modestbd.com/) দাঁড়িয়ে গেছে। যদিও আমরা দেশের বাইরে কোনো রকম এ্যাড রান করি না, তারপরও প্রবাসি বাঙালি তো বটেই, অন্য জাতীয়তার মানুষদের থেকেও অর্ডার পেয়েছি; এত ছোট একটা বিজনেসের জন্য যেটা আনএক্সপেক্টেড ছিল।

মডেস্ট কালেকশনের প্রোডাক্ট সম্পর্কে?
মডেস্ট কালেকশনের (Modest Collection) প্রোডাক্ট হলো মহিলা এবং শিশুদের জন্য আরামদায়ক পোশাক। দেখুন যে যতই ফ্যাশনেবল ড্রেস পছন্দ করে থাকনা কেন, দিন শেষে আমাদের একটা আরামদায়ক পোশাক অবশ্যই লাগে। আমরা মূলত ইসলামিক ক্লথিং এবং মডেস্ট ওয়্যার নিয়ে কাজ করছি কারণ এখানে আসলে কমফোর্টটা বেশ চ্যালেঞ্জিং যদি আপনি উষ্ণপ্রধাণ দেশের হয়ে থাকেন। এই সেক্টরে ডিজাইনারের অভাব, স্পেশালি প্র্যাক্টিক্যাল আউটফিটের অভাব। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রডাক্ট হলো খিমার যেটার প্যাটার্ন অন্ততপক্ষে ৫ বার চেঞ্জ হয়েছে, যদিও কাস্টমাররা প্রথম প্যাটার্নেই সন্তুষ্ট ছিলেন। তারপরও আমরা থেমে থাকি না আসলে। কাস্টমাররা পরার পর ফিডব্যাক দিলে সেটা আমরা নেক্সট প্যাটার্নের সময় মাথায় রাখি। খিমারে পকেট দেয়ার রিকোয়েস্ট অনেক ছিল। আবার আমার মাথায় ছিল, এটাকে হিডেন রাখতে হবে যেন দৃষ্টিকটু না লাগে। এটা কিন্তু কাস্টমারের ডিমান্ড ছিল না। ফাইনালি আমরা যে প্যাটার্নটা দাড় করালাম, এখন এটা আরো বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যদিও তারা প্রথম থেকেই আমাদের খিমার নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল তারপরও এখন কাস্টমার নিজেই আর ওল্ড প্যাটার্ন চাইবেনা। প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাটা আমাদের সবসময় থাকে। আর এখন তো একটা আইডিয়া খুব দ্রুত কপি হয়। আমরা একটা ডিজাইন বের করলে সাথে সাথেই সেটা কপি হয়ে আরো কম দামে মার্কেটে চলে আসে। কিন্তু এতে আমাদের সেল এ নেগেটিভ প্রভাব পড়ে না। কারণ, ফেব্রিক সিলেকশন, প্যাটার্ণ, মেকিং, ফিনিশিং এগুলো আসলে হুবহু কপি করা যায় না। আমাদের কাস্টমাররা বলেন, এত জায়গা থেকে কিনলাম কিন্তু মডেস্টের প্রডাক্টই ঘুরে ফিরে ব্যবহার করা হয়, এর পেছনে আমাদের টিমের যেই ডেডিকেশনটা থাকে, সেটা তো আসলে দেখা যায় না।

প্রিমিয়াম বোরকা কালেকশন, আবায়া ডিজাইন সম্পর্কে মডেস্ট কালেকশনের কর্ণধার ফারিজা বলেন, ‘দুবাই আবায়া, অ্যারাবিয়ান বোরকার ভাল কদর রয়েছে মার্কেটে। অনেকেই অনলাইনে ছবি দেখে ওগুলোর কপি করে সেল করেন। কিন্তু ওই ডিজাইনে আসলে কোন ফেব্রিকটা সুইটেবল, একইসাথে বাংলাদেশের কাঠফাটা গরমে এখানকার মার্কেটের জন্য কোন ফেব্রিক উপযোগী, এগুলোর যথাযথ জ্ঞাণ না থাকায় প্রডাক্টগুলো রেপ্লিকাই থেকে যায়, অন্যদিকে আমাদের আবায়া, হিজাব ডিজাইন করা হয় সব খুটিনাটি দিক ফোকাস করে, আর ফিনিশিং আমাদের টপ নচ আলহামদুলিল্লাহ। আর তাই আমাদের প্রডাক্ট বানাতে বেশ সময় লাগে, কস্টিং যার কারণে বেড়ে যায়। আর এধরণের প্রডাক্ট বানাতে যেরকম স্কিল্ড ওয়ার্কার দরকার, সেটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মডেস্ট কালেকশন এর চ্যালেঞ্জ বলতে এটাই, আবার স্ট্রেংথও কিন্তু এটাই।

আমাদের বেশিরভাগ আবায়া, কুর্তিতে ফ্রন্ট ওপেনিং চেইন দেয়া থাকে, যেন নার্সিং করানো যায়। আবার সাইডে জিপার দেয়া পকেট থাকে, ব্যাগের চেয়েও আমাদের বোরকা সেইফ টাকাপয়সা মোবাইল ক্যারি করার জন্য। আবার আমাদের বেশ কিছু আবায়া কুর্তির প্যাটার্ণটা এরকম, যে কোমরের দিকে বেশ স্পেস থাকে। প্রেগ্ন্যান্সি ছাড়াও আমাদের দেশের ম্যাক্সিমাম মহিলার কোমর ভারি থাকে। অনেকেরই পেটের দিকে ড্রেস টাইট হয়ে যায়। সবার তো আর মডেলের মত পারফেক্ট ফিগার হবে না। আমাদের প্রডাক্ট পপুলার হবার এটাও একটা কারণ; পরার পর সবাইকে মানিয়ে যায়।

আমাদের ক্লদিং লাইনে আরেকটা পপুলার আইটেম হলো বেবি প্রডাক্ট। বাচ্চাদের কমফোর্টেবল মডেস্ট ওয়্যার নিয়ে কাজ করছি আমরা। আমাদের আউটফিটগুলো যেহেতু কমফোর্টেবল হিসেবে সুপরিচিত, ওয়ার্কিং উইমেন, আর প্যারেন্টরা মূলত আমাদের প্রডাক্ট বেশি ব্যবহার করেন। আর হজ-উমরাহ এর মত বড় ইভেন্টে মানুষ বেস্টটাই চায়, তাই হজ-উমরাহ শপিং এও মডেস্টের নামটা আগে চলে আসে। আর সামনে আমরা আরো অনেক আইটেম রাখার পরিকল্পনা করেছি, সেটা সিক্রেট থাক।

মডেস্ট কালেকশন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি আপনাদের?
প্রশ্নের জবাবে ফারিজা বলেন,‘প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসলে সেভাবে পরিকল্পনা করা হয় না। সবসময় আমি প্ল্যান করি আমার প্রডাক্ট নিয়ে। দেখুন, মডেস্ট কালেকশন যে এ পর্যন্ত আসবে, এটাই আমি কখনো ভাবিনি। আমার ডিজাইন করতে ভাল লাগতো, তো আমি ভাবলাম, খারাপ কি, কিছু ডিজাইন করা গেল, সেইসাথে আমার ইনকামও হলো। কিন্তু শুধুমাত্র প্রডাক্ট আমাদের আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমি ভীষণ প্যাশনেট আর ডেডিকেটেড একজন মানুষ। আমি যেই কাজটাই করি, খুব যত্নের সাথে নিখুঁত করে করার চেষ্টা করি। আমি হয়ত সেভাবে পারি না, কিন্তু আমি চেষ্টা করি। আর আমি আমার টিমকে ভালোবাসি, সবাইকে নিয়েই ভাল কিছু করতে চাই। আজকে কাস্টমার আমাদের প্রডাক্ট পছন্দ করছেন, তো আমি আছি, কাল যদি না করেন, আমি অন্য কাজে লেগে যাব। প্রডাক্ট লাইন নিয়ে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু কাস্টমার ইজ দ্য কিং, তারা যদি সাদরে গ্রহণ করেন, মডেস্ট কালেকশন অটোমেটিক্যালি গ্রো করবে, যেভাবে এতদিন হয়ে এসেছে।

Outlet
Shimanto Square, Dhanmondi 2, Dhaka
Shop 302 Level 3
Website: https://modestbd.com/
Facebook Page: https://www.facebook.com/modestbd

 


আরো সংবাদ



premium cement