৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যা : আজিজুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শীর্ষনেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার আজিজুল হক।

শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আজিজুল।

এর আগে শনিবার ভোরে কক্সবাজারের ১৪ এপিবিএন পুলিশ তাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে গুলিসহ একটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আরো ৩ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন, ক্যাম্প ১/ইস্টের বাসিন্দা মোহাম্মদ আজিজুল হক, আব্দুল মাবুদের ছেলে মো: রশিদ প্রকাশ মুরশিদ আমিন, ক্যাম্প ১/ওয়েস্টের বাসিন্দা ফজল হকের ছেলে মো: আনাছ ও একই ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর সালামের ছেলে নূর মোহাম্মদ।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এপিবিএন পুলিশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আজিজুল হককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে তিনি মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় সরাসরি অংশ নেন বলে স্বীকার করেন। এর পরই তাকে এপিবিএন পুলিশ উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে শনিবার বিকেল ৫টায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে আজিজুলকে নিয়ে আসে উখিয়া থানা পুলিশ। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আদালতের বিচারক জেরিন সুলতানা আজিজুলের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।

মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কার্তিক চন্দ্র জানান, গ্রেফতার আসামি আজিজুল হক মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন বলে আদালতে স্বীকার করেছেন।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া ১ নম্বর ইস্টক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মুহিব্বুল্লাহর নিজ অফিসে তারা ৫ জন আলাপচারিতায় অংশ নেন। মুহিব্বুল্লাহকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তারা সেখানে যান। হত্যামিশনে আজিজুল হক নিজেই অংশ নেন। অপর তিন জনের কাছে অস্ত্র ছিল। এ ছাড়া আরো দুইজন তাদের সহযোগী অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ৫ জনের মধ্যে তারা তিনজন মুহিব্বুল্লাহর অফিসে ঢুকে মুহিব্বুল্লাহকে গুলি করেন। অপর দুই জন মুহিব্বুল্লাহর অফিসের বাইরে পাহারায় ছিলেন। মাত্র দুই মিনিটেই হত্যা মিশন শেষ করে তারা পালিয়ে যান।

পুলিশ জানায়, মুহিব্বুল্লাহকে খুন করার পর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সকলেই যে যার মতো করে আত্মগোপনে চলে যায় এবং নিজেরা মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। তাদের নেতাদের নির্দেশেই মুহিব্বুল্লাহকে খুন করে বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন আজিজুল। তবে মুহিব্বুল্লাহকে খুন করার পর ওই নেতারা যে যার মতো পালিয়ে যায় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তিনি। মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় সরাসরি ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে নেতৃত্ব পর্যায়ের মোট ১৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নানাভাবে জড়িত ছিল।

এর আগে সকালে গ্রেফতার আজিজুল হক পুলিশের কাছেও মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করেন।

এ নিয়ে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন ১৪নং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক মো: নাইমুল হক।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন আগের রাতে নাম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। উক্ত মিটিংয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হকসহ আরো ৪ জন উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন বলে ওই মিটিংয়ে আলোচনা হয়।

কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছেন। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছেন। তাকে থামাতে হবে। এজন্যই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক জানিয়েছেন মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অংশ নেয়।

আজিজুল আরো জানান, মুরশিদ আমিন মহিবুল্লাহর নিজ অফিসে অবস্থান করছে এমন তথ্য ধৃত অপর দুই আসামি মো: আনাছ ও নুর মোহাম্মদকে জানিয়ে তিনি দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করেন। পরে আনাছ ও নুর মোহাম্মদ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে অপেক্ষায় থাকা সাত সদস্যের মুখোশধারী দুর্বৃত্ত দলকে অফিসে আসতে বলে।

আজিজের ভাষ্যমতে, ‘তিনজনকে নিয়ে অফিসে প্রবেশ করেন তিনি, আনাস, নুর মোহাম্মদ ও অপর এক অস্ত্রধারীসহ চারজন অফিসের দরজায় অবস্থান নেন। অফিসে প্রবেশ করা এক অস্ত্রধারী ‘মুহিবুল্লাহ ওঠ’ বললে মহিবুল্লাহ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। এ সময় প্রথমজন একটি, দ্বিতীয়জন দুটি ও সর্বশেষ সন্ত্রাসী একটিসহ মোট চারটি গুলি করলে মুহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।’

হত্যাকাণ্ডের পরই অফিসের পেছনের দরজা দিয়ে আজিজ, আনাস, নুর মোহাম্মদসহ বাকিরা পালিয়ে যায় বলে জানান আজিজ।

বিফ্রিংয়ে এপিবিএন কর্মকর্তা নাইমুল হক জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্যদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাকিতে সিগারেট না দেয়ায় দোকানিকে কুপিয়ে হত্যা ট্রেনে বন্ধুর ব্যাগ তুলে দিতে গিয়ে প্রাণ গেল কিশোরের গাজা উপকূলে বন্দর নির্মাণের ছবি প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র মানুষের প্রতিকার চাওয়ার কোনো জায়গা নেই : রিজভী রেলের ভাড়া না বাড়ানোর আহ্বান জাতীয় কমিটির ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহার বড়াইগ্রামে পুকুরে বিষ দিয়ে ১০ লাখ টাকার মাছ নিধন পেরুতে বাস খাদে পড়ে নিহত ২৫ ‘৭ জানুয়ারি নৌকার প্রার্থীকে জেতানোর জন্য আমরা অনেক অপকর্ম করেছি’ যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি দোয়ারাবাজারে নিখোঁজের ২ দিন পর ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

সকল