১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


মাইলের পর মাইল বিলীন : রোধ হচ্ছে না হাতিয়ার নদী ভাঙন

-

হাতিয়ার দুঃখ নদী ভাঙন। প্রায় সত্তর বছর ধরে ভাঙছে হাতিয়া। এত দীর্ঘকাল ধরে একটি জনপদের নদী ভাঙন রোধে বাস্তব কার্যকর পদক্ষেপ আজ অবধি গ্রহন করা হয়নি। ফলে অবিরাম ভাঙনে দ্বীপটির প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা মেঘনা গ্রাস করেছে। বিলীন হয়েছে মাইলের পর মাইল গ্রাম, লক্ষ লক্ষ একর ফসলী জমি, ঘরবাড়ী, গাছপালাসহ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। লক্ষাধিক মানুষ হয়েছে ভূমিহীন। এরপরও ভাঙনরোধে সরকারের একটি সদিচ্ছার অভাবই যুগ-যুগ ধরে অবহেলা আর উপেক্ষিতই থাকছে ভাঙন কবলিত মানুষের স্বপ্ন। এ স্বপ্ন নদী ভাঙন রোধ।
হাতিয়ায় নদী ভাঙনের ইতিহাস যেমন প্রাচীন তেমনি দুঃসহ বেদনার এক আত্মচিৎকার। ১৯৫০ দশকের শেষদিকে রামগতি ও লক্ষীপুর সদরের সাথে তোয়াহ্ বাঁধ এবং পরবর্তীতে রামগতি ও মান্নান নগর বাঁধের ফলে হাতিয়ায় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এসময় দ্বীপের নীলক্ষী- চরবাটা, হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নসহ সাগরদী, হজিমিজি ও তদসংলগ্ন অনেকগুলো সমৃদ্ধ এলাকা মেঘনা গ্রাস করে হাতিয়ার মানচিত্রকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ষাটের দশক থেকে অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপের সমৃদ্ধ জনপদ রাধাখালি, চিত্রাখালি, বাথানখালি, মাইজচরা, চরভারতসেন, সাহেবানী, চৌরঙ্গী, মফিজিয়া, সুখচর, নলচিরা, গোডাউন বাজার অন্যতম। ভাঙ্গনের কবলে দ্বীপের স্বচছল সমৃদ্ধশালী পরিবারগুলো বাপ-দাদার ভিটেমাটি সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে ভূমিহীন উদ্বাস্তু হয়ে বেড়ীর ধারে, খাস জায়গায়, দুর্গম চরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। একেকটি পরিবার ৭/৮ বারের বেশী নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এদিকে চরচেঙ্গা এলাকায় ও ভাঙছে। নতুন করে দেখা দিয়েছে জাহাজমারার মোক্তারিয়া এলাকার নদীভাঙ্গন ।
ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি দ্বীপের শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাতিয়া ইউনিয়ন মডেল পাইলট হাই স্কুল, রহমানিয়া মাদ্রাসা এবং হাতিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বৃটিশ স্থাপত্য আদালত ভবন, হাতিয়া টাউন, কারুকার্য্যময় হাতিয়া জামে মসজিদ সবই এখন ইতিহাস। একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ, এএম উচ্চ বিদ্যালয়, মফিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সুখচর ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়।
অবিরাম ভাঙ্গনে বর্তমানে সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়নের সিকি ভাগেরও অস্তিত্ব নেই। ফলে ২০০৩ সালের পর এখানে ইউপি নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। চরঈশ্বর ইউনিয়নের দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসাটিও ইতিমধ্যে মেঘনায় বিলীন হয়েছে। আফাজিয়া হাই স্কুল ও হাতিয়া ডিগ্রী কলেজ ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
হাতিয়া থানা সীমানা নির্ধারণ ও পুনর্বাসন পরিষদের এক সমীক্ষায় জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ বর্গকিঃমিঃ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান প্রতি একরে ৫ লাখ টাকা হিসেবে ২৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সম্পদ।
ফি বছর নদী ভাংগনে বিপর্যস্ত হাতিয়ার মানুষের আর্তনাদ--আমাদেরকে বাঁচাও। নদী-ভাঙ্গন রোধে ব্লক বাঁধ দিয়ে দ্বীপের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষার দাবীতে হাতিয়াবাসী ঢাকা চট্টগ্রাম সহ জেলা, উপজেলায় মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছে। প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগেও দ্বীপের ৬ লাখ লোকের যুগ-যুগ ধরে চলমান প্রধান সমস্যা নদীভাঙ্গন রোধ কেন উপেক্ষিত থাকবে ?
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার রিজাউল করিম বলেন, হাতিয়ার উত্তর দিকে মাইলের পর মাইল মেঘনায় বিলীন হয়ে বর্তমানে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে ভাঙ্গন-রোধের ব্যবস্থা না নিলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে উপজেলা পরিষদকে ২য় বারের মত ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হবে। দেশ হারাবে বিশাল সমৃদ্ধশালী এক জনপদ।
হাতিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ বলেন,‘স্বাধীনতার পূর্ব থেকে প্রায় ৬০ বছর হাতিয়ার উন্নত জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ব্লক বাঁধ না হলে ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়া পর্যন্ত হাতিয়া থাকবে না। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অবহিত করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস তিনি হাতিয়া দ্বীপকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই কার্যকরী ব্যবস্থা নিবেন।’


আরো সংবাদ



premium cement
প্লে-অফের ১টি জায়গার জন্য লড়াইয়ে ৩ দল, ধোনি, কোহলি, রাহুলদের কে পাবেন টিকিট? ফরিদগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ২ জনের আত্মহত্যা মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে কেন? মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন কুয়েতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত রাফা অভিযান : ইসরাইলকে সতর্কবার্তা ১৩ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘অজানা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের’ পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্র আবা‌রো ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই নির্বাচনের পরেও সে কথাই বলেছে যুক্তরাষ্ট্র : ড. মঈন খান ভালুকায় বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ সর্বোচ্চ আয় করা খেলোয়াড় রোনালদো, মেসির অবস্থান কোথায়? ৩৬ বছর শিক্ষকতার পর রাজকীয় বিদায়

সকল