২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাবনায় ২০ বিলে জলাবদ্ধতা : ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ অনিশ্চিত

সেচ প্রকল্পের ক্যানেলে সোঁতি জালের বাঁধ
পাবনা সেন প্রকল্পের ডি-২ ক্যানেলে বাঁশ ও সোঁতিজালের বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে জলাবদ্ধতা : নয়া দিগন্ত -

বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের ডি-২ কাকেশ্বরী (নদী) নিষ্কাশন ক্যানালের দু’টি পয়েন্টে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মাছ ধরার জন্য সোঁতি জালের বাঁধ দিয়েছে। ক্যানালে এ ধরনের বাঁধ দেয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয় এবং প্রকল্পের অভ্যন্তরের ২০টি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে আসন্ন রবি মৌসুমে বিলগুলোর প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষাসহ শাকসবজি আবাদ একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা মনে করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার বেড়া কৈটোলা পাম্পিং স্টেশন থেকে মুক্তরধর বিল পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ডি-২ কাকেশ্বরী নিষ্কাশন ক্যানেল রয়েছে। এ ক্যানেল দিয়ে বর্ষা শেষে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার প্রায় ২০টি বিলের পানি কৈটোলা স্লুইসগেট দিয়ে যমুনা নদীতে গিয়ে পড়ে। বিলগুলো থেকে শত শত মণ রুই, কাতল, লওলা, মৃগেল, বোয়াল, গজার, সোল, আইড়, চিতল, ফলি, শিং, মাগুর, টাকি, টেংরা, পুঁটিমাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ কাকেশ্বরী নদীতে নেমে আসে। এই মাছ শিকারের জন্য কাকেশ্বরী নিষ্কাশন ক্যানেলের সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের শামুকজানি বাজারের দক্ষিণে ও দত্তপাড়া গ্রামের বড়গ্রাম মাঠের ভিটায় বাঁশ গেড়ে চাটাই, পলিথিন বিছিয়ে ঘন সোঁতি জালের বাঁধ পাঁতা হয়েছে। এতে পাবনা সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তরধর বিল, সোনাই বিল, ঘুঘুদহ বিল, জামাইদহ বিল, বড়গ্রাম বিল, খোলসাখালি বিল, কাটিয়াদহ বিল, আফড়া বিল, গাঙভাঙ্গার বিল, টেংড়াগাড়ির বিলসহ প্রায় ২০টি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিলগুলোর পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমির পাকা, আধাপাকা আমন ধান পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ডি-২ নিষ্কাশন ক্যানেল দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হয়েই বিলগুলোর হাজার হাজার হেক্টর সমতল ভূমি জেগে ওঠে। তখন জেগে ওঠা সমতল ভূমিতে বীজতলা তৈরি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষা, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করা হয়। এই নিষ্কাশন ক্যানেলে সোঁতি জালের বাঁধের কারণে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন করা না হলে আসন্ন রবি মৌসুমে প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করা সুযোগ তৈরি হবে না। এতে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তারা জানান। এ দিকে জমিতে আমন ধান পাকতে শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক ক্ষেতের ধান পেকেও গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় পাকা ধান জমিতেই নষ্ট হবে, নয়তো অর্ধপাকা ধান পচে যাবে।
আফড়া গ্রামের কৃষক আলতাফ ও ইউসুফ আলী জানান, আমরা এক দিকে যেমন পাকা ধান কাটতে পারছি না, অন্য দিকে বীজতলা দেয়ার জন্য সংগৃহীত ছাই জমিতে প্রয়োগ করতে পারছি না। এই ছাই বেশি দিন এভাবে ফেলে রাখলে এর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।
এ দিকে নিষ্কাশন ক্যানেলে যারা সোঁতি জালের বাঁধ দিয়েছেন তারা বলছেন, আমরা প্রতি বছর সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য অধিদফতরের সুপারিশে বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ থেকে ডি-২ নিষ্কাশন ক্যানেল (কাকেশ্বরী নদী) লিজ নিয়ে মাছ শিকার করছি। মাছ শিকার করতে হলে এ ধরনের বাঁধ দিতেই হবে।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাছ চাষের জন্য ডি-২ নিষ্কাশন ক্যানেল লিজ দেয়া হয়েছে। তবে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে সোঁতি জালের বাঁধ দিতে বলা হয়নি। এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কৃষকের ক্ষতি হবে এমনটি আমরা কখনোই চাইব না।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার গোস্বামী বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের স্থানীয়ভাবে সোঁতি জালের বাঁধ অপসারণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এতে যদি কাজ না হয়, তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম জানান, ডি-২ নিষ্কাশন ক্যানেলে যদি কেউ সোঁতি জালের বাঁধ দিয়ে থাকে সেটি অবৈধ। এলাকা পরিদর্শন করে এবং ভ্রাম্যমাণ বসিয়ে সোঁতিজাল ও বাঁশের বাঁধ অপসারণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement