২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুই সন্তান বিক্রি করেও চলছে না সংসার

-

জন্মের পরেই বিক্রি করেন পঞ্চম সন্তানকে। বছর দুয়েক পর ষষ্ঠ সন্তান জন্ম নিলে তাকেও বিক্রি করে দেয়া হয়। কিন্তু কেন! কারণ অভাব। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারা শঙ্কা থেকেই এভাবে দুটি মেয়ে সন্তান বিক্রি করেছেন মর্জিনা। এ ঘটনা কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের।
মায়ের ভালোবাসা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না। প্রত্যেক মা চায় তার সন্তানরা বেঁচে থাকুক, ভালো থাকুক। মানুষ যতই কষ্টে থাকুক না কেন, কখনো নিজের সন্তানের ওপর সেই আঁচ পড়তে দেয় না।
এ এলাকার ফকির মোহাম্মদ গুচ্ছগ্রামে বসবাস করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মর্জিনা বেগম (৩৫)। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন। প্রতিনিয়ত টানাপড়েনে চলে তার সংসার। দু’বেলা খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয় মর্জিনা বেগমকে। বাপের বাড়ি ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় খেয়ে-না-খেয়ে দিন কাটে তাদের। মর্জিনার সাত সন্তানের মধ্যে রয়েছে তিন ছেলে ও চার মেয়ে। অভাবের কারণে কোনো সন্তানকেই এখনো স্কুলে ভর্তি করতে পারেনি। এমনকি অপুষ্টিতে ভুগে এক সন্তান মারাও গেছে। জীবিত থাকা সব সন্তানই অপুষ্টিতে ভুগছে। সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে বেগ পোহাতে হয় মর্জিনা বেগমকে। ছোট সন্তানদের বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠালেও ফিরে এসেছে তারা। অবশেষে নিজের দুই মেয়েকে বিক্রি করে দিতে পিছু পা হননি তিনি। সন্তানদের বিক্রি করলেও মর্জিনার অভাবের কপাল এখনো খোলেনি।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, বিক্রি করা ওই দুই মেয়ে তাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ সন্তান। বর্তমানে ওই দু’জনের বয়স যথাক্রমে দুই মাস ও দুই বছর। জন্মের পরেই তাদেরকে বিক্রি করে মর্জিনা দম্পতি। দুই মেয়ে বিক্রি করে মোট ২৩ হাজার টাকা পেয়েছিল তারা। তাদেরকে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ও খলিলগঞ্জ এলাকায় বিক্রি করা হয়।
সন্তান বিক্রি করা প্রসঙ্গে মর্জিনা বলেন, ‘অভাবের কারণে বাচ্চা দুইটাকে পোষানি দিছং। মুই পঙ্গু, মোর স্বামীও পঙ্গু। কামাই করবার পাই না তাই কোলের দুইটা ছাওয়াক পোষানি দিছং। যে টাহা পাইচং তাও শ্যাষ। এলা বাকি বাচ্চাগুলাক কি খায়্যা বাচাং।’
মর্জিনার প্রতিবেশী বানেছা বলেন, ‘অভাবের কারণে তারা দুইটা বাচ্চা পোষানি দিছে। কী করবে, ভাত-কাপড় দিবের পায় না। মর্জিনার হাত-পা অবশ। উয়ার ভাতার তো পাগলা জোগলা মানুষ। কামাই কইরবার পায় না খায় কী।’
একই এলাকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘খলিলের জমিজমা নাই, সরকারের দেয়া গুচ্ছগ্রামে থাকে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজ করবার পায় না। আশপাশের লোকজন যা দেয় তা-ই খায়। মাঝে মধ্যে চেয়ারম্যান-মেম্বার কিছু দেয়। এ ছাড়া খলিলের শ্বশুর মাসে কিছু ধান-চাউল দিয়ে সহযোগিতা করে। বাচ্চাগো ভরণপোষণ করবের না পাইরা দুডা বাচ্চাক বেচে খাইছে।’
বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জু হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনা শোনার পর সংযোগটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু সরকার বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের খলিল দুটো কন্যাসন্তানকে বিক্রি করেছে। এটা দুঃখজনক ব্যাপার। ডিজিটাল বাংলাদেশে সরকার গৃহহীন ও অভাবী মানুষের জন্য কাজ করছে। ওই ইউনিয়নের মেম্বার- চেয়ারম্যানদের উচিত ছিল তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তারা পাশে না থাকলে আমাকে জানাতো আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিতাম।’
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে জান্নাত রূমি বলেন, বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিতে লোক পাঠিয়েছি। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করে এ বিষয়ে মন্তব্য করব।’


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ

সকল