২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মৌসুমের আগেই আলুর দরপতন লোকসানের আশঙ্কায় কৃষক

-

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। এখন ১৫-২০ টাকায় আগাম জাতের নতুন আলু কেনা যাচ্ছে খুচরা বাজারে। চাষি পর্যায়ে দাম নেমেছে মাত্র ১০ টাকায়। যদিও পুরোপুরি আলু ওঠার মৌসুম শুরু হবে আরো এক-দুই সপ্তাহ পর। দামের দ্রুত পড়তিতে খুবই চিন্তিত কৃষকেরা। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও আলু নিয়ে চরম লোকসানের আশঙ্কায় তারা।
গত দেড়-দুই মাস ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম বেশি থাকলেও প্রকৃত কৃষকরা যখন বাজারে পণ্যটি আনছেন তখনই এ দর পতন হলো। এর দু’টি প্রধান কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গত মৌসুমের শেষ দিক থেকে দাম অনেক বেশি থাকায় লাভের আশায় চলতি মৌসুমে আলুর চাষ বাড়িয়ে দিয়েছেন চাষিরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেশে সার্বিক আলুর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি। মহামারী করোনার প্রার্দুভাবে রফতানিও কমেছে। ফলে বাড়তি আলু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যও বলছে এমনটাই। চলতি মৌসুমে দেশে এক কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছেÑ যা গত বছরের প্রকৃত উৎপাদন থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন বেশি। গত অর্থবছর (২০১৯-২০) দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৯ লাখ ১৭ হাজার টন।
অধিদফতরের হিসাব মতে, দেশে বছরে আলুর চাহিদা মাত্র ৭৭ লাখ টন। অর্থাৎ বছরে ২৬ থেকে ৩৭ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। এ আলু কাজে লাগানোর একমাত্র উপায় রফতানি। অথচ আলু রফতানির চিত্র মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। বছরে রফতানি হচ্ছে বড়জোর ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টন।
এমন পরিস্থিতিতে প্রতি বছর ভরা মৌসুম ও মৌসুমের শেষে আলু নিয়ে দারুণ পীড়াপীড়ি শুরু হয় কৃষকের। তাদের ক্ষেত, মাঠ, উঠান, হাট সর্বত্রই আলুময় হয়ে যায়। দাম না পাওয়ায় সেই আলু ক্ষেতেই রেখে চলে যান তারা। আবার অনেক মৌসুমে কোল্ডস্টোরে আলু রাখলেও দাম পান না তেমন। সব মিলিয়ে আলুই তখন কৃষকদের গলার ফাঁস হয়েই দাঁড়ায়। এ বছরও এমন শঙ্কা দেখছেন আলুচাষিরা।
কিচকের কৃষক ডা: আবদুল মোমেন বলেন, ক’দিন আগে আলু কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ২৬ টাকায়। এখন সেই আলু ১০ টাকা। দু’দিন পরে হবে ছয় টাকা, তারপর চার টাকায়ও আলু নেবেন না ব্যাপারিরা। এখনো এ অঞ্চলে ক্ষেত থেকে ২০ শতাংশ আলু ওঠেনি। এর মধ্যেই পড়ে গেল দাম। তিনি আরো বলেন, এত আলু খাবে কে? হুজুগে সবাই এবার আলু চাষ করেছেন। কিন্তু এর তো চাহিদা থাকে না। শেষে কোল্ডস্টোরে রেখে জমি বেচে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলার কিচকের আফাকু কোল্ডস্টোরেজের স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ১০ দিন আগে প্রতি মণ আলু ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে সেই আলু হঠাৎ দাম কমে পাইকারিতে প্রতি মণ ৪০০ টাকায় এসে ঠেকেছে।
বেশ কয়েকজন কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, এ মৌসুমে এক কেজি আলু উৎপাদনের খরচ পড়েছে ৮-৯ টাকা। কৃষক পর্যায়ে এর নিচে দাম নামলে লোকসান গুনতে হবে। এ ছাড়া এবার আলু উৎপাদিত হচ্ছে এক কোটি ১৩ লাখ টনেরও বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মুজাহিদ সরকার জানান, এ বছর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ১৯ হাজার হেক্টরে। এখানে ভরা মৌসুম আসতে আরো প্রায় এক মাস বাকি থাকলেও এরই মধ্যে জমি থেকে আগাম জাতের আলু উত্তোলন করছিলেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূল আর রোগ-বালাই কম হওয়ায় এ বছর ক্ষেতের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
বগুড়া জেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদুজ্জামান জানান, এ বছর জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর কিন্ত আলু চাষ হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টরে চাষ হয়েছে আগাম জাতের আলু। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদন হয়েছে ৪৫-৫০ মণ আলু। কিন্তু হঠাৎ দাম কমে পাইকারিতে প্রতি মণ ৪০০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় চিন্তিত এ অঞ্চলের কৃষক। বছর মৌসুমের শুরুতে দাম না থাকায় আলুতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement
দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে

সকল