০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সুনামগঞ্জে তৌহিদ হত্যার ২ বছর

খুনের মামলার বাদিকে চুরির মামলায় হয়রানি

-

স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তৌহিদের মা। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। মেয়ে দু’টোর পড়াশোনা বন্ধ। ছোট্ট ছেলেটা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে এখন দিনমজুর। আরেক ছেলে পরের দোকানে থাকে। এভাবে যে কয় টাকা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে সংসারের খরচ চলে। আমি এখন পরের বাড়িতে কাজ করি। এভাবেই জীবনের কষ্টের কথা জানালেন দুই বছর আগে খুন হওয়া সুনামগঞ্জের তৌহিদের মা।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ব্যবসায়ী ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম। বাংলাবাজার ইউনিয়নর দক্ষিণ কলাউড়া গ্রামে তৌহিদের বাড়ি। এলাকার সবাই এক নামেই চেনে তাকে। রাস্তার পাশে দু’টো টিনশেডের জীর্ণ ঘর। একটা ফাঁকা, আরেকটাতে মানুষ থাকে। বর্তমানে কেমন যেন অদ্ভুত নিরবতায় আচ্ছন্ন তৌহিদের বাড়ি। মৃত আব্দুল আহাদের ছয় সন্তানের মধ্যে তৌহিদ ছিল বড়। স্থানীয় কলাউড়া বাজারের মসজিদ মার্কেটে বিকাশ ও মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা ছিল তার।
৯ নভেম্বর দোয়ারাবাজারের বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী তৌহিদ হত্যার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ন্যায়বিচারের আশায় এখনো দিন গুনছে তার পরিবার। বড় ছেলে হারিয়ে এই দুই বছরে আর্থিক টানাপড়েন আর মামলার গ্লানি টানতে গিয়ে তার পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। পুলিশের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়া এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিসমিল্লাহ গার্মেন্টের ব্যবসায়ী শামীম মিয়া, ইতোমধ্যে জামিনে বের হয়ে এখন কুমিল্লায় অবস্থান করেছে বলে জানা গেছে। প্রধান আসামির জামিন হলেও, আইনি জটিলতায় বিচারের নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। মামলাটি এখন পিবিআইর তদন্তাধীন রয়েছে। তৌহিদ হত্যা মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তৌহিদের মা। এ ছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চুরির মামলা দিয়ে উল্টো তৌহিদের পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তৌহিদের পরিবারের।
তার পরিবারের দাবিÑ তৌহিদের সাথে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কারোরই শত্রুতা ছিল না। মূলত টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। খুন হওয়ার সময় তৌহিদের সাথে ওই টাকার কোনো হদিস মেলেনি আজো। এই ঘটনার পর পুরো ইউনিয়নে তৌহিদ হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহৎ জনমত গড়ে ওঠে। সভা সমাবেশও হয়। তৌহিদ হত্যার রক্তের দাগ লেগে থাকা বিসমিল্লাহ গার্মেন্টও বন্ধ করে দেয়া হয়। মাত্র দুই বছর সময়ের ব্যবধানে এখন চাপা পড়ে গেছে তৌহিদ হত্যার বিচারের ইস্যু। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর বিসমিল্লাহ গার্মেন্ট খুলে দেয়া হয়। এর পর থেকে এখনো দেদার চলছে বিসমিল্লাহ গার্মেন্টের ব্যবসা। কিন্তু তৌহিদের পরিবারের সামান্য খোঁজখবর পর্যন্ত রাখেনি কেউ।
তৌহিদ হত্যামামলার বাদি পক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন তৌহিদের পরিবার। নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এটা অধিকতর তদন্তে পাঠিয়েছে, যা এখনো তদন্তাধীন।

 


আরো সংবাদ



premium cement