২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পরিত্যক্ত দ্বীপে প্রবেশ ঠেকায় ‘অতিপ্রাকৃত শক্তি’

-

কয়েক শ’ বছর আগে সেখানে গড়ে উঠেছিল এক সভ্যতা। আজ শুধুই পড়ে রয়েছে ভাঙা প্রাসাদের প্রাচীর, সমাধিস্থল। দেখে চমকে ওঠে পর্যটকেরা। ভাবে, এই জনবিরল দ্বীপে কিভাবে গড়া হয়েছিল এই বিশাল পাথরের ইমারত? নান মাদলের ওই সভ্যতা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।

টেমওয়েন দ্বীপে গড়ে উঠেছিল ওই নান মাদল সভ্যতা। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে রয়েছে ফেডারেল স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়া, যা চারটি দ্বীপরাষ্ট্র নিয়ে তৈরি হয়েছে। চারটি দ্বীপরাষ্ট্রের মধ্যে একটি হলো পহ‌নপেই। পহ‌নপেই দেশের মধ্যেই রয়েছে টেমওয়েন দ্বীপ, যেখানে এক সময় গড়ে উঠেছিল নান মাদল সভ্যতা।

টেমওয়েন দ্বীপে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি আয়তাকার প্রাচীর। ওই প্রাচীর এত বিশাল পাথর দিয়ে তৈরি, যা দেখে হতবাক হয় পর্যটকেরা। পাথরগুলো যদিও খোদাই করা নয়। মনে করা হয়, বিভিন্ন আকারের পাথর জুড়ে এই ইমারত তৈরি করা হয়েছে।

এখনো যে ভগ্নাবশেষ পড়ে রয়েছে, ওই প্রাচীরের উচ্চতা ৩৭ ফুট। আর সেগুলো চওড়ায় প্রায় ১০ ফুট। কয়েকটি পাথরের ওজন ৬০ টনের কাছাকাছি।

প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে, কয়েক শ’ বছর আগে নান মাদল সভ্যতা গড়ে তোলার সময় যন্ত্র ছাড়া ওই বিশাল পাথর নড়ানো বা তোলা কিভাবে সম্ভব হলো? এখানই জন্ম নেয় বেশ কিছু অলৌকিক গল্প।

পহনপেইয়ে ওই নান মাদল সভ্যতার পত্তন নিয়ে বেশ কিছু গল্প প্রচলিত রয়েছে। ওই দেশের অনেকেই বলে, টেমওয়েন দ্বীপে দু’ভাই মিলে ওই সভ্যতার পত্তন করেছিলেন। তা প্রায় ১১৮০ সালে।

দু’ভাইয়ের নাম ছিল ওলোসিহফা এবং ওলোসোহফা। পহ‌নপেইয়ের পশ্চিমে কোথাও থাকতেন তারা। মনে করা হয়, পহ‌নপেইয়ে গিয়েছিলেন স্রষ্টার জন্য প্রার্থনাস্থল তৈরি করতে।

অনেক খুঁজেও প্রার্থনাস্থল তৈরির জায়গা পাননি দু’ভাই। শেষে পহ‌নপেইয়ের এক পাহাড়ের ওঠে টেমওয়েন দ্বীপ দেখতে পান তারা। তখন সেখানেই প্রার্থনাস্থল তৈরি শুরু করেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, ওই দু’ভাই জাদুবিদ্যা জানতেন। পহ‌নপেইয়ের অন্য এক প্রান্ত থেকে ভারী ব্যাসল্ট পাথর উড়িয়ে এনে বিশাল নান মাদল সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন তারা।

স্থানীয়েরা আরো বলে, নান মাদল সভ্যতার ইমারত গড়ে তোলার সময় এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তখন অন্য ভাই সদেলিউর সাম্রাজ্য গঠন করেন।

নান মাদল সভ্যতা গড়ে উঠেছিল একেবারে সমুদ্রের ধারে। সেখানে পানীয় বা খাবার কিছুই ছিল না। মনে করা হয়, দ্বীপের একেবারে ভেতরে গিয়ে পানীয় ও খাবার সংগ্রহ করত সাধারণ মানুষ। আর সেগুলো ভোগ করতেন সদেলিউর সম্রাটেরা।

এরপর সদেলিউর সাম্রাজ্যের পতন হয়। নাহনমওয়ার্কিস শাসন শুরু হয়। ওই শাসকেরা নিজেদের পানি, খাবার নিজেরাই দ্বীপের ভেতরে গিয়ে সংগ্রহ করে আনতেন। রোজ ওই কাজটা করা বেশ সমস্যাজনক। ফলে তারা নান মাদল ছেড়ে চলে যান।

মনে করা হয়, প্রাচীনকালে প্ল্যাটিনামের কফিনে নান মাদল সভ্যতার সম্রাটদের সমাধি দেয়া হতো। ওই সব কফিন সমাধিস্থ করা হতো পানি নিচে।

জনশ্রুতি রয়েছে, পানির নিচে ওই কফিনের সন্ধায় পায় কয়েকজন। তারা পানিতে ডুব দিয়ে কফিন ভেঙে সংগ্রহ করত প্ল্যাটিনাম। ওই প্ল্যাটিনাম বিক্রি করত জাপানিদের কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ওই দ্বীপ ছিল জাপানের অধীনে।

মূলত যে দু’জন ওই পানিতে ডুব দিয়ে প্লাটিনাম তুলে আনত, তাদের নাকি অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। জাপান ওই প্লাটিনামের কফিনের কথা বিস্মৃত হয়। তখন আর ওই সবে নজর দিতে পারেনি জাপান। ফলে উদ্ধার হওয়া ওই কফিনের বিষয়ে কোনো তথ্যই আর দিতে পারেনি জাপান। তাই ওই কফিন নিয়ে আজও রয়েছে অনেক রহস্য। অনেকেই ওই সবের অস্তিত্ব মানতে চায় না।

নান মাদলের ওই সমাধি নিয়ে আরো অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে নান মাদলে ছিল জার্মানির শাসন। ওই সময় দ্বীপের গভর্নর ভিক্টর বার্গ একটি বন্ধ সমাধির ভেতর প্রবেশ করেছিলেন। তিনি নাকি বিশাল এক দৈত্যের কঙ্কাল দেখতে পেয়েছিলেন।

ওই কঙ্কালের উচ্চতা নাকি ছিল প্রায় তিন মিটার। পর দিন, ১৯০৭ সালের ৩০ এপ্রিল রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় বার্গের। চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেননি, কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছিল।

স্থানীয়দের দাবি, কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি ওই সভ্যতা ঘেরাও করে রেখেছে। তারা তাদের এলাকায় হস্তক্ষেপ মেনে নেয় না। ফলে নান মাদলে আর কেউ কখনো বাস করতে পারেননি। তাই পরিত্যক্ত হয়েই পড়ে রয়েছে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement