২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে তালেবান

- ছবি : ডয়চে ভেলে

জানুয়ারির শেষদিকে তালেবানের উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১১ দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিল। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন বলে তালেবান জানিয়েছে।

‘আফগানিস্তান রিজিওনাল কো-অপারেশন ইনিশিয়েটিভ' শীর্ষক সম্মেলনে ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের মতো দেশ অংশ নিয়েছে।

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর থেকে এখনো কোনো দেশের স্বীকৃতি না পেলেও চীন, ইরান, ভারতের মতো দেশগুলো এক ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। যেমন জানুয়ারির শেষদিকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মাওলানা আসাদুল্লাহ বিলাল করিমির অ্যাক্রিডিটেশন গ্রহণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

তবে চীনের দাবি, কূটনৈতিক এই অ্যাক্রিডিটেশন তালেবান শাসনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া নয়।

অবশ্য তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর আফগানিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে চীনের কয়েকটি কোম্পানি তালেবানের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি একটি তেল চুক্তি রয়েছে। এর আওতায় প্রথম বছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন। পরবর্তী তিন বছরে তা ৫৪০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

এদিকে, তালেবান ক্ষমতা নেয়ার দুই মাসের মধ্যে ইরান কূটনীতিবিদ হাসান কাজেমি কমিকে আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও অত্র অঞ্চলের লাভের জন্য তালেবানের সাথে যোগাযোগ জরুরি বলে মনে করে ইরান।

ভারতের দৃষ্টিভঙ্গীও প্রায় একই। তারা আফগানিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর জোর দিচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ, আইসিজির এক প্রতিবেদন বলছে, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো কাবুলের শাসকের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পক্ষে। ওই অঞ্চলের এর কূটনীতিক আইসিজিকে বলেছেন, ‘আমরা তালেবান সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের মনোভাব পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকতে পারি না। কারণ আমরা ফ্রন্টলাইনে আছি।’

ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিংক ট্যাংক ‘আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্ক’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা থমাস রুটিগ মনে করেন, প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হলে তা তালেবানের জন্য বিজয় হবে।

তিনি বলেন, নারী অধিকারসহ তালেবানের নানা নীতির কারণে পশ্চিমের সাথে যোগাযোগ অনেক কঠিন হবে। তাই তালেবান এখন অন্য অঞ্চলের দেশগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে, কারণ তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সহজ মনে হচ্ছে।’

আইসিজির প্রতিবেদন বলছে, সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আদর্শিক মিল খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে না। এর পরিবর্তে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মতো ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।

রুটিগ বলেন, মধ্য এশিয়ার দেশ থেকে শুরু করে চীন, ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো উগ্রবাদদমন। উগ্রবাদী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রভিন্স’ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় ওই দেশগুলো তালেবানের সাথে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

তালেবান এখন উগ্রবাদী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানকে রাজনৈতিক চাপ দিতে তালেবান এমন করতে পারে। দ্য ডিপ্লোম্যাট মনে করছে, তালেবান নিষ্ক্রিয় থাকায় পাকিস্তান তার দেশে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তবে এসবের মধ্যেও আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নতুন রুট খোলাসহ অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত টোমাস নিকলাসন তালেবানের আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। কয়েক দশকের যুদ্ধের পর এটি ‘প্রয়োজন’ বলে মনে করছেন তিনি। সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement