২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘চীনা ল্যাব থেকে কোভিড এসেছে'- এই তত্ত্বের কী যুক্তি আছে?

চীনের হুবে প্রদেশের উহান শহরের ভাইরোলজি ল্যাব থেকে কোভিড ছড়িয়েছিল বলে একটি তত্ত্ব আছে। - ছবি : বিবিসি

‘সারা পৃথিবীতে ৬৮ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া কোভিড-১৯ ভাইরাস খুব সম্ভবত চীনের একটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরি থেকেই ছড়িয়েছিল’ মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের প্রধান ক্রিস্টোফার রে এ কথা বলার পর বহু-আলোচিত ‘ল্যাব-লিক থিওরি’ নিয়ে নতুন কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের পর তিন বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী পরের প্রায় তিন বছর ধরে চলা বিশ্বব্যাপী মহামারীতে ৬৮ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে কীভাবে এই করোনাভাইরাসের উদ্ভব ঘটেছিল বা তা ছড়িয়ে পড়েছিল, তা আজো রয়ে গেছে এক রহস্য হিসেবেই। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা তত্ত্ব, জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু কোনোটির পক্ষেই কোনো সংশয়াতীত প্রমাণ মেলেনি।

বিবিসির সংবাদদাতা জন সাডওয়ার্থ বলছেন, এখন এফবিআইয়ের প্রধান এ বিতর্কে যোগ দেবার ফলে এর পেছনে থাকা বিতর্ক আর রাজনীতি-দুটোই প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিককালে অন্য কোনো বৈজ্ঞানিক বিতর্ক নিয়ে এত বিভক্তি ও তিক্ততা সৃষ্টি হতে দেখা যায়নি।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও বিভক্তি
বিতর্কের বিষয় হলো কোভিড সংক্রমণের সূচনা হয়েছিল কোথায়? উহান শহরের একটি বাজারে? নাকি ওই শহরেই চীনা সরকারের নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরিতে?

জন সাডওয়ার্থ বলেছেন, তার একটি পডকাস্ট অনুষ্ঠানের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন ভাইরাস-বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে দু'ভাগ হয়ে গেছেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষের উদ্দেশ্য এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাদের অনেকের পেশাগত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেকের বন্ধুত্ব ভেঙে গেছে।

একজন ভাইরোলজিস্ট জন সাডওয়ার্থকে বলেছেন, তার মতে ‘ঘোড়ার বিষ্ঠার সাথে তুলনীয়' এই ‘ল্যাব-লিক’ তত্ত্বকে সময় খরচ করছে এমন কোনো অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিতে চান না।

কোভিডের উৎস নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং সরকারি বিভাগগুলোও ঐকমত্যে পৌছাতে হিমশিম খেয়েছে। ভাইরাসটি যে একটি গবেষণাগার থেকেই কোনোভাবে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। এই তত্ত্বে সম্প্রতি 'নিম্ন' ও 'মাঝারি মাত্রার' নিশ্চয়তা প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগ এবং ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই। এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার রে সম্প্রতি এ কথাই আমেরিকান ফক্স নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন।

বিবিসির জন সাডওয়ার্থ বলছেন, জানা যায় চারটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বাস করে ভাইরাসটি সম্ভবত প্রকৃতি থেকেই এসেছিল। অন্য দুটি সংস্থা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এসব সিদ্ধান্তের ভিত্তি হচ্ছে গোপনীয় তথ্য।

নানা তত্ত্ব, কিন্তু কোনোটিই নিশ্চিত নয়
বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক! সব পক্ষ থেকেই করোনাভাইরাসের উদ্ভব নিয়ে নানা সময় নানারকমের তত্ত্ব দেয়া হয়েছে।

কিছু জরিপে আভাস দেয়া হয় যে, চীনের উহান শহরের একটি বাজার। যেখানে বন্যপ্রাণী এবং সামুদ্রিক খাবার বিক্রি হতো–সেখানেই কোনো প্রাণী থেকে সম্ভবত ভাইরাসটি মানুষের দেহে ঢুকে পড়েছিল।

আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে যাকে বলা যায় ‘প্রাকৃতিক উৎস তত্ত্ব’। এর মূল কথা হলো এই করোনাভাইরাসটি কোনো কোনো প্রাণীর মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই ছড়িয়েছিল। এর সমর্থকরা বলেন, সার্স-কোভ-টু (পরবর্তীকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া নাম) ভাইরাসটি প্রথম দেখা দেয় বাদুড়ের দেহে । তার পর তা মানুষের দেহে ঢুকে পড়ে, সম্ভবত অন্য কোনো একটি প্রাণীর মাধ্যমে, যাকে বলা হয় ‘ইন্টারমিডিয়ারি হোস্ট।‘

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞানী এ তত্ত্বকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা যায় যে বাদুড় বা অন্য কোনো প্রাণীর দেহে এমন কোনো ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না, যার সাথে কোভিড-১৯-এর মিল আছে। তখন এ তত্ত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।

চীনা কর্তৃপক্ষ নিজেরা করোনাভাইরাস সম্পর্কে বলছে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বা চীনের অন্যত্র থেকে উহানে যে হিমায়িত গোশতের চালান আসছিল, তার মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে।

আরেকটি গবেষণার দিকেও অঙ্গুলি নির্দেশ করেছিল চীনা সরকার। সেটি হচ্ছে উহান ইনস্টিটিউটের নেতৃস্থানীয় একজন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শি ঝেংলির একটি গবেষণা, যা ২০২১ সালে প্রকাশ করা হয়।

ওই গবেষণায় বলা হয়, তারা ২০১৫ সালে একটি খনিতে বাসা-বাঁধা বাদুড়ের দেহে আট ধরনের করোনাভাইরাস চিহ্নিত করেছিলেন। তবে তার মতে এগুলোর চাইতে প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই থেকে আসা ভাইরাস মানুষের জন্য অধিকতর হুমকি হতে পারে।

চীনা প্রচারণাকারীরা আরেকটি তত্ত্বও ছড়িয়েছিল, যার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। এ বক্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির। যা ৫০ মাইল দূরের ফোর্ট ডেরিক নামে মার্কিন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্র থেকেই করোনাভাইরাস তৈরি করা এবং ছড়ানো হয়েছে।


ল্যাব-লিক তত্ত্বকে কি 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব'?
ল্যাব-লিক তত্ত্বকে এক সময় একটা প্রায় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবেই দেখা হতো। তবে নানা সময় বিশেষজ্ঞরা এ রকম সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিলেও তা জল্পনা হিসেবে সব সময়ই রয়ে গেছে।

চীন ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০২১ সালে এক যৌথ তদন্তের পর বলেছিল, ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাস কোনোভাবে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল এমন সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। কিন্তু পরে এ তদন্তের সমালোচনাও হয়েছিল।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস গেব্রেইয়েসুস একটি নতুন তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, সব তত্ত্বই এখনো উন্মুক্ত রয়েছে এবং এগুলো আরো খতিয়ে দেখা দরকার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সরকারি সংস্থাও ‘মাঝারি-মাত্রার নিশ্চয়তা’ দিয়ে বলেছে, করোনাভাইরাস কোনো চীনা ল্যাবরেটরি থেকে ছড়ায়নি বরং কোনো প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। তবে এই বাজারটি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরেই উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি, যেটি বিশ্বের একটি নেতৃস্থানীয় ভাইরাস গবেষণা ল্যাবরেটরি এবং এতে করোনাভাইরাস নিয়েই গবেষণা চলছিল।

কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের এক বিশ্লেষণে জানায়, উহানের ল্যাবরেটরি সংঘটিত কোনো ঘটনার ফলেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়েছিল এমন জোরালো সম্ভাবনা আছে। তারা এ-ও বলেছিল যে এই সিদ্ধান্তের ওপর তাদের আস্থা 'নিম্ন মাত্রার' এবং ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না।


কী বলা হচ্ছে 'ল্যাব-লিক' তত্ত্বে?
এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, মধ্য চীনের উহান শহরের একটি ল্যাবরেটরি থেকে করোনাভাইরাস কোনোভাবে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিল। সেটা অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনাবশত ঘটে থাকতে পারে বা অন্য কিছুও হতে পারে। এ তত্ত্বের যারা সমর্থক তারা এ জন্য অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির দিকে।

এটি ভাইরাসসংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বের একটি নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাদুড়ের দেহে থাকা করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছিল। উহান শহরের যে বাজারটি থেকে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, তা থেকে ওই ইনস্টিটিউটে গাড়িতে যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগে।

এই তত্ত্বের সমর্থকরা বলছেন, সম্ভবত উহান ইনস্টিটিউট থেকে ভাইরাসটি কোনো উপায়ে বাইরে চলে যায় এবং ওই বাজারটিতে অনেকের দেহে সংক্রমিত হয়। বেশির ভাগই মনে করেন যে এটি সম্ভবতঃ জঙ্গল থেকে সংগৃহীত কোনো ভাইরাস ছিল, যাতে কোনো পরিবর্তন ঘটানো হয়নি।

মহামারীর একেবারে শুরুর দিকে এই বিতর্কিত তত্ত্ব ছড়িয়েছিল এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিস্তারে হাওয়া দিয়েছিলেন। তখন এমন কথাও কেউ কেউ বলেছিলেন, সম্ভাব্য জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ভাইরাসটি তৈরি করা হচ্ছিল।

একটি 'অতিগোপনীয়' মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট যা ২০২১ সালে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে বেরিয়েছিল। তাতে বলা হয়, উহান শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির তিনজন গবেষক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। আক্রান্তদের লক্ষণের সাথে কোভিড-১৯-এর উপসর্গ এবং সাধারণ ফ্লু - দুটিরই মিল আছে বলে সরকারি তথ্যে বলা হয়। তাই এই দাবির প্রকৃত প্রাসঙ্গিকতা কি তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব ছিল না। এছাড়া এ তথ্যের উৎস কী, তাও জানানো হয়নি।

ভাইরাসের গবেষণা কত বিপজ্জনক?
বিভিন্ন দেশে যেসব ল্যাবরেটরিতে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা হয়, সেখানে অতি উচ্চ মাত্রার সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। এর কারণ, এ ধরনের গবেষণার কাজে কোনো ত্রুটি ঘটলে তা বড় বিপদ ঘটাতে পারে। এ নিয়ে কথা হয় যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বলের সাথে।

তিনি জানান, যেসব গবেষণাগারে মার্স বা সার্স ভাইরাসের মতো বিপজ্জনক করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ হয়, সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘লেভেল থ্রি বায়োসিকিউরিটি’ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘এর আওতায় গবেষকরা অনেক ধরনের যন্ত্রপাতি, নিরাপদ ক্যাবিনেট, সুরক্ষিত পোশাক এবং অন্য সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস গবেষণার ক্ষেত্রে তাদের আবশ্যিকভাবে স্বতন্ত্র শ্বাস নেবার যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। কর্মীদের কাপড়চোপড় ও সব রকম বর্জ্য বিশেষ ব্যবস্থায় দূষণমুক্ত করা হয়।’

অধ্যাপক জোনাথন বলের কথায়, কোনো ভাইরাস নিয়ে কাজ করার সময় সব 'স্যাম্পল' নিরাপদ কনটেইনার বা ক্যাবিনেটে রাখা নিশ্চিত করা হয়। যাতে তা বাইরে বেরুতে না পারে, বা দুর্ঘটনাবশত কেউ তার সংস্পর্শে না আসে।

তিনি বলেন, ‘এজন্য 'নেগেটিভ প্রেশার রুম' নামে বিশেষ ধরনের কক্ষ ব্যবহৃত হয়, যা থেকে দুষিত বাতাস বাইরে বেরোতে পারে না।’

ল্যাবরেটরিতে এ ধরনের গবেষণার সময় দুর্ঘটনার কথা যে আগে কখনো শোনা যায়নি তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ২০২২ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে চীনের বেজিংএ একটি ল্যাবরেটরিতে অন্তত দু‘বার নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘনের কারণে নয়জন লোক সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে একজন মারা যায়। তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরেও এরকম দুটি ঘটনার কথা রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ল্যাব-লিক তত্ত্ব ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
ল্যাব-লিক তত্ত্বের সাথে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম জড়িয়ে যাওয়ার ফলে একে অনেকেই ভুয়া তথ্য প্রচারের সাথে এক করে দেখেছিলেন। কারো কারো মতে, ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে মহামারী মোকাবিলা করেছিল তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবার একটা ‘উদ্দেশ্যমূলক এবং এমনকি জাতিবিদ্বেষী চেষ্টা’ ছিল এটা।

তবে কিছু বৈজ্ঞানিক ওই সময় বলেছিলেন, সার্স-কোভ-টু ভাইরাসের জেনেটিক গঠন পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয়েছে যে এটির কোনোভাবেই কোনো ল্যাবরেটরি থেকে আসা সম্ভব ছিল না। অন্য কিছু বৈজ্ঞানিক প্রথম দিককার কোভিড রোগীদের উপাত্ত পরীক্ষা করেন। যারা উহানের সেই বাজারটি থেকে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তাতেও ভাইরাসটির ‘প্রাকৃতিক উৎসের’ প্রমাণ মিলেছিল।

ট্রাম্পের সময় এই 'ল্যাব-লিক' বিষয়ে শুরু হওয়া পররাষ্ট্র দফতরের একটি তদন্ত বন্ধ করে দেয় পরের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। কিন্তু ২০২১ সালের মে মাসে বাইডেনই আবার এই তত্ত্ব নিয়ে অনুসন্ধান জোরদার করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেন।

বাইডেনের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা ড. অ্যান্টনি ফাউচি, যিনি আগে প্রাণী থেকে মানবদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তত্ত্ব সমর্থন করতেন। তিনিও ২০২১ সালে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে এ ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে এমন ধারণার ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত নন।

তত্ত্বের পেছনে রাজনীতি?
জন সাডওয়ার্থ বলেছেন, এফবিআইয়ের পরিচালক এমন এক সময় এই 'ল্যাব লিক' তত্ত্বের প্রতি সমর্থন জানালেন। এতে বিজ্ঞানীদের একটি অংশের সন্দেহ হচ্ছে এর পেছনে রাজনীতি কাজ করছে কী না।

তারা বলছেন, এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার রে-কে নিয়োগ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর রিপাবলিকান পার্টি এখন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তারা এই ল্যাব-লিক তত্ত্বের প্রতি তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করছে। তবে এটাও ঠিক যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সময়, এই তত্ত্বের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারটি এখন অনেকটা ঝাপসা হয়ে গেছে। এ কারণেই হয়তো কিছু বিজ্ঞানী এখন তাদের এই উদ্বেগের কথা প্রকাশ করতে পারছেন যে ল্যাব-লিক তত্ত্বটি হয়তো খুব তাড়াতাড়িই খারিজ করে দেয়া হয়েছিল। যেমন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ল্যারি গস্টিন, যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও একজন উপদেষ্টা, তিনি করোনাভাইরাস প্রাকৃতিক উৎস থেকেই ছড়িয়েছে, এ তত্ত্বের সমর্থক।

কিন্তু তিনি এটাও মনে করেন যে ল্যাব-লিক তত্ত্বটিকে একেবারেই খারিজ করে দেবার পক্ষে এখনো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই এবং এমনটা করা ভুল হবে।

তিনি আরো বলেছেন, ‘জনস্বার্থের বিষয়কে উড়িয়ে দেয়া বিজ্ঞানের উচিৎ নয়। এটা ঠিক যে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অস্তিত্ব আছে, কিন্তু ওই ল্যাবরেটরিটির ব্যাপারে তথ্য চাওয়া কি ট্রাম্পের ভুল ছিল? না।’ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে কংগ্রেস হয়তো এখন নতুন নতুন তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারবে।

মার্কিন বিজ্ঞানীরা উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সাথে গভীরভাবে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু চীনের সরকারি সংস্থাগুলোর হাতে বা গবেষণা আর্কাইভগুলোতে হয়তো এখনো এমন উপাত্ত রয়েছে তা কাজে লাগতে পারে।

অন্যদিকে কোভিড-১৯ ভাইরাস যে চীন থেকেই এসেছিল। তা উহানের বাজার হোক বা ল্যাবই হোক, এমন যে কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে দেশটির সরকার।

চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া এ ধরনের আভাসকে চীনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চেষ্টা বলে অভিহিত করে থাকে। মনে হচ্ছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস-রহস্য হয়তো আগামী দিনগুলোতে ওয়াশিংটন ও বেজিং-এর মধ্যেকার তিক্ত বৈরিতা এবং রাজনীতির চক্রেই আবর্তিত হতে থাকবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

সকল