২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীনে করোনায় মৃতদের স্মরণে ৩ মিনিটের নিরবতা

চীনে করোনায় মৃতদের স্মরণে ৩ মিনিটের নিরবতা
চীনে করোনায় মৃতদের স্মরণে ৩ মিনিটের নিরবতা - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মারা যাওয়াদের প্রতি শোক প্রকাশের লক্ষ্যে সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেশব্যাপী তিন মিনিটের নীরবতা পালন করেছে চীন। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তিন হাজার ৩০০-এর বেশি মানুষের স্মরণে উৎসর্গ করা হয় শনিবার দিনটিকে। চীনের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সারা দেশের মানুষ দাঁড়িয়ে তিন মিনিটের নীরবতা পালন করে মৃতদের স্মরণে।

এসময় একসাথে সকল গাড়ি, ট্রেন এবং জাহাজের হর্ন বাজানো হয়, বাজানো হয় বিমান হামলা করার সময়কার সতর্কতামূলক সাইরেন। আর এই পুরোটা সময় অর্ধনমিত রাখা হয় জাতীয় পতাকা।

হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত বছরের শেষদিকে প্রথমবার প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়। তারপর মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। এখন পর্যন্ত ১৮১টির বেশি দেশে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ, মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।

চীনের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র উহানে সকাল ১০ টায় সকল ট্রাফিক লাইটে তিন মিনিটের জন্য লালবাতি জালানো হয়। চীনের সরকার এটিকে 'শহীদ'দের - ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৪ জন স্বাস্থ্য কর্মীর - প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের একটি সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এর মধ্যে লি ওয়েনলিয়াং নামের একজন ডাক্তারও ছিলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য যাকে চীনের সরকার তিরস্কার করেছিল।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সহ বেইজিংয়ের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা তাদের পোশাকে বুকের কাছে সাদা ফুল আটকে নীরবতা পালন করেন।

শনিবারের এই স্মরণ অনুষ্ঠান চীনের বার্ষিক কিংমিং উৎসবের সাথে একই দিনে করা হয়। কিংমিং উৎসবে লাখ লাখ চীনা পরিবার তাদের পূর্বসূরিদের স্মরণ করে থাকে।

৩১ ডিসেম্বর প্রথমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চীন জানায় যে অজানা কারণে নিউমোনিয়া হয়ে তাদের দেশে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা হচ্ছে। ৩ জানুয়ারি উহানের 'অজানা ভাইরাস' নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন তৈরি করে বিবিসি। সেসময় মোট ৪৪ জনের মধ্যে ঐ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর ছিল।

১৮ জানুয়ারির মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ৬০ জন - তবে তখনও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছিলেন যে আসল সংখ্যাটা প্রায় ১,৭০০'র মত হতে পারে। এরপরের দুই দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ জনে। বেইজিং, সাংহাই, শেনজেনের মত বড় শহরগুলোতেও মানুষের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়।

২৩ জানুয়ারিতে উহানকে লকডাউন করা হয়। ঐ সময় পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জন মারা যায় এবং তাইওয়ান, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫৭০ জনের মধ্যে সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চীনের অন্যান্য এলাকাতেও ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করা হয়েছে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, শিথিল করা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সংক্রান্ত কঠোর নিয়ম। চীন ধারণা করছে তাদের দেশে যেই স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।

দুই মাসের বেশি সময় লকডাউন থাকার পর গত সপ্তাহে আংশিকভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় উহান।

শনিবারে চীন জানায় তাদের দেশে নতুন ১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৮ জনের দেহেই ভাইরাস এসেছে বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে যেন চীনের ভেতরে ভাইরাস আক্রান্ত কেউ ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চীন বিদেশিদের দেশে আসায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বিশ্বের অন্যান্য জায়গার কী অবস্থা?
চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, অন্যান্য অনেক দেশে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বিশ্বে এখন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে।

শুক্রবারের হিসেব অনুযায়ী আগের ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে ১,৪৮০ জন, যেটি মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে যে কোনো দেশের হিসেবে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যুর ঘটনা।

শুক্রবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫৩ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৩২ হাজার মানুষের বেশি।

ওদিকে ইতালি ও স্পেনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইতালিতে শুক্রবার আরো ৭৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪ হাজার ৬৮১। স্পেনে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছে ১০ হাজার ৯৩৫ জন, যার মধ্যে আগের দিন মৃত্যুর সংখ্যা ৯৩২।

তবে এই দুই ইউরোপিয়ান দেশের জন্য কিছুটা আশার খবর হল, নতুন করে সংক্রমণের সংখ্যা কমছে দুই দেশেই। বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement