২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চিঠি কীভাবে লিখব

-

আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ নাসিরুদ্দিন। আমার কাছে অতি প্রিয় এই মানুষটি। তার জন্য কতটা মায়া-ভালোবাসা আমার ভেতরে কাজ করে তা কখনো বলে প্রকাশ করতে পারব না। নাসিরুদ্দিন আমার চাচাতো ভাই। বয়স দশের কাছাকাছি। আমি তাকে সবসময় দাদা বলে ডাকি। আর সে আমাকে ডাকে দাদু বলে। এই মানুষটিকে আমি নিজের চোখের সামনে একটু একটু করে বড় হতে দেখেছি। ওর ছোটবেলা কেটেছে আমার পাশে থেকে। কাকী সারা দিন কাজ করতেন আর ওকে রেখে যেতেন আমার কাছে। ও খুব ছোট হলেও ওর সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুসুলভ ছিল। ওর ভালোলাগা, মন্দলাগা আমার সাথে শেয়ার করত। আমিও করতাম। খুনসুটিতে মেতে থাকতাম দু’জন সারাক্ষণ। ছেলেটা খুব কাঁদুনে হয়েছে। যখন তখন অকারণে দীর্ঘসময় ধরে শুধু কাঁদতেই থাকে। ওর কান্নার মধ্যে ওকে হাসিয়ে দেয়াটা আমার কাছে খুব সহজ ব্যাপার ছিল। ও কান্না করলেই আমি এটা সেটা বলে হাসিয়ে দিতাম। একদিন এসে আমাকে বলে কি জানেন? বলে দাদু শুনো, আমি কান্না করার সময় তুমি আমার সাথে একদম কথা বলবে না। আমি বললাম কেন? সে বলে, তোমার জন্য আমি শান্তিমতো কান্নাও করতে পারি না, তুমি কথা বললেই আমার হাসি পেয়ে যায়।
কত মজার মজার স্মৃতি আছে ওর সাথে আমার তা বলে শেষ করা যাবে না। এই মানুষটিকে ভালোবাসতে গিয়ে আমার নিজের ভাইবোনের কত বকা শুনেছি। তবুও মায়া ছাড়তে পারিনি।
সে কওমি মাদরাসায় পড়ে। গত রোববার বোডিং নিয়ে চলে গেছে। যাওয়ার সময় আমাকে বলতে এসেছিল। দাদু, আমি চলে যাচ্ছি। ওর চোখ ছলছল করছিল, আমারও বুক ভেঙে খুব কান্না আসছিল। আমাকে কাঁদতে দেখলে সেও কেঁদে ফেলবে, তাই অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়ে তাকে বিদায় দিয়েছি।
নাসিরুদ্দিনকে ছাড়া পুরো বাড়িটাই যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
খুব একা লাগছে নিজেকে। গতকাল আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। আমি বললাম, দাদা তোমাকে খুব মিস করি। তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না। সে বলে, আমিও তো করি। পরে বললাম, আমি একটা প্ল্যান করেছি জানো? বলে- কী প্ল্যান বলো? বললাম, তোমাকে আমি চিঠি লিখব। ব্যাপারটি সুন্দর হবে না। সে তো হেসে একাকার। পরে বলল, ঠিক আছে- লিখো। বললাম, তুমিও চিঠির উত্তর দিও। বলল, ঠিক আছে দেবো। এখন কথা হচ্ছে, আমি চিঠি লিখতে পারি না। কীভাবে শুরু করতে হয় তাও জানি না। নিয়মকানুন কিচ্ছু জানি না। এখন আমি আমার দাদাকে একটি চিঠি কীভাবে লিখব?


আরো সংবাদ



premium cement