২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জীবনের জবানবন্দী

জীবনের জবানবন্দী -

মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র। কেউ থাকে অট্টালিকায় কেউ ফুটপাথে, কেউ থাকে ভরপুরে, কেউ খালি হাতে। জীবনের এই বহুরূপী রূপের জন্যই জীবন এত মূল্যবান। জীবনের নির্মম বাস্তবতা তারাই বুঝে যাদের দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে, ফুটপাথে অথবা ডিভাইডারে ঘুমিয়ে থেকে। জীবনের চরম উপহাস সেই উপলব্ধি করতে পারে যার জীবনের গতিপথ হারিয়ে গিয়ে দিন কাটে চরম বিষণœতা আর হতাশায়। জীবন ধারণের তাগিদেই মানুষ জীবিকার অনুসন্ধান করে। সেই জীবিকার আবার কত বিচিত্র রূপ! কুলি, মজুর, বাদাম বিক্রেতা, চা-বিক্রেতা, রুটি বিক্রেতা, বই বিক্রেতা, ওষুধ বিক্রেতা, আখের রস বিক্রেতা, ছোলা-মুড়ি বিক্রেতা, আচার বিক্রেতা, আমড়া বিক্রেতা, জুতা বিক্রেতা, রিকশাচালক, ভ্যানচালক ইত্যাদি।
শীতের রাতে জীবন বাঁচানো কতটা কষ্টকর তা শুধু ওই পথশিশু এবং ছিন্নমূল মানুষজন জানে। বিশাল অট্টালিকায় যারা থাকেন তারা কিভাবে শীতের তীব্রতা অনুভব করবে? দামি গাড়িতে করে যারা চলাফেরা করেন তারা কিভাবে বুঝবে মাইলের পর মাইল হেঁটে ক্লান্ত হওয়ার কষ্ট? জীবনের নির্মমতার চিত্র কেবল তারাই আঁকতে পারে যারা নির্মমতার শিকার। দালান-কোঠায় বসবাসকারীদের কাছে জীবন মানে বিনোদন আর কতক সুখময় মুহূর্তের সমষ্টি। কিন্তু পথশিশু এবং ছিন্নমূল মানুষদের কাছে জীবন মানে দু’মুঠো খেয়ে বাঁচা আর ঘুমানো। যদিও সে দু’মুঠো খাবার জোগাড় করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়।

বিত্তবানদের এত সম্পদ থাকার পরও তারা শান্তিতে ঘুমোতে পারেন না অথচ পথের ধারে শুয়ে থাকা পথশিশু কিংবা ছিন্নমূল মানুষের দিকে একটু লক্ষ করলেই দেখতে পাওয়া যায় তারা দুশ্চিন্তাহীনভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। তাদের ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানা-বালিশের প্রয়োজন হয় না। একটু জায়গা আর ছেঁড়া-মলিন এক টুকরো কাপড় জড়িয়ে চরম রোদেও তারা পরম শান্তিতে ঘুমোতে পারে। তাদের মলিন জামা-কাপড়, অপরিচ্ছন্ন শরীর অথচ তাদের কোনো রোগ-বালাইয়ের দুশ্চিন্তা নেই। সূর্য উদিত হলে সকাল হয়, সূর্য অস্ত গেলে সন্ধ্যা হয়, এরপর রাত এভাবে তাদের দিন কেটে যাচ্ছে। অথচ এই জীবনের প্রতি তাদের কোনো অভিযোগ নেই। আর আমাদের জীবনের প্রতি কত শত অভিযোগ, কত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আফসোস!! তাদের যাপিত জীবনের সাথে আমাদের যাপিত জীবনের বিস্তর ব্যবধান।

ট্রেনে ভ্রমণ করার সময় একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে ট্রেনের রাস্তার পাশে কালো প্লাস্টিক আর বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করে কতক মানুষজন। যুগের পর যুগ ধরে তারা এভাবেই বসবাস করে যাবে কিন্তু তাদের জীবনের জবানবন্দী নিতে গেলে দেখা যাবে তারা যে অবস্থায় দিনাতিপাত করছে তাতেই তারা পরম সুখী। সুখৈশ্বর্য মানুষের জীবনে আপেক্ষিক বিষয়। জীবনের পরতে পরতে মানুষকে হাজারো বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। মানুষের জীবনের বিচিত্র রূপ আমাকে বরাবরই আশ্চর্যান্বিত করে। তাই মানুষের জীবনের জবানবন্দী শুনতে অন্যরকম আগ্রহ কাজ করে। বিশ্বের প্রতিটি কোণে বসবাসকারী মানুষের জীবনের জবানবন্দী শোনার আগ্রহ ব্যক্ত করে আমার লেখার ইতি টানছি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল