০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জ্যোৎস্না রাত

জ্যোৎস্না রাত -

রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। হাবিব বিছানায় পিঠ ঠেসে শুয়ে আছে। মনটা তার বেশ ভাবুক ভাবুক। নানান কল্পনা জল্পনায় চোখ এখন পর্যন্ত বুজেনি। তাই কিছুটা উদাস মনে মশারির আড় টেনে জানালার পাট খুলে বাহিরে তাকাল। শীতের রাত। জানালা খুলতেই এক ঝাঁপটা ঠাণ্ডা বাতাস এসে লাগল তার গায়ে। মনে হলো সারা শরীরে এক বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেল। হাবিব দ্রুত লেপের কোণ টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলো। বাহিরটা বেশ আলোকময়। অন্যান্য দিনের মতো কোয়াশার কোনো আচ্ছাদন চোখে পড়ছে না। আকাশটাও স্বচ্ছ। দূর নীলিমা স্পষ্ট চোখে পড়ে। সামনে পুকুরের উপর বিশাল চাদোয়া টেনে দাঁড়িয়ে আছে বড় আমগাছটা। আকাশের দিকে তাকাতেই হাবিবের নজর কাড়ল বড় পিতলের থালার মতো সোনালি আভায় ঝলমলে চাঁদটা। আমগাছের ঘন পাতার গোচরে লুকিয়ে আছে সে। মাঝে মাঝে পাতাগুলো ফাঁক করে উঁকি দিচ্ছে হাবিবের দিকে। আর তখনই গ্রিলের ফাঁক গলে জ্যোৎস্না ঠিকরে পড়ছে তার গায়ে। মশারির ছোট ছোট ছিদ্র ভেদ করে তার শরীরকে মাখিয়ে দিচ্ছে স্বর্গীয় আভা। নিরুত্তাপ চাঁদটির প্রতিবিম্ব এসে পড়েছে সদর পুকুরটির মধ্যে। আর তাতে পুকুরটি রক্তাভ রূপ নিয়েছে। সাথে সাথে বুড়ো আমগাছটার পাতাগুলোও নেচে উঠছে তার জ্যোৎস্নারাশিতে। তার থেকে বিচ্ছুরিত আলোয় হাবিবের দুচোখের তারা ঝলমলিয়ে উঠল। সমগ্র পৃথিবীতে যেন আলোর হিল্লোল পড়েছে।
হাবিব কিছুটা প্রচ্ছন্ন হয়ে তাকিয়ে থাকল চাঁদটির দিকে। মনে হলো চাঁদটিও তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সে হাবিবের চোখে চোখ রেখে যেন তাকে বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া বহু স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। হাবিবের পলকহীন তাকিয়ে থাকায় চাঁদটি যেন একটু লজ্জা পেল। তাই ঘন আমপাতাগুলোর আড়ালে আস্তে করে মুখ বুজে নিল। বিছানা থেকে তার জ্যোৎস্না চুষে নিয়ে লুকিয়ে পড়ল পাতাগুলোর মাঝে।


আরো সংবাদ



premium cement