০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মনে পড়ে খুব

-

তখন কর্টুন দেখতাম ‘পাপাই’। ওরে কি প্রিয় পাপাই! পাপাইয়ের মুখে পাইপ আর আমার নানাভাই লুকিয়ে লুকিয়ে স্মোক করে। পাপাই স্পিনাচ খেয়ে সব সমস্যা সমাধান করে। আর নানাভাই একটা টুলবক্স নিয়ে ম্যাকগাইভারের মতো যাবতীয় অসুস্থ মেশিন সারিয়ে ফেলে! মনে করতাম পুরোটাই মিল। তার জন্য সাবকনশাসলি আমি নানাভাইকে পাপাই ভাবতাম আর উনাকে পাপাই ডাকতাম!
নানাভাই এত যতœশীল যা মানে স্বাভাবিক না। বাংলা সিনেমা স্টাইলে কারেন্টের খাম্বার সাথে মাথায় ধাক্কা খেলেও ভুলে যাওয়ার মতো নয়! সেভেন এইটে পড়ি- বুড়ি, তবুও রাস্তা পার করে দিতো স্কুলে যাওয়ার সময় যেখানে তার নিজেরই হাঁটতে কষ্ট হয়। বলতাম, ‘নানাভাই, খিদা লাগছে।’ হাতে মানিব্যাগটা ধরিয়ে দিতো। গল্প করতাম আমরা। আমি অনেক নতুন এবং সুন্দর ইংলিশ শব্দ শিখেছি নানাভাইয়ের কাছ থেকে। নানাভাইয়ের সামনে চোখ ঘসলেও তিনি জিজ্ঞেস করতে থাকতেন আমি কাঁদি নাকি। হাউকাউ শুরু করে দিতেন! এমন অনেক হয়েছে যে, আমি কাঁদছি তাই তিনিও কান্না করছেন আমার সাথে!

রূপগঞ্জের ফ্যাক্টরিতে নানাভাই যখন ম্যানেজারির চাকরি করতেন তখন সপ্তাহখানেক তাদের সাথে ফ্যাক্টরি কোয়ার্টারে ছিলাম। আমার অত্র জীবনের সবচেয়ে মধুরতম সাত দিন ছিল সেই ট্রিপ। আম্মু আব্বু বেবি কেউ নাই। শুধু আমি, নানু আর নানাভাই। সকাল হলেই নানু সুন্দর করে চুল আচড়ে দিতেন। যতœ করে আমার চশমা মুছে দিতেন। তারপর ফাটাফাটি কিছু একটা নাস্তা করে নানাভাইয়ের সাথে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতাম। পিপড়ার ডিম নাকি মাছেদের কাচ্চি বিরিয়ানি। কোথা থেকে নানাভাই এই দুর্লভ জিনিস উদ্ধার করলেন তার ঘটনা শুনতাম। আগে যদি জানতাম এমন আনন্দের সময় আর ফেরত আসে না তাহলে কিছু মেমোরি আলবৎ লিখে রাখতাম!
তাকে একবার কি বুঝে যেন জিজ্ঞেস করলাম, ‘নাতি-নাতনীর মধ্যে আপনার সবচেয়ে পেয়ারের কে?’ নানাভাই তার সিলগালা হাই-ফ্রিকোয়েন্সি হোহোহাহা হাসি দিলো। কোনো জবাব দিতে চাইল না। কিন্তু আমি ঘাউড়া কিসিম। প্রচুর মুলামুলি করলাম। কাতুকুতু দিলাম। তারপর নানাভাই উত্তর দিলেন, ‘আবাবিল’। আমার খালামনির বড় ছেলে।’

তৎক্ষণাৎ একটা প্রবল ঝুনঝুন শব্দ হলো। আমার ক্লাস থ্রি’র কাচহৃদয় ভেঙে হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো হয়ে গেল। আমি ৯৯% কনফার্ম ছিলাম আমার নামই উঠবে লটারিতে। কিন্তু ১% এর জয় হয়ে গেল! এরপর থেকে আমি বহুবার বোঝার চেষ্টা করেছি যে, আদৌ ভাইয়া নানাভাইয়ের বেশি প্রিয় কি না। যদিও কাজ- কথা- মুখের হাবভাব কোনো কিছুতেই আমি স্নেহের কোনো ওপর নিচ দেখিনি। জিন্দেগিতেও তিনি বায়াসড না। এখানেই আমার নানাভাই স্পেশাল। আমার নানাভাই স্মার্ট। এই লোকটার কাছ থেকে শিখেছি কত দারুণভাবে স্নেহ প্রকাশ করা সম্ভব। আমিও আমার নানাভাইকে অনেক স্নেহ করি। খুব সম্ভবত আম্মুর চেয়েও বেশি পেট পুড়ে নানু-নানাভাইয়ের জন্য। কারণ এটাই সায়েন্স। যারা আমাকে সর্বাবস্থায় হাজার হাজার কিউসেক মমতা অফার করল তাদের জন্য রিফ্লেক্সের মতো আমার মনেও মমতা তৈরি হবে। হ্যাঁ, এক পিস জীবনে কষ্টে কাইত চিত হওয়ার মতো এক্সপেরিয়েন্স আছে। কিন্তু, সব ছাপিয়ে আমি আল্লাহর কাছে অনেক গ্রেইটফুল আমার নানু-নানাভাইয়ের জন্য। আজকাল এই ভেবে সিরিয়াস পীড়া লাগে যে তারা বুড়ো হয়ে গিয়েছে। জানি না কে কয়দিন বাঁচব। শুধু দোয়া করতে থাকি যাতে তাদের সাথে আবার কিছু সুন্দর সময় কাটাতে পারি। মজা করে চানাচুর মুড়ি মাখিয়ে খেতে পারি। নানাভাই কেন এত কাছে থেকে টিভি দেখে এই ব্যাপারে তাকে একটু হুলস্থুল বকা দিতে পারি! নানুর সাথে এক নাম্বারে উইন্ডো শপিং করতে পারি।


আরো সংবাদ



premium cement