০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শ্রাবণ সন্ধ্যা

শ্রাবণ সন্ধ্যা -


সকাল থেকেই বৃষ্টি। শ্রাবণ মাসে এত বৃষ্টি হওয়াটা একটু স্বাভাবিক মনে হলেও হয়তো রেবা নিজেও চোখের পানি ফেলতে পারে না, তাই আকাশ তার হয়ে এই কাজটি করছে। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে সে, অনেকক্ষণ হলো বৃষ্টি দেখছে। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার অতীত এই বৃষ্টির ফোঁটায় ভিজে যাচ্ছে।
দুই বছর আগে, এই শহরের ধনী পরিবারে রেবার বিয়ে হয়েছিল। স্বামী রাজিন শুধু চেহারাতেই সুন্দর না, সব দিক দিয়েই চমৎকার জীবনসঙ্গী! রেবার মা সেলাইয়ের কাজ করেন। বাবা ছোটবেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। দু’টি ছোট ভাই আর মাকে সাহায্য করার জন্য রেবা কলেজে পড়াশোনা বন্ধ করে দিলো। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে চেষ্টা করল। টিউশনি ছেড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি ধরল। তবে স্কুলের অধ্যক্ষের আর্থিক সহায়তায় সে আবার পড়াশোনা শুরু করে। মা-ও সেলাইয়ের কাজ করে সংসারের গাড়ি টানার চেষ্টা করছিলেন।
সময় যত গড়াচ্ছে রেবার বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তাও বাড়ছিল মায়ের। রেবার মধ্যে কোনো অভাব নেই, সে গরিব ছাড়া। যৌতুক দেয়ার সাহস নেই। একবার একজন বিখ্যাত সমাজকর্মী স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে এলেন। রেবাকে তার ছেলে রাজিনের জন্য পছন্দ করলেন। বিষয়টি অধ্যক্ষ ম্যাডাম রেবার মাকে জানালেন। শুনে তো তিনি বিশ্বাস করতে পারলেন না। তারপর কোনো চিন্তা না করেই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যান। সবাই রেবাকে পরী বলে ডাকতে শুরু করে। মা-ও বলেন, আমার পরী যেন কারো নজরে না পড়ে।
বন্ধু-বান্ধব আর পাড়ার সবার চোখে রেবা পরীর মতো সুন্দর। বিয়ের পর যখন সে শ্বশুরবাড়িতে এলো, তখন সেও নিশ্চিত হলো যে, সে সত্যিকারের পরী।

প্রথম কয়েক মাস স্বপ্নের মতো কেটে গেল! ধীরে ধীরে সে অনুভব করল প্রতিবেশীরা আর তার আশপাশের লোকজন হয় তাকে ঠাট্টা করে বা তাকে করুণার চোখে দেখে। শাশুড়িকেও এ কথা বলতে শুনল। কিন্তু তিনি বললেন যে, সবাই তাকে হিংসা করছে।
একদিন রেবা জানতে পারল, রাজিনের অনেক নারীর সাথে সম্পর্ক। সে সমাজের লোকজনের কাছে এতটাই ঘৃণিত যে কেউ তাকে তাদের মেয়ে তার কাছে বিয়ে দিতে চায়নি। সে জন্যই বলি হলো এক গরিবের মেয়ে। একসময় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে বিবাদ এতটাই বেড়ে যায় যে, মার খেয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় রেবা। বাড়িতে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। সে সংসারের প্রেমে পড়েছিল, সে চেয়েছিল তার সাথে আপস করে তাকে নিয়ে যাক। কিন্তু তালাক দেয়ার পর রাজিন তাকে ছেড়ে চলে গেল, সংসার আর হয়ে ওঠেনি।
দুই ভাই-ই পড়ালেখায় মেধাবী হয়ে ওঠে আর তারা স্কলারশিপ পায়। যার কারণে তারা দু’জনেই শহরে যায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রস্তুতি নিতে। এখন রেবা আর তার মা বাকি। সে আবার স্কুলের চাকরি নিলো, সবাই তার দিকে খুব মমতায় তাকালো বা তাকে ব্যঙ্গ করে বলল, ‘পরী রাজত্ব হারিয়ে আবার পুরনো কুঁড়েঘরে এসেছে।’ রেবা এখন এসবের কথার সাথে অভ্যস্ত। তার মন খারাপ লাগা বন্ধ! আজ পুরো দুই বছর পর রাজিনের খবর পেলো, সে এইডসে মারা গেছে!
‘আরে! রেবা মা! এই ভাঙা জীবন নিয়ে আর কার জন্য অপেক্ষা করবি!’
এই দুই বছরে তার জীবনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটি ঠিক যে, কেউ তাকে আর পরী বলে না, এমনকি মা-ও না!


আরো সংবাদ



premium cement