২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হৃদয়ে প্রশান্তি

হৃদয়ে প্রশান্তি -

আমাদের জীবন বড়ই বিচিত্রময়। নানা নাটকীয়তার মিলনায়তন আমাদের এই জীবন। যেখানে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনার উপস্থিতি থাকে ঘূর্ণায়মান। এ জন্য আমাদের দেহ-মন ও মেজাজ কখনো ভালো, কখনো মন্দ, কখনো বা অশান্ত ও বিষণ্ন থাকে। আর এই দেহ-মন ও মেজাজকে শান্ত করার বিভিন্ন মাধ্যমও রয়েছে। তবে দেহ-মনকে শান্ত করার বিশ্বস্ত প্রথম জায়গা বা মাধ্যম হলো মায়ের আঁচল। এরপরই প্রকৃতি ও লেখালেখি। তাই মাঝে মধ্যে যখন বিষণ্ণতা, ভালো না লাগা ও একাকিত্বটা এসে জেঁকে বসে মনের আসনজুড়ে, তখন কোনো ধরনের সময়ক্ষেপণ না করেই লেখালেখি ও আঁকাআঁকি করতে বসে যাই? প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে ও নদীর কূলে ছুটে যাই। আর লেখালেখি ও আঁকাআঁকির মাধ্যমে নীল মনে রঙ ছড়াই অথবা প্রকৃতি ও নদীর সাথে আলাপচারিতায় লিপ্ত হয়ে যাই। তাদের সাথে মনের সব বিষণ্নতা ও কষ্টগুলো শেয়ার করি। লালিত স্বপ্নগুলোকে নতুন করে নতুনভাবে সাজাই? আলাপচারিতার মধ্যে সবুজ দুর্বাঘাসের ওপর বসে সমস্ত দুশ্চিন্তা-ভাবনাকে ঝেড়ে ফেলে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্তির শ্বাস গ্রহণ করি। তখন ঘাসেরাও আপন ভেবে বুকে স্থান দেয়। নদীর বহমান নীরবতাও একটু করে সঙ্গ দেয়। বুঝতে পারে আমি এক অশান্ত ও বিষণ্ণতায় ঘেরা মানুষ। আসি তার কাছে বসে শান্ত হতে ও হৃদয়ের প্রশান্তি ফিরে পেতে। বসে বসে তখন পাখিদের ওড়াউড়ি দেখি। যখন তারা দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায় আপন নীড়ে। কিছুক্ষণ পাখিদের নিয়েও মগ্ন থাকি। আর ভাবতে থাকি! আহ কী স্বাধীনভাবে মুক্ত আকাশে উড়ছে তারা। চিন্তা, পেরেশানি, মন খারাপ, কোনো কিছুরই লেশমাত্র নেই তাদের কারো মাঝে। তখন পাখিদের দেখে আমার মনে বেশ হিংসা হয়। মনে মনে বলি! যদি আমি পাখির মতো হতে পারতাম! তাহলে সারাদিন নীলাভ্র ওই নীল আকাশের নিচে মুক্তমনে ওড়াউড়ি করতাম। দেশ থেকে দেশান্তরে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াতাম। থাকত না কোনো বাধা। থাকত না কোনো সীমাবদ্ধতা। থাকত না কোনো পিছুটান। হারিয়ে যেতাম স্বপ্নপুরীর দেশে। উপভোগ করতাম নতুনত্বের বহু স্বাদ। আহ কী মজাই না পেতাম! এসব কিছু নিয়ে ভাবনার রঙিন রাজ্যে হাবুডুবু খেতে থাকি। কিছুক্ষণ পর ভাবনার রাজ্য থেকে ফিরে বহমান নদীর দিকে তাকিয়ে থাকি অপলক দৃষ্টিতে। মৃদুমন্দ হাওয়া বইতে থাকে সময়টাতে। তখন মৃদু হাওয়ারা জলকে আলতো করে প্রীতির ছোঁয়া দিয়ে যায়। আর পানিও ভালোবাসার সে ছোঁয়া পেয়ে আনন্দে ঢেউ খেলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কি উপভোগ্যময় সে সময়টা! তা একমাত্র প্রকৃতি প্রেমিরাই উপভোগ করতে পারে, জানে। আর তখন শীতল হাওয়ারা আমাকেও ছুঁতে ভুল করে না। আলতো করে ছুঁয়ে দেয় দেহ-মন। তখন ভারাক্রান্ত, বিষণ্ণ হৃদয়েও আনন্দের হিল্লোল ওঠে। সব ধরনের ক্লান্তি দূর হয়ে প্রফুল্লতা এসে জায়গা করে নেয় এই চিত্তে। সে মুহূর্তের বর্ণনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অতএব, আমাদের উচিত ব্যস্ততম জীবন থেকে মাঝে মধ্যে একটু অবকাশ গ্রহণ করা। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনার এই জীবনে কিছুটা সময় উপভোগ্যময় করা। ভাবনাদের সাথে কিছুটা আলাপচারিতায় নিজেকে সঙ্গী করা। হোক সে ভাবনাগুলো ছোঁয়া যায় না, স্পর্শ করা যায় না। তবে অশান্ত ও বিষণ্ন হৃদয়ে কিছুটা প্রশান্তি ফিরে পাওয়া যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement